লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমদের মস্তিষ্ক আসলে গাণিতিক হিসাব অনুযায়ী চলে। আপনি যে অভ্যাসে তাঁকে অভ্যস্ত করবেন, সে তাতেই অভ্যস্ত হবে। এই যেমন ধরুন মাঝরাতে এটা–সেটা খাওয়া বা অনেক রাত করে খাওয়া। স্বাস্থ্যগতভাবে এমনিতেই বেশি রাত করে খাওয়া অনুচিত। অনেকেই আছেন, যাঁরা কাজের চাপে বা আলসেমির কারণে দেরি করে রাতের খাবার খান। আবার অনেক রাতের খাবার খান মধ্যরাতে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাঝরাতে খাওয়া শরীরের জন্য একদম ভালো নয়। এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা হতে পারে। এই অভ্যাস খাদ্যনালির ক্যানসারের অন্যতম কারণ। বিখ্যাত ম্যাগাজিন রিডার্স ডাইজেস্ট–এ প্রকাশিত হয়েছে এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন। এখানে বলা হয়েছে, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের প্রধান কারণ হলো ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্য, বেশি চিনি, কোমলপানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া। আর আরেকটি বড় কারণ রাতে সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া। বেশি রাতে যা–ই খান না কেন, ওজন বাড়বেই। সময়ের খাবার সময়ে খেলে যেমন ফ্যাট হয় না, তেমনি শরীরও সুস্থ থাকে। মাঝরাতে খেলে আপনার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বৃদ্ধি পায়; কারণ, এ সময় আপনার শরীর হাইবারনেশন মোডে চলে যায়। ফলে মেটাবলিজমের হার কমে যায়। সে জন্য খাবার হজম হয় না। উল্টো চর্বি জমতে থাকার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। অনেকের আবার রাতে ভরপেট খাওয়ার পরেও মাঝরাতে উঠে কিছু খেতে হয়। এদিকে অনেকেই আছেন, যারা জোর করে ডায়েট করছেন। হয়তো সারা দিন তাঁরা লোভ সংবরণ করে খান। অল্প অল্প করে খাবার খেয়ে ডিনার পর্যন্ত চালিয়ে দিলেও মাঝরাতে তাঁদের প্রচুর খিদে পায়। তখন ডায়েট ভুলে গোগ্রাসে চিপস, চানাচুর থেকে চকলেটসহ ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করেন তাঁরা।
রাত জেগে যারা মুভি, ওয়েবসিরিজ বা খেলা দেখেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা খুব বেশি হয়। অনেক ক্ষেত্রে রাতের খাবার যদি পরিমাণে কম খাওয়া হয় কিংবা কাজের শিফট যদি অসময়ে হয় বা আপনি যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন, তাহলে এরকম মাঝরাতে খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। মনে রাখবেন, কিছু খেতে ইচ্ছা করা মানেই কিন্তু ক্ষুধা লাগা না এবং আপনার পেট খালি নয়। আমাদের মস্তিষ্ক অনেক সময়ই এ ধরনের ভুল সিগন্যাল দিতে থাকে। মুখরোচক কোনো খাবারের দোকান যেমন ফুচকা, ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এমনকি টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা বিজ্ঞাপনও আপনার মস্তিষ্ককে এমন বিভ্রান্ত করতে পারে। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
কিছু খাবার আছে, এ সময় যা খেলে ক্ষুধা নিবারণ হবে আর সেই সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি আর ফ্যাট স্টোর হওয়া আশঙ্কা কমে যাবে। তেমনই কিছু খাবারের পরামর্শ রইল আজ।
১) পপকর্ন
ক্ষুধা পেলে এক দারুণ খাবার হচ্ছে পপকর্ন। পপকর্নে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। ক্যালরিও তেমন থাকে না। সেই সঙ্গে খেতেও ভালো। পপকর্ন হার্ট ভালো রাখে। অলিভ অয়েলে পপকর্ন হালকা ভেজে সামান্য লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া ছড়িয়ে দিন। প্রয়োজনে হালকা মরিচের গুঁড়াও দিতে পারেন। পেটেও ভরবে এবং ওজন বাড়ার আশঙ্কাও কমে যাবে। দিনের অন্য সময়ও খিদে পেলে খেতে পারেন পপকর্ন।
২)গাজর
মাঝরাতে হুট করে ক্ষুধা পেলে গাজর একটি দারুণ খাবার হতে পারে । গাজর সেদ্ধ করে মাখন আর গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা গাজর স্টিক আকারে কেটে নিয়ে ডিপ দিয়ে খাওয়া যায়। ক্যালরি কম, সেই সঙ্গে ত্বকের জন্য গাজর খুব দারুণ একটি সবজি।
৩) ওটস কুকিজ
যদি রাত জাগার অভ্যাস থেকেই থাকে, সে ক্ষেত্রে বাড়িতে রাখুন ওটস কিংবা শস্যদানার বা হোলগ্রেইনের তৈরি কুকিজ। রাখতে পারেন প্রোটিন লাড্ডুও। তবে এসব খাবার খুব বেশি খাবেন না, খিদে মেটাতে যতটুকু প্রয়োজন, পেট ভরে না।
৪)পিনাট বাটার
রাতে খিদে পেলে পিনাট বাটার দিয়ে স্যান্ডউইচ বানিয়ে খেতে পারেন। পিনাট বাটারে থাকে মেলাটোনিন, যা ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে থাকে কার্বোহাইড্রেট। যা শরীরকে পুষ্টিও দেয়। ব্রেডের ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন ব্রাউন ব্রেড খেতে।
৫) আপেল দিয়ে আমন্ড বাটার
একটি মাঝারি সাইজের আপেল থেকে পাওয়া যায় ৯৫ ক্যালোরি, ২৫ গ্রাম কার্ব, ৪ গ্রাম ফাইবারসহ ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও ভিটামিন কে। এ ছাড়া ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ভিটামিন বি১, বি২, বি৬, ভিটামিন এ আর ই-এর অন্যতম উৎস আপেল। আপেলে থাকা ফাইবার ও পানি অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। তাই খিদে লাগে না। ফলে ওজন কমে। ভিটামিন সি-এর সেরা উৎস বলা হয় আমন্ড আর সেই সঙ্গে এই সুপার ফুড কাজের গতিও বাড়ায়। এমনিতেই যারা সুইট টুথ, বা যাঁদের মাঝরাতে মিষ্টি খাবারের ক্রেভিং হয়, তাদের জন্য আপেলের সঙ্গে আমন্ড বাটার স্বাদ গ্রন্থির সেই আস্বাদ পূরণ করে এবং ওজনও বাড়াবে না।
৬) লো-ফ্যাটযুক্ত দুধ
মাঝরাতে হুট করে ক্ষুধা পেলে স্কিমড মিল্ক বা লো ফ্যাট দুধ পান করতে পারেন।
৭) বাদামজাতীয় খাবার
এনার্জিবার, প্রোটিনবার বা বাদাম জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। মাঝরাতে কিছু খাওয়ার ক্রেভিং হলে এতে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে না।
তবে যে খাবারের কথাই বলি না কেন, রাত জেগে খাওয়ার অভ্যাসটা পরিত্যাগ করা সবার আগে দরকার। কারণ, এটা দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাবই নিয়ে আসবে।
তথ্যসূত্র: ভেরি ওয়েল ফিট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।