জাহিদ হাসান : ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস অ্যালবোপিক্টাসসহ বিভিন্ন ধরনের মশা নির্মূলে আশা জাগাচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিকমুক্ত মশার কয়েল। কাঠ বা নারকেল ছোবড়ার গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য লবণ, সুগন্ধি ও অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্ট হিসাবে পরিচিত সোডিয়াম লোরিল সালফেট মিশিয়ে সহজেই তৈরি করা যায় পরিবেশবান্ধব এ কয়েল ও স্প্রে। বিষাক্ত রাসায়নিক ছাড়া তৈরি পণ্যটি ব্যবহার করে মশাসহ ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিধন করা যাচ্ছে। শুধু মশা নয়, মিশ্রণের উপাদানগুলোর মাত্রা পরিবর্তন করে বিষাক্ত সাপ, তেলাপোকা, ছারপোকা ও পিঁপড়ার উপদ্রব কমনো যায়। অভিনব এ পণ্যটি উদ্ভাবন করেছেন গবেষক মো. মোনজুরুল হক।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর বা সায়েন্স ল্যাবরেটরি) নতুন উদ্ভাবিত স্প্রেটিকে নিরাপদ ও বিষমুক্ত স্বীকৃতি দিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। ইতোমধ্যে পণ্য দুটির কপিরাইট (স্বত্বাধিকারী) সার্টিফিকেট পাওয়া গেছে। পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পেটেন্ট (স্বত্বাধিকার সংরক্ষণ) প্রক্রিয়াধীন আছে। গত বছর সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে আবেদন করে নমুনা জমা দেওয়া হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অনুমতি দিলে পণ্যটির কার্যকারিতা যাচাইয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দ্রুত পাইলটিং শুরুর আশ্বাস দিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও উদ্ভাবনটির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়া কীটতত্ত্ববিদরা উদ্ভাবনটিকে ইতিবাচক ও আশাবাদী মন্তব্য করেছেন।
জানতে চাইলে কয়েল ও স্প্রের উদ্ভাবক ময়মনসিংহের ত্রিশালের বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোনজুরুল হক বলেন, বাজারে প্রচলিত মশার কয়েল ও অ্যারোসলগুলো তৈরি হয় বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে। যার মধ্যে রয়েছে ‘পারমেথ্রিন, অ্যালথ্রিন, রেসমেথ্রিন, বায়ো অ্যালথ্রিন, পারলেথ্রিন, ডি পেনোথ্রিন, এস বায়েলেথ্রিন টেটরামেথ্রিন, ডি টেটরামেথ্রিন’। যেগুলোর মোড়কে ‘বিষ সাবধান!’ লেখা থাকে। এসব রাসায়নিক অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, হৃদরোগের ঝুঁকি, চোখের সমস্যা, চর্মরোগ, মাথাব্যথা, গর্ভবতী ও স্তনদানকারী মায়েদের ঝুঁকি, গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি এবং শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশে সমস্যা বাড়াতে পারে।
কিন্তু আমি কাঠের গুঁড়া, তেঁতুলের বীজের গুঁড়া, নারকেলের শেলের গুঁড়া, আঠা ইত্যাদির সঙ্গে এসএলএস/এসএলইএস এবং সুগন্ধি মিশিয়ে বিষমুক্ত মশার কয়েল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। সুগন্ধি ও এসএলএসের মিশ্রণে তৈরি এই বিষমুক্ত জেল বা স্প্রে ব্যবহার করে মশা তাড়ানো যায় নিরাপদ উপায়ে। এছাড়া তেলাপোকা, ছারপোকা ইত্যাদি মুহূর্তেই মারা যায়।
সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং) মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের আওতাভুক্ত কোনো বিষয়ে সাধারণ মানুষ সুবিধাভোগ করতে পারলে জনস্বার্থে এনওসি (অনাপত্তি সনদ) দিয়ে থাকি। এর আগে পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক সরবরাহকৃত কীটনাশকযুক্ত মশারি প্রদানের এনওসি দেওয়া হয়েছে। মশার লার্ভা নিধনে সিটি করপোরেশনে বিটিআই ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এবার বিষাক্ত রাসায়নিক মুক্ত কয়েল ও স্প্রে উদ্ভাবনের বিষয়ে বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কারা গবেষণা করছেন, কোথায় প্রমাণিত হয়েছে, ডোসিয়ার (নথিপত্র), ক্রাইটেরিয়া বা মানদণ্ড ও গুণাবলীসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তসহ অধিদপ্তরে দরখাস্ত জমা দিলে অবশ্যই সহায়তা করা হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার এই উদ্ভাবনকে ইতিবাচক ও আশাবাদী মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, মোনজুরুল হকের উদ্ভাবিত পণ্যটি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখেছি এটি মশা মারতে কার্যকরী। দেশে নতুন উদ্যোক্তাদের কেউ কিছু আবিষ্কার করলে সেটি সহজে উৎসাহিত করা যায় কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।