বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, আমাদের জীবদ্দশায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই হয়তো দূরের কোনো গ্রহে জীবনের সন্ধান পাওয়া যাবে। বৃহস্পতি গ্রহে মিশন পরিচালনা করছেন এমন একজন বিজ্ঞানী আরও একধাপ এগিয়ে বলছেন, বরফে ঢাকা এই গ্রহে কোনো প্রাণ না থাকলে সেটাও হবে অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার। খবর বিবিসি’র।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সম্প্রতি সৌরজগতের বাইরের একটি গ্রহে জীবন থাকা সম্পর্কে ইঙ্গিত শনাক্ত করেছে। সেখানে পৃথিবীর মতো আরও অনেক গ্রহ রয়েছে বলে ধারণা করছে নাসা।
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজ পাওয়া হবে সর্বকালের সর্ববৃহৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। সেজন্য এরই মধ্যে বেশকিছু মিশন শুরু হয়েছে বা শুরু হতে যাচ্ছে।
স্কটল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ক্যাথরিন থেইম্যানস বলেন, “অসীম নক্ষত্র এবং গ্রহের একটি মহাবিশ্বে আমরা বসবাস করি। সেখানে অবশ্যই আমরাই শুধু একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী হতে পারি না। এই মহাবিশ্বে আমরাই একা আছি কিনা, সে প্রশ্নে উত্তর খোঁজার মতো প্রযুক্তি ও ক্ষমতা এখন আমাদের আছে।
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে যে টেলিস্কোপগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো এখন দূরের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করতে পারে। তাছাড়া এগুলো পৃথিবীর জীবিত প্রাণীরা উৎপাদন করে এমন রাসায়নিকের সন্ধান করতে পারে। গত মাসের শুরুর দিকে পৃথিবী থেকে ১২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কে২-১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন গ্যাস শনাক্ত করা হয়, যা পৃথিবীতে সামুদ্রিক জীব দ্বারা উৎপাদিত হয়ে থাকে।
এই গ্রহটিকে বিজ্ঞানীরা ডাকেন ‘গোল্ডিলক্স জোন’ নামে। যে নক্ষত্রকে ঘিরে ওই গ্রহ ঘুরছে, তার থেকে এমন দূরত্বে সেটি রয়েছে, যাতে সেটির ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠাণ্ডা হয় না। সেখানে তরল পানি থাকার জন্যও সঠিক তাপমাত্রা রয়েছে, যা জীবনের জন্য অপরিহার্য।
বিজ্ঞানীদের একটি বিশেষজ্ঞ দল আশা করছে, আগামী এক বছরের মধ্যেই তারা জানতে পারবেন যে, আগ্রহ উদ্দীপক এসব ইঙ্গিত সেখানে আসলেই জীবন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করছে কি না।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নিক্স মধুসূদন। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, এসব ইঙ্গিত যদি সত্যি বলে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে তা আমাদের জীবনের সন্ধান সম্পর্কিত চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবে।
তিনি আরও বলেন, এই গ্রহে যদি জীবনের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে এই মহাবিশ্বে আরও জীবন (এলিয়েন) থাকার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। হয়তো পাঁচ বছরের মধ্যে মহাবিশ্বের জীবন সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ায় একটি বড় পরিবর্তন ঘটবে।
বিবিসি বলছে, যদি কে২-১৮বি গ্রহে জীবনের খোঁজ পাওয়া না যায়, তাহলে বিজ্ঞানীদের তালিকায় আরও ১০টি গোল্ডিলক্স গ্রহ রয়েছে, যেগুলো নিয়ে তারা গবেষণা চালিয়ে যাবেন। এরপরেও আরও কিছু গ্রহের তালিকা রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে।
জানা গেছে, নাসা ২০৩০ সাল নাগাদ ‘হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি (এইচডব্লিউও) বা বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করার একটি অনুসন্ধান কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা করছে। সেখানে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল চিহ্নিত করতে ও পর্যালোচনা করা সম্ভব হবে।
এই দশকের শেষের দিকে আসছে বিশাল বড় টেলিস্কোপ (এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ- ইএলটি)। চিলির মরুভূমি থেকে সেটা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
অন্য টেলিস্কোপগুলোর তুলনায় সেটিতে আরও বড় আকারের আয়না থাকবে। ফলে সেটি গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল আরও ভালোভাবে দেখতে পারবে। টেলিস্কোপটির আয়নাগুলো এতটা অবিশ্বাস্য শক্তিশালী যে, এগুলো শত শত আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে আলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশও শনাক্ত করতে পারবে।
যখন অনেক বিজ্ঞানী দূরের গ্রহগুলোয় প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজছেন, তখন তাদের আরেকটি দল জীবন খুঁজছে আমাদের সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোয়। দাবি করা হচ্ছে, জীবনের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি জায়গা হতে পারে বৃহস্পতির বরফে ঢাকা চাঁদ ‘ইউরোপা’।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইউরোপার বরফপৃষ্ঠের নীচে একটি মহাসাগর রয়েছে, যেখান থেকে জলীয় বাষ্পের বরফ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।
নাসার ক্লিপার ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার (জুস) মিশন উভয়ই ২০৩০ এর দশকের প্রথম দিকে ইউরোপায় পৌঁছাবে। আবার শনির টাইটান উপগ্রহে অবতরণের জন্য ড্রাগনফ্লাই নামে একটি মহাকাশযান পাঠাচ্ছে নাসা।
নাসা বলছে, শনির ওই উপগ্রহে কার্বনসমৃদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি হ্রদ ও মেঘ রয়েছে, যা উপগ্রহটিকে একটি কমলা রঙের কুয়াশার আবরণ তৈরি করেছে। পানির পাশাপাশি এসব রাসায়নিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে, মঙ্গল গ্রহে জীবিত প্রাণী নেই বলেই ধরে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে জ্যোতির্জীববিদরা মনে করেন, একটা সময় এ গ্রহে ঘন বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগর ছিল, যা জীবন ধারণের উপযোগী। বর্তমানে সেখানে নাসার রোভার যান একটি গর্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করছে, যা একসময় একটি প্রাচীন নদীর ব-দ্বীপ ছিল। মঙ্গলের রোভার যানটি ২০৩০ সালের দিকে সব নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসবে ও সেগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা আরও পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
অনেক বিজ্ঞানী এই ধারণাকে সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী বলে মনে করলেও ভিনগ্রহ থেকে রেডিও সিগন্যাল আসছে কিনা, তা নিয়ে বহু বছর ধরেই গবেষণা চলছে। সার্চ ফর এক্সটা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছাড়াও আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই গবেষণা করছে।
যদিও বিশাল মহাবিশ্ব জুড়ে এলোমেলোভাবে চালানো এসব অনুসন্ধানে এখনো কোনো সম্মিলত ফলাফল আসেনি। কিন্তু অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত হলে, তারা তখন সেখানে অনুসন্ধান চালাতে পারবে।
ভারতের কোন দ্বীপে গেলে কেউ আর বেঁচে ফেরে না? জানলে অবাক হবেন
ত্রিশ বছর আগেও অন্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে, এমন কোনো গ্রহের প্রমাণ বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না। কিন্তু এখন এরকম পাঁচ হাজারেরও বেশি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা নিয়ে গবেষণা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।