জুমবাংলা ডেস্ক : আয়কর মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে আপিল করার জন্য ব্যাংকে ৫৪ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (১০ মার্চ) হাইকোর্টের আদেশে বিকেলে পল্লবীতে রূপালি ব্যাংক শাখায় এ অর্থ জমা দেন তার আইনজীবী বলে জানা গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. ইউনূসের গ্রামীণ কল্যাণকে ১১৯ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতেই হবে বলে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১১-১২ থেকে পরবর্তী পাঁচ অর্থবছরের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে এ আয়কর দিতে হবে।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানি থেকে আয়কর হিসেবে সরকারের দাবির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ কল্যাণের দায়ের করা সাতটি আয়কর রেফারেন্স আবেদনের শুনানি শেষে এ রায় দেন।
জানা যায়, গ্রামীণ কল্যাণের কাছে ২০১১-১২ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৫৫৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আয়কর দাবি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গ্রামীণ কল্যাণ আয়কর হিসাবে ৪৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে। তবে হাইকোর্টের রায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বাকি ১১৯ কোটি ২৯ লাখ টাকাও পরিশোধ করতে বলা হয়।
এদিকে হাইকোর্ট আয়কর রেফারেন্সের আবেদন খারিজ করেছেন। যদিও সংশ্লিষ্ট অডিট রিপোর্টসহ সমস্ত নথি আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন আপিল বিভাগে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে গ্রামীণ কল্যাণ।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫০ কোটি টাকা জমা দিয়েই আপিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের স্বাক্ষরের পর ২৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫৪ কোটি টাকা জমা দিয়ে ২০১১ থেকে ১৩ করবর্ষের আয়কর আপিল দায়ের করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে উপস্থিত হয়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শ্রম আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের অপর তিন কর্মকর্তা। সেই আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, আইন অনুযায়ী যেটা দেয়ার সেটাই ড. ইউনূসকে দিতে হবে। এখানে অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার তাহমিনা পলি জানান, ২০২০ সালের নভেম্বরে ২০১১ থেকে ২০১৩- দুই বছরের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আয়কর দাবি করে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্টকে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপর এনবিআরের কাছে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্ট অর্থ নেই বলে মওকুফ চান। ওই আবেদন এনবিআর রিজেক্ট করার পরে, তারা আয়করের টাকা মওকুফ চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাদের একটি অ্যাকাউন্টেই প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি থেকে চারশ কোটি টাকার মতো ছিল। কিন্তু অ্যাকাউন্টে অর্থ রয়েছে, এনবিআর এই অর্থ চেয়ে নোটিশ করার পরে, গ্রামীণ টেলিকম এই নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। রিটের শুনানি নিয়ে নোটিশ কেন বেআইনি হবে না এ নিয়ে রুলও জারি করেন আদালত। এরপর গত তিন বছরে বিভিন্ন আদালত ঘুরে মামলাটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আসে। সেটির শুনানি শেষে গ্রামীণ টেলিকমের রিট আবেদন খারিজ করেন আদালত। সেই সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমকে আদেশ দেন নিয়ম অনুযায়ী দাবি করা আয়করের ২৫ শতাংশ টাকা আগে জমা দিয়ে, এরপর এনবিআরেরব বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে।
গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মেরিনা সুলতানা এক মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস এবং পরিচালক আশরাফুল হাসান, নুরজাহান বেগম ও এম শাহজাহানকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাদের ৪ জনকেই ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ২৫ দিন কারাদণ্ড দেন আদালত। আর রায়ের পরই আলাদা জামিন আবেদন করলে ৪ জনকেই আপিলের শর্তে জামিন দেন আদালত। বর্তমানেও তারা জামিনে রয়েছেন।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলাটি করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এসএম আরিফুজ্জামান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।