ধর্ম ডেস্ক : বিয়ে পুরুষ ও নারী জীবনের অনুষঙ্গ একটি বিষয়। আর তাদের প্রত্যেকেরই জোড়া মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা মিলিয়ে রেখেছেন। প্রয়োজন শুধু খুঁজে নেয়ার আর মহান রবের নিকট দোয়া করার।
উল্লেখ্য, বর্তমানে অনেক পরিবার সঠিক সময়ে বিয়ে দিচ্ছে না তরুণ-তরুণীদের। যার কারণে গুনাহে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই।
আর যারা পছন্দ মতো পাত্র কিংবা পাত্রী না পাওয়ায় বিয়ে করতে পারছেন না। তাদের জন্য জরুরি ও কার্যকরী কিছু আমল তুলে ধরা হলো-
> গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তিন প্রকার মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদকারী, মুকাতাব দাস, যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে। বিয়েতে আগ্রহী লোক, যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। (তিরমিজি: হাদিস, ১৬৫৫)
বিয়ে পবিত্র সম্পর্ক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। বিয়ের আগে কোনো অবৈধ সম্পর্ক গড়ে বিয়ে করা আল্লাহর পছন্দ করেন না। সে জন্য সবসময় গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, তোমাদের কাছে এমন কোনো ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সঙ্গে (তোমাদের মেয়েদের) বিয়ে দাও। তোমরা যদি তা না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে’। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৯৬৭)
গুনাহ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে সামর্থ্য অর্জনের পাশাপাশি রোজা রাখা। সাহাবি হজরত আব্দুলাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে, আর যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য না রাখে সে যেন রোজা পালন করে। কেননা রোজা তার কামভাবকে দমন করবে’। (নাসায়ি, হাদিস: ২২৪১)
> বিয়ে হওয়ার দোয়া বেশি বেশি পড়া: সহজে বিয়ে হওয়ার জন্য বেশি বেশি সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে দোয়া করতে হবে। কোরআনে বর্ণিত বিয়ের জন্য বিশেষ একটি দোয়া রয়েছে। প্রত্যেক নামাজের পর এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তে হবে। নামাজের পর ছাড়াও পড়া যাবে। যেকোনো সময়ে যেকোনো জায়গায় পড়া যাবে।
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ: ‘রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউন, ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা’।
অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের চোখ শীতলকারী হবে। আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ করুন’। (সূরা: ফুরকান, আয়াত: ৭৪)
> কোরআনুল কারিমের কিছু আয়াতের আমল: সমাজের একটি সমস্যা হলো ক্যারিয়ার গঠনের ধোঁয়াশায় পড়ে যথাসময়ে বিয়ে না করা। এভাবে বয়স বেড়ে যায়, বিবাহ করা কঠিন হয়ে যায়। তখনই হতাশা আর ধোঁয়াশায় জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। নানা অপকর্মেও জড়িয়ে পড়ে মানুষ। কোরআনুল কারিমের কয়েকটি আয়াত নিয়মিত পাঠে আল্লাহর ইচ্ছায় এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ: ‘ফাইং তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম’।
অর্থ: ‘এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগি নেই। আমি তারই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি’। (সূরা: তাওবা, আয়াত: ১২৯)
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন খুব একাকি ও বিষণ্নতা অনুভব করতেন তখন তিনি এ আয়াতটি বেশি বেশি পাঠ করতেন। দ্রুত বিয়ের ক্ষেত্রে এ আয়াতের আমলটিও করতে পারেন। সূরা কাসাসের ২৪ নম্বর আয়াত- فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
উচ্চারণ: ‘ফাসাক্বা লাহুমা ছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজজিল্লি ফাক্বালা রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিং ফাক্বির’।
এ ছাড়াও দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য প্রতিদিন ১১ বার সূরা দোহা পড়া যেতে পারে। সূরা ইয়াসিন ও আল্লাহর ৯৯ নামও খুব কার্যকরী।
পরিশেষে- অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে, সন্তান সাবালক হলে বিয়ে না করালে সে যেসব গুনাহগুলোতে জড়াবে আপনিও তার ভাগিদার হবেন। যার সামর্থ আছে তাকে অবশ্যই বিয়ে করিয়ে দেওয়া বাবা-মায়ের কর্তব্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।