জুমবাংলা ডেস্ক : নগর জীবনের ব্যস্ততার কারণে খেজুরের রস ভুলতে বসেছে মানুষ। শুধু তাই নয়, গ্রামেও এখন আর আগের মতো খেজুরের গাছ দেখা যায় না। তাই গাছ কাটা গাছিরাও তাদের পেশা বদলে ফেলেছেন। তবে এতসব হিসেব-নিকেশের বাইরে খেজুর গাছ কেটেই টাকা আয় করছেন নগরীর বয়রা আন্দিরঘাট এলাকায় গাছি সাফায়েত মিয়া।
শীতের মৌসুমে তিন মাসে খেজুর গাছ কেটে লাখ টাকা আয় করেন বলে দাবি করেন গাছি সাফায়েত মিয়া। তিনি মূলত পেশায় একজন চাষি। সেই সাথে খড়ের (ছন) ব্যবসা রয়েছে তার।
জানা গেছে, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটেন সাফায়েত মিয়া। ভোরের আলো ফোটার আগেই গাছে গাছে উঠে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন। তারপর সেগুলো আন্দিরঘাট রাস্তার মোড়ে বিক্রি করেন ও বাকি রস নিয়ে বাড়ি ফেরে। সেখানে বাড়ির নারীরা খেজুরের রস জাল দেন। খানিকক্ষণ বিশ্রামের পর দুপুরের আগে গাছ কাটতে বেড়িয়ে যান সাফায়েত মিয়া। একশ’র মতো গাছ কেটে বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যার পর।
সাফায়েত মিয়া বলেন, প্রতিদিনই রসের চাহিদা থাকে। অনেকে রসের জন্য গাছের নিচে এসে অপেক্ষায় থাকেন। লোকজনকে ঠিকমত রসও দিতে পারি না। যার কারণে গুড় বানানো কম হয়। আগে এক কেজি খেজুর গুড় দুই-আড়াই টাকায় বিক্রি হতো। এখন সেই এক কেজি গুড় ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। আগে অনেক কষ্টে দিন কাটাতাম। এখন দুই পয়সা আয়ের মুখ দেখছি।
গাছ কেটে লাখ টাকা আয়ের দাবি করে সাফায়েত মিয়া জানান, চলতি বছরে তিনি ২২০টি গাছ কাটছেন। এক পালায় (তিন দিন) ১১০টি করে গাছ কাটেন। প্রতিদিন রস বিক্রির পর যা থাকে তাই দিয়ে গুড় বানান। এক হাড়ি রস বিক্রি করেন ২৫০ টাকায়। প্রতিদিন ১৫-২০ হাড়ি রস বিক্রি করলে ৩৮০০ টাকা পাওয়া যায়। শুধুমাত্র রস বিক্রি করে মাসে তার আয় এক লাখ টাকা। এর বাইরে প্রতি কেজি ঝোল গুড় ৩০০ টাকা ও দানা গুড় ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এতে আয় আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। গাছ মালিকদের খরচ ও মাটির হাড়ি কেনা বাবদ খরচ বাদ দিয়ে মাসে এক লাখ টাকার কাছাকাছি আয় থাকে। শীত মৌসুমের তিন মাসে তার আয় হবে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, আগে শীতের মৌসুমে গ্রামে গ্রামে গাছ কাটার হিড়িক পড়তো। সব বাড়ির আঙিনায় কম বেশি রস জাল দেয়া হতো। সেই রস একটু ঘন হলে গ্রামে পিঠা,পুলি,পায়েস তৈরি করা হতো। নারকেল-খেজুর রস দিয়ে খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। এখন আর সেই দৃশ্য দেখা যায় না। বিলীন হয়ে গেছে খেজুর গাছ। কমে যাচ্ছে গাছ কাটা গাছির সংখ্যাও। চিরচেনা বাঙালি ঐতিহ্য ভুলতে থাকা ব্যস্ততম এই সময়ে সাফায়েত মিয়ার উদাহরণ হয়ে থাকবেন।
সূত্র : খবর সংযোগ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।