আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত আগস্টে ৫৪ বছরের ক্রিস্টিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বছর ৫৮ বছরের অ্যান্ড্রু ম্যাকেঞ্জি। নর্থ ক্যারোলিনার সমুদ্রতটে তখন মহাসাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ৩৭ বছরের বিবাহিত জীবনের পর সম্মতিবাক্যের পুনরাবৃত্তি করেন ক্রিস্টি। আরও এক বার।
এ দৃশ্যের শুরুটা একটা অঘটন থেকে। গত জুনের কথা। ত্রিশোর্ধ্ব দুই মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার বাবা দিবসের অনুষ্ঠানে এক জায়গায় হয়েছিল। ক্রিস্টির মনে আছে, বাড়ি ফিরবেন। অ্যান্ড্রুর মোটরবাইকের পেছনে বসে মুখ ঘুরিয়ে নাতি-নাতনির উদ্দেশে হাত নাড়ছেন। তার পরেই ভীষণ দুর্ঘটনা।
লালবাতি উপেক্ষা করে ছুটে আসা একটি গাড়ি সে দিন সজোরে ধাক্কা দিয়েছিল তাদের বাইকে। সে ধাক্কায় ছিটকে ৬০ ফুট দূরে গিয়ে পড়েন ভার্জিনিয়ার ওই দম্পতি। অ্যান্ড্রুর ফুসফুস ফুটো হয়ে যায়। ভাঙে শরীরের অনেক হাড়। গুরুতর জখম হন ক্রিস্টিও।
দুর্ঘটনার পরে বিমানে অ্যান্ড্রুকে আনা হয় হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পর, তিন দিন পার করে যখন তার জ্ঞান ফেরে, হন্যে হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার স্ত্রী কোথায়? আমার স্ত্রী কোথায়?’
কিন্তু নার্স ভেবে যাদের কাছে সে কথা জানতে চেয়েছিলেন, তারা দুজন আসলে উৎকণ্ঠিত অপেক্ষায় থাকা তারই দুই মেয়ে। লোরেলাই মেন্টজার আর অ্যামান্ডা ম্যাকেঞ্জি। চিনতে পারেননি। জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন সাল চলছে? অ্যান্ড্রু বলেন, ১৯৯৩!
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অ্যান্ড্রু বলেন, ‘প্রথমেই আমার যেটা মনে পড়েছিল, সেটা হলো, পাশেই ক্রিস্টি একটা হুইল চেয়ারে। আমার জন্য চিন্তা করছে। ছটফট করছে কিছু করতে চেয়ে।’ একই হাসপাতালেই ভর্তি ক্রিস্টির আরজিতে দুজনকে পাশাপাশি রাখা হয়। মেয়েদের উদ্দেশে দরজায় ঝোলে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ লেখা চিরকুট।
ক্রিস্টি তার সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কত প্রশ্ন করছিল। আমার চোখে জল চলে আসছিল বার বার। পরের ২৪টা ঘণ্টার মধ্যে ও যেন পুরো নতুন একটা মানুষ হয়ে উঠল।’ টানা ১১ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন অ্যান্ড্রু-ক্রিস্টি।
১৯৮৫ সালে বিয়ে করেছিলেন স্কুলছাত্রী ক্রিস্টি আর সদ্য সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়া অ্যান্ড্রু। তার পরে দুজনে একসঙ্গে নানা চড়াই-উৎরাই পার করেছেন। ২০১৬ সালে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন অ্যান্ড্রু। ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই মৃত্যুকে প্রায় ছুঁয়ে এসেছেন- দুর্ঘটনায় খুইয়েছেন অর্ধেক জীবনের স্মতি। তার পরে, গত আগস্টে সৈকতে ছুটি কাটাতে গিয়ে সেই স্ত্রীকে দিয়েছেন নবসংসার পাতার পুনর্প্রস্তাব। কিছু দিনের মধ্যেই জামাইদের আয়োজনে আরও এক বার বিয়েও হয় তাদের।
সদ্যবিবাহিত অ্যান্ড্রুর পুরনো স্মৃতি আজও অধরা। কিন্তু আশ্চর্য এক বিশ্বাস থেকেই যেন সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ওই দিন ‘হ্যাঁ’ বলতে কোনো সময়ই নেয়নি ক্রিস্টি। ৩৭ না কত একটা বছরের বিবাহিত জীবন যেন আমাদের, তাতেই লাভ হয়েছিল হয়তো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।