মঈন উদ্দিন সরকার সুমন : কুয়েতি মুদ্রা দিনারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়া গেছে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর)। এক কুয়েতি দিনারে মিলেছে ৩৭৬ টাকার মতো। সম্প্রতি দিনারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ হলেও কুয়েত থেকে রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা পড়েছে।
এর পেছনে হেতু খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু কারণ পাওয়া গেছে। যেমন কুয়েতে বর্তমানে অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মহীন। আবার অনেকের আগের মতো বাড়তি আয়ের উৎস নেই। এছাড়া আবাসন খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। যা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেক প্রবাসীর।
সম্প্রতি কুয়েতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্কুল ও কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিক সরবরাহের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বর্তমানে কর্মহীন।
অনেকে নতুন কাজের খোঁজে নতুন কোম্পানিতে আকামা স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। এতে খরচ হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। অনেকে এই খরচ বহন করতে না পেরে দেশে চলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে দেশটিতে অভিবাসী আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ধড়পাকড় চলছে।
অনেক প্রবাসীর আগের মত বাড়তি আয়ের উৎস নেই। কোনো পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। আবার দৈনন্দিন খরচও বেড়ে গেছে।
অনেকে বিভিন্ন কাজে দক্ষ হয়েও দেশটির আখুদ আকামা ক্যাটাগরির কারণে উচ্চ বেতনে কাজ পেয়েও আকামা স্থানান্ত করতে পারছেন না। এর ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। আর এসব কারণ রেমিটেন্স প্রবাহে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
যেমনটা বলছেন কেবি.ই এক্সচেঞ্জ, কুয়েতের ব্যবস্থাপক মোঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, তাদের অনেক নিয়মিত কাস্টমারের অবস্থাই এখন বেশ শোচনীয়।
প্রবাসীদের কম আয়ের সঙ্গে আরও একটি কারণের কথা জানালেন আবুল কালাম আজাদ। আর সেটা হলো হুন্ডি। যাদের আয় ভাল, তারা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন, কিন্তু হুন্ডির মাধ্যমে।
রেমিটেন্স বাড়াতে এই হুন্ডি বন্ধের ওপর জোর দেন এই এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধি করতে হলে হুন্ডি বন্ধ করা জরুরি। শুধু বিদেশ থেকে নয় দেশ থেকেও বিদেশে হুন্ডি বন্ধ করার পাশাপাশি ভিসা কেনাবেচার দিকেও নজর দেয়ার আহবান জানান তিনি।
ভিসার ক্রয়মূল্য পরিশোধ করা হয় রেমিটেন্সের অর্থ দিয়ে। এক্ষেত্রে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা মধ্যস্থতা করে। ফলে প্রবাসীদের রেমিটেন্স দেশে যাচ্ছে না।
অনেকে বলছেন, হুন্ডি, বিকাশ, নগদ খেয়ে ফেলছে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। রেমিটেন্স চলে যাচ্ছে অবৈধ চক্রের কবলে। ফলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে।
জাকির হোসেন নামে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, আগে কুয়েতে যা আয় হতো সবটাই দেশে বিনিয়োগ করতেন তিনি। জায়গা-জমি তথা ভূসম্পত্তি, বাড়ি-গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু এখন আর আগের মতো দেশে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না তিনি। হতাশা মেশানো কণ্ঠে জাকির হোসেন বলেন, দেশে কোনো ব্যবসা চালু করতে গেলেই নানা ঝামেলায় পড়তে হয়।
কুয়েতে বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সকল তফসিলি ব্যাংককে প্রবাসীদের রেমিটেন্স সংগ্রহে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করেছেন ১০৯.৫০ টাকা দরে। অথচ খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হয় ১২০ টাকার ওপর।
তাদের মতে, ডলারের মূল্য নির্ধারণে প্রবাসীদের প্রতি বৈষম্য করায় সঙ্গত কারণেই রেমিটেন্স চলে যাচ্ছে অবৈধ হুন্ডি চক্রের কবলে। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত টাকার অব মূল্যায়নের ফলে প্রবাসীরা দেশের ব্যাংকের হিসাবে রেমিটেন্স জমা রাখাকে অনেকে অলাভজনক মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কয়েক বছর আগেও রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় কুয়েতও ছিল। এই ধারা অব্যাহত রাখতে কুয়েতে অবস্থিত বিভিন্ন কাজে দক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাজে লাগানো ও আবাসন খরচ কমিয়ে আনাকে জরুরি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।