জুমবাংলা ডেস্ক :শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জামিনের মেয়াদ আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন আদালত। একই সাথে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিলের শুনানি আগামী ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালতে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদেশের পর আদালতের বাইরে অপেক্ষামান সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংবাদিকদের তিনি বলেন, নিজের মনমতো করে কাজকর্ম করতে পারছি না।
ড. ইউনূসসহ এ মামলায় অন্য বিবাদী গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দুটি দেশের কূটনীতিকরাও শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিন বেলা ১০টা ৫৭ মিনিটে আপিল শ্রম ট্রাইব্যুনালে আসেন ড. ইউনূস।
বেলা ১১টায় আদালতের কার্ক্রম শুরু হলে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি আপিলের শুনানি মূলতবি করার আবেদনও করেন।
এরপর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ওই আবেদনের বিরোধিতা করেন।
দুই পক্ষে শুনানির পর আদালত ৪ জুলাই পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। একই সাথে ৪ জুলাই আপিলের শুনানির দিন ধার্য করে আদেশ দেন।
এরআগে গত ১৬ এপ্রিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জামিনের মেয়াদ ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন আদালত। একই সাথে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিলের শুনানি ২৩ মে নির্ধারণ করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালত।
গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আবেদন আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত। একই সাথে ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৩ মার্চ পর্যন্ত জামিন দেন আদালত। একই সাথে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের দেওয়া রায়ের কার্যকারিতাও স্থগিত করেন আদালত।
আইনজীবীরা জানান, শ্রম আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস ও জামিন চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি তুলে ধরে ড. ইউনূসসহ চারজন আপিল আবেদন করেছেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, আইনের ৩০৩(৩)(ঙ) ধারায় ৬ মাসের সাজা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ আইনের এই ধারায় ভিন্ন অপরাধের কথা বলা হয়েছে। আর এ মামলার বাদী বলেছেন, ৩০৩(৩)(ঙ) ধারা মামলার আর্জিতে উল্লেখ করেননি। আর ৩০৩(৩)(ঙ) ধারা যেখানে মামলার আর্জিতে নেই। আইনের সেই ধারায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত ১১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে দেওয়া কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার স্বাক্ষরের পর ৮৪ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়।
গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর ড. ইউনূসসহ অন্য তিনজনের পক্ষে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে ৫ হাজার টাকা বন্ডে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনকে এক মাসের জন্য জামিন দেন।
রায়ে বলা হয়- আসামিরা শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ এর বিধান লঙ্ঘন করে আইনের ৩০৩(৩)(ঙ) ও ৩০৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তা প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ অবস্থায় আসামি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস, চেয়ারম্যান, আশরাফুল হাসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নুরজাহান বেগম, পরিচালক, মো. শাহজাহান, পরিচালক গ্রামীণ টেলিকম এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ ও বিধি ১০৭ লঙ্ঘনের জন্য ৩০৩(৩) (ঙ) ও ৩০৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ওই আইনের ৩০৩ (৩) (ঙ) ধারার অপরাধে ৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১০ দশ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০৭ ধারার অপরাধে ২৫,০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে অতিরিক্ত ১৫ (পনেরো) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।