নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ অর্থনীতির কনক্রিট খুঁটি হিসাবে ভূমিকা পালন করছে পোশাক শিল্প। আর এই শিল্পের প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে পোশাক শ্রমিক। যাদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে নানা ধরনের আইন প্রনয়ন করা হয়েছে। আর এই আইনের ফাঁক ফোঁকর কাজে লাগিয়ে ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে আখের গোছাতে মরিয়া কিছু অসাধু শ্রমিক নেতা। সম্প্রতি আশুলিয়ার রবিউল হত্যাকান্ড নিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে বিদেশি অনুদানের ফাঁদ পেতে বসেছে একটি শ্রমিক সংগঠন।
গত ৩০ জুলাই রবিউল ইসলাম (৩০) নামের এক যুবককে পিটিয়ে জীবিত অবস্থায় বস্তাবন্দি করে ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া এলাকার একটি পুকুর পাড়ে প্রাইভেটকার থেকে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা মৃতপ্রায় রবিউলকে উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় রবিউলের বোন ঝিলিক বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় ঘটনার দিনই এজাহারভুক্ত ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
তবে এই রবিউলকে অ্যাপারেলস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানার শ্রমিক আখ্যা দিয়ে মালিকপক্ষের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি করে ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন নামের একটি শ্রমিক সংগঠন। যদিও রবিউল ওই কারখানার কোনদিনও শ্রমিক ছিলেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রবিউল হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে আইবিসি’র ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাব ও আশুলিয়ায় বেশ কিছু কর্মসূচী পালন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম। যেখানে তারা রবিউলকে তাদের সংগঠনের নেতা ও অ্যাপারেলস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানার প্রিন্টিং সেকশনের সুপারভাইজার হিসাবে দেখিয়েছেন। কিন্তু অ্যাপারেলস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানায় গিয়ে আশ্চার্য তথ্য পাওয়া যায়। এই কারখানায় কোন দিন চাকরিই করেননি রবিউল। কিন্তু রবিউলের আইডি কার্ড বলছে এই কারখানার সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন তিনি।
এদিকে রবিউলের স্থানে কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন জীবন সদ্দার নামের এক ব্যক্তি। তবে জীবনের আইডি কার্ডে ইংরেজীতে জীবনের স্বাক্ষর ও চাকরিতে যোগদানের তারিখ হুবহু রবিউলের আইডি কার্ডের সাথে মিলে যায়। এতে করে কারখানা কতৃপক্ষ বুঝতে পারেন তাদের অন্য এক কর্মীর আইডিকার্ডে রবিউলের ছবি ও নাম বসিয়ে তৈরী করা হয়েছে ভুয়া একটি আইডি কার্ড। আইডি কার্ড এডিট করার সময় তারা জীবনের স্বাক্ষর ও যোগদানের তারিখ পরিবর্তন করতে ভুলে যায়।
এ ব্যাপারে শ্রম অধিদপ্তরে কারখানা কতৃপক্ষের দেওয়া অভিযোগের একটি কপি এসেছে গণমাধ্যমের হাতে। চিঠিতে বলা হয়, রবিউলের বিষয়টি কলকারখানা অধিদপ্তরের শ্রমপরিদর্শক আনিস ফেরদৌসের মাধ্যমে জানতে পারেন কতৃপক্ষ।
তিনি জানান অ্যাপারেলস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানার প্রিন্টিং সেকশনের শ্রমিক হত্যার শিকার হয়েছেন। কিন্তু কারখানায় কোন শ্রমিকই অনুপস্থিত ছিল না। পরে কাগজপত্র ঘেটে দেখা যায় রবিউল নামের কোন সুপারভাইজার কারখানায় নেই এমনকি কোন দিন ছিল না। পরে রবিউলের আইডি কার্ডটি কতৃপক্ষ হাতে পেলে দেখেন কার্ডে নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ২০৬। কিন্তু ২০৬ নম্বরের কার্ডধারী খুকি নামের এক নারী কারখানায় ক্লিনার পদে কর্মরত ছিলেন। যিনি গত বছরের ১৫ অক্টোবর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। পরে এব্যাপারে শ্রম অধিদপ্তরে ঘটনার বিবরণসহ সংগঠনের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
কারখানার অ্যাডমিন ম্যানেজার নাজমুল হোসেন বলেন, এব্যাপারে ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন নামের একটি সংগঠন নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক বিদেশী সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের (সিডব্লিউএস) মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম জড়িয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও বিজিএমইএ বরাবর হত্যা বন্ধ চেয়ে চিঠি পাঠান। সংগঠনটি বিদেশি অনুদানের জন্য আমাদের কারখানাকে জড়িয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমুলক তথ্য ছড়িয়ে আমাদের কারখানা তথা শিল্প খাতের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। তাদের শাস্তি আওতায় আনা উচিত। এব্যাপারে আশুলিয়া থানায় সংগঠনটির বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।
ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ইন্ডাস্ট্রিওল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিন ও আইবিসি’র সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের কাউকেই পাওয়া যায় নি।
তবে ইন্ডাস্ট্রিওল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউনাইটেড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, আইবিসির ব্যানারে এধরনের কোন কর্মসূচী হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।
স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস কর্মচারী ফোডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আইবিসি’ সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আল-কামরান বলেন, যদি কারখানার ভূয়া আইডি কার্ড দেখিয়ে এমন কর্মসূচী পালন করা হয় তাহলে দেশের শিল্পের জন্য অবশ্যই হুমকি। দেশের শিল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করুক আমরাও চাই। যদি কারখানায় চাকরি না করে থাকে তাহলে অবশ্যই দায়ভার আইবিসি নেবে। তবে রবিউল কোন না কোন সময় পোশাক শ্রমিক ছিলেন। ওই কারখানায় সে চাকরি না করলে আইডি কার্ড কিভাবে আসলো, এডিট কে করলো এসব খোলাসা হওয়া দরকার।
রবিউল হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে আইবিসির ব্যানারে কর্মসূচীর আয়োজন করেছিলেন ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইবিসি’ সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম। তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
কলকারখানা অধিদপ্তরের শ্রমপরিদর্শক (সাধারন) আনিস ফেরদৌসের সাথে যোগাযোগ করে জুমবাংলা। তিনি বলেন, আমি পুরো বিষয়টি তদন্ত করেছি। ওই কারখানার জীবন সদ্দার নামের এক সুপারভাইজারের আইডিকার্ড টেম্পারিং করে রবিউলের আইডি কার্ড বানানো হয়েছে। কোন সংগঠন হয়তো ফান্ডের জন্য এমন কাজ করেছে। যাতে আমাদের দেশের শিল্পের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আমি তদন্ত করে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।