জুমবাংলা ডেস্ক : বরিশাল নগরীতে ইচ্ছেমতো দামে ডাব বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। কোনও কোনও বিক্রেতা এক জোড়া ডাব ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।
তাদের দাবি, মৌসুম না হওয়ায় এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের কারণে চাহিদা বেশি থাকায় ডাবের দাম বেশি। সেই সঙ্গে বেশি দামে কেনায় চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
একাধিক বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন ডাব সংগ্রহ করতে যানবাহন খরচ থেকে শুরু করে শ্রমিক মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। ফলে বাজারে আনতে খরচ বাড়ছে। সবমিলিয়ে তাদের লাভ সীমিত।
এরই মধ্যে রবিবার (২০ আগস্ট) নগরীতে অভিযান চালিয়ে ১২০-১২৫ টাকায় ডাবের পিস বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এর ব্যত্যয় ঘটলে জরিমানা করা হবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবু বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
বরিশাল জিলা স্কুলের সামনের ডাব বিক্রেতা মো. দুলাল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডাব বিক্রি করি। তবে এবারের মতো ডাবের দাম আর দেখিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ডাব সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য দুই-তিন জন দিনমজুর থাকেন আমার সঙ্গে। তাদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ডাব থাকলে সেই গাছের মালিকের সঙ্গে দরদাম করে আমার খরচে পাড়তে হয়। ছোট থেকে বড় আকারের ডাব একই দামে কিনতে হয়। চলতি মৌসুমে ডাবের দাম বেশি নিচ্ছেন গাছের মালিকরা। কারণ বিভিন্ন গ্রামের গাছে ডাব কম ধরেছে এবার।
তিনি বলেন, প্রতিদিন সাত থেকে ১০ কিলোমিটার হেঁটে ডাব সংগ্রহ করতে হয়। যে এলাকায় যাচ্ছি, সেখানে যাওয়া-আসার খরচ, শ্রমিক খরচ এর মধ্যেই ফেলতে হয়। তাতে একটি ছোট ডাবের দাম পড়ছে ১২০ টাকা। এবার উৎপাদনও কম। যে গাছে বছরে শতাধিক ফলন হতো। সেখানে ৩০-৪০টি পাওয়া যায়। অনেক সময় বেশিরভাগ গাছে ফলন আসে না। তারপরও মানুষের কথা চিন্তা করে এবং রোগীদের সেবা দেওয়ার উদ্দেশে আনি। ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে পিস বিক্রি করি। তবে বড় সাইজেরগুলো ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি।
জর্ডান রোডের পাশের ডাব বিক্রেতা মো. সোহাগ বলেন, যারা বিভিন্ন স্থান থেকে ডাব আনেন, তাদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। আমার পক্ষে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ডাব কেনা সম্ভব হয় না। কয়েক মাস আগেও শ হিসেবে কিনতে পারতাম। এখন পিস হিসেবে কিনতে হয়। সর্বনিম্ন এক পিস ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এর মধ্যে ছোট থাকে বেশিরভাগ। এ জন্য ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি করি। তবে বড় সাইজেরগুলো ২০০ টাকায় বিক্রি করি।
রবিবার দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেট এসে কত টাকা করে বিক্রি করি জানতে চেয়েছেন উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, একই কথা বলেছি। এরপরও ম্যাজিস্ট্রেট স্যার ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রির আদেশ দিয়েছেন। এর বেশি বিক্রি করলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এই নির্দেশনামতো বিক্রি করলে লাভ থাকে না।
ডাব বিক্রি করতে গিয়ে একাধিকবার ক্রেতার হাতে মারধরের শিকার হয়েছি জানিয়ে সোহাগ বলেন, এবার দাম নিয়ে একাধিক ক্রেতার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। এর জের ধরে দুই জন আমাকে মারধরও করেছেন। তারা কোনোভাবেই বুঝতে চান না, ডাবের দাম কেন ২০০ টাকা। যে ডাব ৪০-৫০ টাকায় কিনতাম, এখন তা কিনছি ১০০-১২০ টাকা। আমাদের কেনা বেশি দামে, এ জন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
নগরীর ডাব ব্যবসায়ী রুস্তুম আলী বলেন, আগে যে ডাবের শ ছয় হাজার টাকায় কিনতাম, তা এখন কিনতে হয় ১১-১২ হাজার টাকায়। গাছের ছোট-বড় সব একই দামে কিনতে হচ্ছে। শহরে আসার পর যানবাহন ও শ্রমিক খরচসহ দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে হয়। অস্বাভাবিক দাম হওয়ায় ডাব বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। এখন ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।
শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ডাব কিনতে আসা মামুন হোসেন বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ সাইজ অনুযায়ী ডাব বিক্রি শুরু হয়েছে। ১৩০ টাকার নিচে কোনও ডাব নেই। বড়গুলো ২০০-২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের বেঁধে দেওয়া দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। ১০ টাকা কম বললেও বিক্রেতারা বিক্রি করছেন না। ডেঙ্গু রোগীর কারণে অস্বাভাবিকভাবে ডাবের দাম বেড়ে গেছে।
বরিশাল বিভাগীয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, রবিবার নগরীতে অভিযান চালিয়ে ডাব বিক্রেতাদের সতর্ক করে দিয়েছি। ১২০-১২৫ টাকার মধ্যে বিক্রির জন্য বলা হয়েছে। এরপরও তারা অতিরিক্ত দামে ডাব বিক্রি করলে এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।