জুমবাংলা ডেস্ক : বর্ষার সময় সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় জেলেদের প্রধান আয়ের উৎস ছিল মাছ ধরা। কিন্তু হাওরে মাছ কমে যাওয়ায় এখন তাদের অনেক হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছেন। হাওরঘেঁষা পালিত গড়ে উঠেছে ছোট-বড় হাঁসের খামার। কেউ কেউ বাড়িতেই হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটান। সেই বাচ্চা বিক্রি করেন বিভিন্ন স্থানে। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকার নারী-পুরুষের। দিনে দিনে বাড়ছে এ ধরনের খামারের সংখ্যা। সাধারণত হাওর এলাকায় হাঁস পালনের খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে। এছাড়া স্থানীয় বাজারসহ অন্যান্য উপজেলায় হাঁস ও ডিমের দাম বেশি হওয়ায় অনেক ঝুঁকছেন হাঁসের খামারের দিকে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরসহ ছোট-বড় প্রতিটি হাওর ও খাল-ডোবায় হাঁসের খামার রয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি সংলগ্ন খালের ওপরও হাঁসের খামার করছেন খামারিরা। হাঁসের খামার করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। খামারের হাঁস মূলত হাওরের জলজ কীট-পতঙ্গ, ঘাস, শামুক ও ছোট মাছসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য খায়। আর বর্ষাকালে হাওরের পানিতে এসব খাদ্য বেশি পাওয়া যায়। কয়েক জন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাঁস পালন লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এ পেশায় আসছেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব পাগলা, পশ্চিম পাগলা, পূর্ব বীরগাঁও, পশ্চিম বীরগাঁও, দরগাপাশা, জয়কলস, পাথারিয়া ও শিমুলবাকসহ আটটি ইউনিয়নে হাঁসের খামার আছে প্রায় ৪০০টি। এসব খামারে প্রায় ২ লাখ হাঁস রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ডিম দেয় এসব হাঁস। এতে মোটামুটি ডিমের চাহিদা পূরণ হয় এ উপজেলার মানুষের।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের নবিনগর গ্রামের খামারি জাবেদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এবার ৩০০টি ডিম দেওয়া হাঁস পালন করছি। এখন প্রতিদিন ১০০ হাঁস ডিম দিচ্ছে। কিছুদিন পর ডিম দেওয়ার সংখ্যা আরও বাড়বে। এখন সপ্তাহে ৮ হাজার টাকার বেশি ডিম বিক্রি করছি। পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের খুদিরাই গ্রামের তমিজুল ইসলাম বলেন, ৫০০টি ডিম দেওয়া হাঁস কিনেছি। এখন প্রায় অর্ধেকের মতো হাঁস ডিম দিচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তেমন সহযোগিতা পাচ্ছি না। হাঁসের রোগ হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কম দামে ভ্যাকসিন পাই না। পাশাপাশি হাঁস পালনে কোনো পরামর্শও তাদের থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও ভালো করতে পারতাম। একই গ্রামের আবু তৈয়ব বলেন, ১ হাজার ৫০০ হাঁস কিনেছি। হাঁস ডিমও দিচ্ছে। সামনের মাসে ডিম আরও দেবে। এ ধরনের হাঁস পাঁচ মাস লালনপালন করে বিক্রি করা যায়। এ মৌসুমে খরচ কম হয় হাঁস লালনপালনে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুবায়ের হোসেন বলেন, হাওর এলাকায় হাঁসের খামার আশীর্বাদ হতে পারে। সম্প্রতি জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে—প্রতিটি উপজেলায় একটি হাওরকে শুধু হাঁস পালনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। আমরা শান্তিগঞ্জে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কোন হাওরে হাঁস পালন করতে উন্মুক্ত করা হবে সেটা কিছুদিনের মধ্যে সবাইকে জানাব। এটা বাস্তবায়নে কাজ করছি। তবে এ উপজেলায় হাঁস পালনে খামারিদের সচেতনতা কম। তাদেরকে আমরা সচেতন করতে কাজ করছি। শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস খামারিদের কম মূল্যে ভ্যাকসিন সুবিধা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় এক জনের সাফল্যে অন্যরা এগিয়ে আসছেন হাঁসের খামার স্থাপনে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে হাঁস ও ডিম বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। হাসের খামারি আব্দুর রহিম জানান, হাঁস পালনে অল্প খরচে অনেক লাভ। পুঁজি বেশি খাটালে লাভের পরিমাণও বেশি হয়। তিনি আক্ষেপ করে জানান, তার পুঁজি কম থাকায় তিনি বড় করে খামার করতে পারছেন না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘হাঁসের খামারিদের আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ফলে এখানে হাঁস পালন ও খামারিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।