জুমবাংলা ডেস্ক: লাভের আশায় আমবাগান করেছিলেন আসির উদ্দীন। তাতে তেমন লাভবান হতে পারেননি।এরপর শুরু করলেন ড্রাগন চাষ। আর তাতেই বাজিমাত। চাষ শুরুর আগে ফলটির বিষয়ে সার্বিক পরামর্শের জন্য গিয়েছিলেন কৃষি কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু পাননি তেমন পরামর্শ। হতাশ হয়ে ফিরতে হয় কৃষি অফিস থেকে। তবুও নিজের ইচ্ছায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন ড্রাগন চাষ। চাষের ২৩ মাসেই পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে প্রতিবেদক আমানুল্লাহ আমান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
আসির উদ্দীনের বাসা রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাটুপাড়া গ্রামে। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার রাজশাহী অঞ্চলের সমন্বয়কারী হিসেবে কর্মরত। বৃদ্ধ পিতা ওমর মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়েই চাষ করছেন ড্রাগন। উপজেলায় নতুন ফলের চাষ দেখতে প্রতিদিনই তার জমিতে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার শত শত মানুষ।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের অক্টোবরে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মৌগাছি বাজারের সামনের সোয়া বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন আসির উদ্দীন। জমি নিজের হলেও গাছ কেনা, রোপন, পরিচর্যা, রোগ বালাই দমন এবং দেখাশোনায় নিয়োজিত শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিতেই খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। নিজের সংস্থা থেকে আড়াই লাখ এবং বোনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নিয়ে শুরু করেন এ ফলের চাষ। একই জমিতে ড্রাগন গাছের ফাঁকে ফাঁকে প্রায় দেড়শ আম গাছ লাগিয়েছেন তিনি। এছাড়া লেবু গাছও রয়েছে জমিটিতে। প্রায় ৩০ বছর মেয়াদী এ ড্রাগন ফলের দুই বছরেই এসেছে দৃশ্যমান লাভ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৌগাছি বাজার সংলগ্ন জমিটির পাশে বাঁশের তৈরি উঁচু মাচানে বসে ড্রাগন গাছ পাহারা দিচ্ছেন ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ। এ সময় অনেকেই দেখতে আসেন এ ফল। জমি থেকেই ছিড়ে খেতে থাকেন কেউ কেউ। কাটাযুক্ত গাছে লালচে রঙের ফল দেখে বিস্মিত তারা। কথা বলে জানা যায়, পাহারাদার ষাটোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধই আসির উদ্দীনের বাবা ওমর মণ্ডল।
তিনি জানান, তার ছেলে লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরিতে না ঢুকে একটি সংস্থায় কাজ শুরু করেন। তবে ছাত্রজীবন থেকেই কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে শুরু করেন ড্রাগন চাষ। তবে ছেলে সংস্থার কাজে বিভিন্ন জায়গায় ব্যস্ত থাকায় তিনিই দেখাশোনা করেন গাছগুলো। অনেক সময় মুঠোফোনে পরামর্শ দেন আসির। আর ৪-৫ জন শ্রমিক সার্বক্ষণিক কাজ করেন জমিটিতে।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, মোহনুপরে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় পান। তবে ৫ বছর আগে ড্রাগন চাষে কারো আগ্রহ না থাকলেও বর্তমানে ৮-১০ জনের প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে এ ফল। অনেকেই ড্রাগনের বিষয়ে পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করছেন। জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, রাজশাহীতে মোট ৪৩টি ফল চাষের উপযোগী পরিবেশ থাকলেও বর্তমানে চাষ হচ্ছে ৪০ রকমের ফল। সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় আম। জেলায় আনারস, বিলাতিগাব ও কাজুবাদাম এখনো উৎপাদন হয়নি। সবশেষ যুক্ত হয়েছে ড্রাগন ফল। আর স্টবেরি ফল চাষ হচ্ছে স্বল্প পরিসরে।
এ বিষয়ে আসির উদ্দীন বলেন, দুই বছর না হতেই মাত্র ৫ চালান ড্রাগন বিক্রি করেই অর্ধেক টাকা উঠে গেছে। প্রতিমণ ড্রাগন বিক্রি করছেন প্রায় ১৬ হাজার টাকায়। এ মৌসুমেই উঠে আসবে খরচের বাকি টাকা। এরপর থেকে শুরু হবে লাভ।
তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী এ ফলের সন্ধান পাই নাটোরের একটি হর্টিকালচারে গিয়ে। আম গাছ কিনতে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তা ড্রাগনের বিষয়ে অবগত করেন। ঝুঁকি মনে হলেও কিনে এনে শুরু করি ড্রাগন চাষ। পরামর্শ নিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে গিয়ে সেরকম কোনো সহযোগীতা পাইনি।
আসির জানান, ৩-৪টি ড্রাগন ফলে এককেজি ওজন হয়। আর প্রতিকেজির পাইকারী দাম ৩০০ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। স্বাদও খুব ভাল হওয়ায় জমি থেকেই অনেকেই কিনে খাচ্ছেন। আর ফল পরিপক্ক হলে পেড়ে শহরে পাঠিয়ে দেন বিক্রির জন্য। তার বাবা জমির সামনে মহাসড়কের পাশে বসে খুচরা বিক্রি করেন অনেক সময়।
আসিরের ভাষ্য, রাজশাহী কলেজ থেকে ভূগোলে অনার্স ও মাষ্টার্স শেষ করেছেন তিনি। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার মাষ্টার্স করেন। ফলাফল অল ফার্স্ট ক্লাস থাকলেও একবারো দেননি বিসিএস পরীক্ষা। অন্যের অধীনে কাজ না করে উদ্যোক্তা হয়ে কিছু করার আশায় ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তার জমিতে কাজ করছে সংসার চলছে কয়েকটি পরিবারের। এছাড়া তার পরামর্শে এক কলেজ শিক্ষকও চাকরীর পাশাপাশি ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। সামনে আরো বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে তার।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. রহিমা খাতুন বলেন, মোহনপুরে ড্রাগন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। চাকরীর পাশাপাশিও চাষ করছেন এ ফল। ড্রাগন চাষের বেশকিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। অধিক লাভবানের জন্য জমিতে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। সেজন্য অনেকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে ফল চাষের ওপর। এছাড়া ফলটি সুস্বাদু হওয়ায় চাষের চাহিদা বাড়ছে।
এই বিশেষ কারণেই ২৮০ টি ডিম পাড়া এই পাখিকে পালনে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।