বিনোদন ডেস্ক : নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেছে কলকাতার নায়ক দেব এর প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘কমান্ডো’। দেব চার বছর আগে এই ছবির শুটিং শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খানের প্রযোজনায় বাংলাদেশী নির্মাতা শামীম আহমেদ রনী ছিলেন এটির পরিচালক।
ছবিতে দেবের বিপরীতে ছিলেন বাংলাদেশের জাহারা মিতু। ছবিটির শুটিং শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। ৩০ শতাংশ শুটিংয়ের পর ছবিটির টিজারও প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু তুমুল ধর্মীয় বিতর্কের মুখে পরেছিল ওই টিজার। এরপর সেটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ছবিটির নির্মাণ শেষ করার খবর শোনা গেলেও ছবিটি আর শুটিং ফ্লোরে যায়নি। নতুন করে খবর পাওয়া গেছে, এই ছবিটি আর নির্মাণ করা হচ্ছে না। পরিচালক শামীম আহমেদ রনী বাংলাদেশের গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ছবিটির নির্মাণের আর কোনো সম্ভাবনা আর নেই।
জানা গেছে, পরিচালক রনী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে বলেন, ২০২২ সালে দেব দাদাসহ আমরা মোটামুটি কনফার্ম হই যে, এই প্রজেক্টটি আর হবে না। মাস দুয়েক আগেও তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে, কিন্তু সেটা অন্য বিষয়ে। এখানে ‘কমান্ডো’ সম্পর্কে যা সিদ্ধান্ত ছিল, তা আগেই চূড়ান্ত হয়েছে। আমি এখন ফিল্মের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নই। তাই এই প্রজেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা আমার দিক থেকে নেই। কারণ আমি শীঘ্রি দেশে ফিরে আসতে পারছি না।
নতুন করে ‘কমান্ডো’র শুটিং নিয়ে আলাপ হচ্ছে, এমন খবরে রনী বলেন, দেব দাদা এবং প্রযোজক সেলিম ভাই এই দু’জনের কেউ যদি অফিসিয়ালি জানান তবে সেই কথাটার ভ্যালু থাকবে। এটা নিয়ে অন্য কেউ কিছু বললে সেটা হবে ভিত্তিহীন।
ঠিক কী কারণে ‘কমান্ডো’ বন্ধ হয়েছিল- এটা জানাতে গিয়ে শামীম আহমেদ রনী বলেন, ছবিটি শুরুর প্রথম কারণ কোভিড। ৩০ পারসেন্ট শুটিং হওয়ার পরে ২০২০ সালে পৃথিবীতে কোভিড নেমে আসে। এরপর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আমরা শুটিংয়ে নামি। ওই বছরের ডিসেম্বরে টিজার প্রকাশের পর একটি মহল ছবিটি বন্ধের জন্যে ঢাকা, চাঁদপুরে আন্দোলনে নামে। ২০২১ সাল জুড়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। কিন্তু আমি চুপচাপ থেকে সব সামাল দিয়েছি। লোকজন টিজার দেখে ভেবেছিল ইসলাম ধর্মের বিপক্ষের গল্প। কিন্তু আমি একজন মুসলিম হয়ে সেটা কেন করবো? শান্তির ধর্ম ইসলাম সেটাই ছিলো এই ছবি মূল উপজীব্য।
রনী আরও বলেন, ধর্মীয় বিতর্কের ঘটনাটি একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্নভাবে জীবনের হুমকি আসে। আমি, দেবদা সবাই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ি। বিশেষ করে আমি নিজে জীবনের ঝুঁকিতে পড়ি। এরপর অনেক চেষ্টা করেছিলাম কাজটি হোক। মানুষ জানুক আসলে কী বানাতে চেয়েছি। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি। ৩০ পারসেন্ট শুটিং হওয়ার পরেও আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নেই ছবিটি আর করবো না। তখন দেব দাদা’র পারিশ্রমিক বাদে অলমোস্ট ২ কোটি খরচ হয়ে যায়। এই কারণে প্রযোজক সেলিম ভাই আনলিমিটেড বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কাজটি আর হয়নি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ছবিটি শুরুর আগে বাংলাদেশের কোনো জনপ্রিয় নায়িকাকে নিজের বিপরীতে চেয়েছিলেন দেব। তাই তো তার নায়িকা জাহারা মিতু শুটিংয়ের জন্য কলকাতায় গেলেও তাকে পছন্দ না হওয়ায় দেব তার সঙ্গে কোনো দৃশ্যে অভিনয় করেননি। তখন দেবকে বেজ করে শুটিং করা হয়। অন্যদিকে, নায়িকা মিতু হোটেল রুমে বেকার বসে থাকেন। এই পর্যায়ে মিতুকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেবের সঙ্গে তখন রুক্মিণীকে নিয়ে শুটিংয়ের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করা হয়। মিতুকে এয়ারপোর্টে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। তখনই মিতু কলকাতার এক মিডিয়াম্যানের মাধ্যমে রুক্মিণীকে অনেক অনুরোধ করে দেবের নায়িকা হিসেবে মিতু টিকে যান। অতঃপর দেবের সঙ্গে মাত্র তিনটি দৃশ্যে অভিনয় করার সুযোগ পান মিতু। বাকিটা এখন ইতিহাস। যদিও এই নায়িকা বিভিন্ন সময়ে রটিয়ে বেড়িয়েছেন ছবিটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু আদতে আর হচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।