জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় গরিবের ডাক্তারখ্যাত আহমেদ মাহি বুলবুলকে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত শেষে নিজেরাই চোর চোর বলে চিৎকার করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এরপর রাস্তা পার হয়ে ডানপাশে কুকুর মারা গলিতে সাধারণের মতো মিশে যায়। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশের একাধিক সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ জব্দ করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে ঘটনার সময় সদরঘাট থেকে আসা বিহঙ্গ পরিবহনের বাসচালক আসিফের প্রত্যক্ষ বর্ণনায় ফুটে উঠেছে দন্ত চিকিৎসক বুলবুলের মৃত্যুর চিত্র। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোর সোয়া ৫টা। তখনো পুরোপুরি ভোরের আলো ফোটেনি। একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় বুলবুল মেট্রোরেলের ২৭৮ নম্বর পিলারের কাছে আসেন। এ সময় অন্ধকারের মধ্যে তিন যুবক এসে তার রিকশার সামনে দাঁড়ায়।
২৪ থেকে ২৫ বছর বয়সী দুই যুবক তার উরুতে ছুরিকাঘাত করলে এ সময় চিকিৎসক বুলবুল প্রথমে চোর চোর বলে চিৎকার করে দুই পিলারের মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তৎক্ষণাৎ তাদের সঙ্গে থাকা দুর্বৃত্তদের একজন মেট্রোরেলের সিমেন্টের দেয়াল ডিঙিয়ে বাম পাশের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। তখন অন্য দুই যুবক একইভাবে চোর চোর বলে চিৎকার করে। ডানপাশের রাস্তা পার হয়ে কুকুরমারা গলি নামে একটি গলির ভেতর দৌড়ে চলে যায়। তখন পর্যন্ত তারা চোর চোর বলে চিৎকার করে নিজেদের স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের মধ্যে একজনের হাতে বুলবুলের একটি পুরনো মুঠোফোন এবং অপরজনের হাতে একটি ধারালো ছুরি ছিল। তাদের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না।
তাদের পরনে ছিল কালো টি-শার্ট এবং শার্ট ও জিন্স প্যান্ট। এদিকে পুলিশের জব্দকৃত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূল সড়কের ডানপাশের একটি সরু গলিতে তারা প্রবেশ করে। এ সময় গলির রাস্তায় একটি হলুদ রঙের পিকআপ ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যেটা পুরোটা রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে ছিল। পিকআপ ভ্যানের দরজা খুলে তিনজন ব্যক্তি কিছু একটা নামাচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরে ভ্যানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ব্যক্তির গা ঘেঁষে পেছন থেকে দুই যুবককে আসতে দেখা গেছে। তাদের গায়ে কালো গেঞ্জি-শার্ট ও জিন্স পরা ছিল। হালকা গড়নের দুই যুবককে মাথা নিচু করে সামনের দিকে আসতে দেখা যায়। তাদের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। এ সময় তাদেরকে কিছুটা ক্লান্ত দেখা যাচ্ছিল।
এ দিকে হত্যা কা ণ্ডে র প্রত্যক্ষদর্শী এবং ডা. বুলবুলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বিহঙ্গ পরিবহনের বাসচালক আসিফের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিন-এর। এ ঘটনার পর মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
বাসচালক আসিফ বলেন, সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে মিরপুর দশ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ওই স্থানটিতে আসার সময় যাত্রী নামাচ্ছিলাম। তখন ডা. বুলবুল একটি রিকশায় করে মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিন ব্যক্তি এসে তার রিকশার সামনে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে দু’জন তার রিকশায় উঠে বসে। তখনও চারপাশ অন্ধকার। খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। এরপরে চোর বলে একটি চিৎকার শুনি।
এ সময় তিন জনের মধ্যে দু’টি ছেলে মেট্রোরেলের দেয়াল টপকে ডানপাশের রাস্তার ওপারে চলে যায়। তাদের পরনে কালো গেঞ্জি এবং কালো শার্ট ও জিন্স ছিল। এ সময় দুই যুবক চোর চোর বলে একটি সরু গলির মধ্যে প্রবেশ করে। প্রায় বিশ ফিটের মতো গিয়ে যখন দেখছে কেউ তাদের ধাওয়া করছে না তখন চুপচাপ দু’জনে পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে দুই বন্ধুর মতো হেঁটে চলে যায়। এ সময় আমার গাড়ি থেকে পাঁচ জন যাত্রী নেমে যায়। গাড়ির এক যাত্রী এবং মেট্রোরেলের এক কর্মী বলেন, ওরা চোর। ওদেরকে ধরেন। প্রথমে বুলবুল উঠে দাঁড়ায়। এরপর ২০ সেকেন্ড পর আবার পড়ে যান। তখন বুলবুল অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার উরু থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এ সময় তাকে রিকশার পা-দানিতে বসিয়ে একাই স্থানীয় আল হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন পর্যন্ত তার শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক ছিল।
এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসকদের তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য শত অনুরোধ করলেও তারা কোনো চিকিৎসা দেয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছে এটা পুলিশ কেস। ধরা যাবে না। বুলবুল তখন হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে ছিল। এ সময় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ আসে। তখন পুলিশ তাকে চিকিৎসা দিতে বললেও তারা না দিলে দুই পুলিশ সদস্যকে নিয়ে মোট তিনজন একটি সিএনজিতে করে বুলবুলকে সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেও কোনো স্ট্রেচার পাচ্ছিলাম না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটি ভাঙা স্ট্রেচারে করে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। তখন তারাও বলছিল এখানে কাজ হবে না। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। এ সময় আমি ফ্রেশ হতে বাসায় গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ ফোন দিয়ে জানায় ততক্ষণে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ডা. বুলবুলকে সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হলে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হতো বলে জানিয়েছেন এই গাড়িচালক আসিফ।
এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজসহ অনেক তথ্য পেয়েছে তদন্ত বিভাগ। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়িক, ব্যক্তিগত পূর্ব-শত্রুতাসহ অন্য বিষয়গুলোকে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মিরপুর থানায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করতে আনা হয়নি। তবে আমরা বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করছি। খুব শিগ্গিরই হয়তো আসামিদের শনাক্ত শেষে আসল রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। সূত্র : মানবজমিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।