জুমবাংলা ডেস্ক : পেঁয়াজ রফতানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্কারোপের ফলে দেশের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ছিল নিত্যপণ্যটির বাজার। সরবরাহ কমার অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে শুল্কারোপের পরও ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে প্রবেশ করায় খাতুনগঞ্জে এর সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ফলে বাজারে পণ্যটির দাম বর্তমানে নিম্নমুখী। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে মানভেদে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৭ টাকা পর্যন্ত।
বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ৫৮-৬০ টাকায়। নতুন করে সরবরাহ বাড়ায় গতকাল সে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৩ টাকা দরে। দাম কমেছে দেশী পেঁয়াজেরও। মূলত দিনাজপুরের হিলি, সাতক্ষীরার ভোমরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ ট্রাকে করে প্রবেশ করায় দেশে পেঁয়াজের বাজার এখন নিম্নমুখী বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
আড়তদাররা জানান, ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজ গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল ছিল ৫২-৫৩ টাকা। ইন্দোরের পেঁয়াজ ৫৫ টাকার পরিবর্তে চলতি সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কানপুরের পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ৫৫ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা ৫০ টাকা কেজি। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নাসিকের চাহিদা বেশি থাকায় খাতুনগঞ্জে এ জাতের পেঁয়াজের আমদানি বেশি হয়। পাশাপাশি সাউথের নতুন বেলোরি জাতের পেঁয়াজও আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলোও শিগগিরই বাজারে চলে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘ভারত গত মাসের শেষের দিকে রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিলে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, যা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের শুরুতেও সে দাম অব্যাহত ছিল। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে কেজিতে অন্তত ৭ টাকা কমেছে।’
চট্টগ্রামের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে জানিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে কিংবা ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ জাতীয় পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে—এমন গুজব ছড়িয়ে দাম বাড়ানো হয়েছিল। এতে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আবারো বাজারে আসতে শুরু করায় দাম কমতে শুরু করেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় ২৯ বা ৩০ টনের প্রায় ৬০ ট্রাক, ভোমরা বন্দর দিয়ে ৪০ ট্রাক ও সোনা মসজিদ বন্দর দিয়ে প্রায় ৮০ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশী ট্রাকগুলো গড়ে ১৩-১৫ টনের হওয়ায় প্রায় সাড়ে ৩০০-র বেশি ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ বিভিন্ন পাইকারি আড়তে প্রবেশ করেছে। এ কারণেই গতকাল থেকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী।
চট্টগ্রামের কাঁচাপণ্যের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার হামিদউল্লাহ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করায় পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী। দুই-একদিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম আরো কমে আসবে। ভারতের পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্কারোপসহ নানা বাধা থাকলেও আমদানি স্বাভাবিক হয়েছে। সে কারণেই খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ গত দুই সপ্তাহের মধ্যে এখন বেশি, ফলে বাজারে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন আরো বাড়ানো গেলে পণ্যটির দাম সবসময়ই সাধারণ ক্রেতার হাতের নাগালে থাকবে।’
দম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া সরবরাহ সংকট দেখানো, ভারতের পেঁয়াজের চাহিদার সংকট তুলে ধরার কারণে একটি মুনাফালোভী শ্রেণী গুজব ছড়িয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসায় পণ্যটির দাম আবারো কমেছে। তাছাড়া এক দেশের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা কিংবা দেশে পণ্যটির আবাদ বাড়ানো এবং সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে জানান তারা।
কাশ্মীরি ডাক্তার মেয়ের সঙ্গে ফরিদগঞ্জের জাফরুল বিয়ের পিঁড়িতে
বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সর্বশেষ রবি মৌসুমে দেশে রেকর্ড ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তবে পচনশীল পণ্য হওয়ায় ও সংরক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় ভোক্তাপর্যায়ে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট ও শুকিয়ে ওজন কমে যায়। ফলে সংকট দেখা যাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে সরকার। এ সুযোগে বারবার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।