লাইফস্টাইল ডেস্ক : শিশুরা সহজেই রেগে যেতে পারে। এদের আবেগ ও সংবেদনশীলতা বেশি থাকে। তবে সব শিশুরা এ রকম নয়। কোনো কোনো শিশু সহজেই রেগে যায়।
তাই শিশুদের রাগের ধরন ও কারণ বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
প্রথমেই বুঝে নেওয়া দরকার, রাগ, দুঃখ, আনন্দ প্রভৃতি আবেগ খুব স্বাভাবিক বিষয়। মানুষের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে সেসব শিশুরা—বিশেষ করে যাদের মস্তিষ্কের বিকাশ পূর্ণ হয়নি—বড়দের চেয়ে তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে।
তাই তারা রাগ বা দুঃখ প্রকাশ করতে অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। শিশুদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে অনভূতি প্রকাশে সমস্যা থাকে, তাই আবেগ প্রকাশে হাতে-পা বা শরীরী ভাষার সাহয্য নেয়।
ছোট্ট শিশুরা রেগে গেলে চিৎকার করে। কখনো এমন কিছু কাজ করে যা অবাঞ্ছিত মনে হয়।
তবে এটা জেনে রাখা জরুরি—রাগ কোনো ভুল আবেগ নয়। বরং এটা স্বাভাবিক অনুভূতি। সমস্যা তখনই হয় যখন শিশু মানুষ রাগ প্রকাশের সঠিক পন্থা জানে না।
দেড়-দুই বছর বয়স থেকে শিশুরা রাগ বা অন্য আবেগ প্রকাশ করতে শুরু করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই আবেগ প্রকাশের ধরন বদলাতে পারে।
যদি মা-বাবা বা যত্নশীল কেউ দ্রুত ব্যাপারটা বুঝে নেন, তাহলে সমস্যা মোকাবেলা সহজ হয়।
মা-বাবার ভূমিকা শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে মা-বাবা সহজেই সন্তানকে সাহায্য করতে পারে।
কথা বলুন : যেসব শিশু ইতোমধ্যে কথা বলতে শিখেছে, তাদেরকে রেগে যাওয়ার পর কারণ জিজ্ঞেস করতে পারেন। এতে শিশুরা নিজেদের অনুভূতির কারণ বুঝতে শেখে।
শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান : রাগের মুহূর্তে শিশুকে শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে। চোখে চোখ রেখে নরম গলায় কথা বলুন বা পাশে বসে থাকুন। এতে শিশু বুঝতে পারবে যে, আপনি তার পাশে আছেন এবং রাগ করলেও আপনি বিরক্ত হচ্ছেন না।
স্পর্শের গুরুত্ব : শিশুর মাথায় হাত রাখা, কোলে তুলে নেওয়া—এমন কিছু আচরণে অনেক সময়ই শিশুরা শান্ত হয়। মা-বাবা বা যত্নশীলরা নিয়মিত মানবিক স্পর্শ দিয়ে শিশুকে শান্ত করতে পারেন।
পরিবেশের গুরুত্ব : বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের সঠিক পরিবেশ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি তারা ভালোবাসা, যত্ন এবং নিরাপদ পরিবেশ পায়, তাহলে তাদের আবেগ প্রকাশ তুলনামূলক কম হয়।
থেরাপিস্টের সহায়তা : রাগ কমাতে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি আছে। যেমন, সেনসরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি এবং হাইড্রোথেরাপি। এই থেরাপিগুলো শিশুদের অনুভূতি ও আচরণের উন্নতিতে সহায়তা করে। তাই প্রয়োজনে থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্বদ্যিালয়ের সেমেল ইনস্টিটিউট ফর নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান বিহেভিয়ারের একজন ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক ড. ড্যানিয়েল সিগেল। তিনি শিশু, কিশোর, এবং পারিবারিক মানসিক স্বাস্থ্য ও বিকাশে বিশেষজ্ঞ। সিগেল মূলত নিউরোসায়েন্সের ওপর কাজ করেন এবং তিনি সংবেদনশীল অভিভাবকত্বের ওপর গবেষণা এবং শিক্ষামূলক বই লেখার জন্যও পরিচিত।
তিনি বলেন, শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখানোর ক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাগ প্রশমিত করতে শিশুর পাশে থাকা, তাদের অনুভূতি বোঝা এবং শান্তভাবে সাহায্য করা খুবই জরুরি।
তিনি মনে করেন, মা-বাবার দায়িত্ব হলো সন্তানের বিকাশের পর্যায়গুলি নজরে রাখা। যদি কোনো পর্যায়ে দেরি হয়, যেমন—দেরিতে কথা বলা, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র : স্মিথসনিয়ান ম্যাগাজিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।