মালয়েশিয়া শ্রম বাজারে ফের সিন্ডিকেট করার চেষ্টায় বায়রার একাধিক নেতা

জুমবাংলা ডেস্ক : মালয়েশিয়া শ্রম বাজারে ফের সিন্ডিকেট গড়ে তোলার পায়তারা করছে বাংলাদেশে এসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) একাধিক নেতা। এদের মধ্যে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়া ও নানা সংকটের জন্য এই নেতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্যে ১০ সিন্ডিকেটের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন ফকরুল ইসলাম। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাণিজ্যের জন্য বাগিয়ে নিয়েছেন নিজের মেডিক্যাল সেন্টার ওয়েলকাম মেডিক্যাল। প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর নাম মাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এখন পরিচয় লুকিয়ে কমপক্ষে দুইটি লাইসেন্স রয়েছে ১০১ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকায়। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাতেও রয়েছে তার এজেন্সি ও ওয়েলকাম মেডিক্যাল সেন্টার।

চলতি বছরের ৩১মে শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর তিনিসহ আরো কয়েকজন মিলে আবার চেষ্টা করছেন মালয়েশিয়ায় ভিন্ন ফর্মুলায় লোক পাঠানোর শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠনে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ক্ষমতাশীল একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাধর কতিপয় নেতার সঙ্গে তাদের কয়েক জনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়। জানা যায়, একটি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে মোটা অংকের অর্থ স্পন্সর করার সূত্রে দাওয়াত পান ফখরুল ও তার অনুসারীরা। শুধু তাই নয়, দেখা করেছিলেন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। সেখানকার কর্মকর্তারা তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ায় দেশে ফিরে নিজেকে বঞ্চিত দাবী করে শুরু করেছেন নানা অপতৎপরতা।

জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী জানান, ফখরুল এখন বায়রার সভাপতি হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের অনুকম্পা পেতে সিন্ডিকেট বিরোধী কথা বলছেন। অথচ তিনি সব সময়ই সিন্ডিকেটের অংশ ছিলেন এবং নিজেও সিন্ডিকেট করেছেন।

ফখরুলের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন টকশো, সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তার বক্তব্যগুলো তার অনুসারীরা মালয়েশিয়াতে ছড়িয়ে দেয়ায় সম্ভাব্য নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশী শ্রমিক বিমুখ হচ্ছেন।

বায়রা সদস্যরা বলেন, ১০১ সিন্ডিকেট ভুক্ত তার বেনামী প্রতিষ্ঠান ত্রিবেনি ইন্টারন্যাশনাল ও সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল। যার নেপথ্য মালিক ফখরুল ইসলামের। তিনি নিজের লাইসেন্স সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যের নামে ব্যবসা করছেন। অন্য যারা ব্যবসা করেন তাদের লাইসেন্স একটা অথচ তার লাইসেন্স ২টা। তাছাড়া অন্য ব্যবসায়ীরা হয়তো মূল ১০১ এজেন্সির মধ্যে অথবা সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ছিলেন। কেউ কেউ শুধু মেডিক্যাল সেন্টারে ছিলেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি সব জায়গায় আছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, তিনি ও তার সহযোগী সিন্ডিকেটের কারণে মালশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো শুধু একটা টিকেট কেটে শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। অথচ তারা আইনের আওতায় আসছে না। মন্ত্রণালয়ের নজরে আসছে না। একদিকে তারা বলছে, ৬ লাখ টাকা করে শ্রমিক গিয়েছে আবার বলছে, তারা দেড় লাখ টাকা ১০১ রিক্রুটিং এজেন্সিভুক্তদের দিয়েছে। অনুমোদিত এজেন্সিগুলো ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এলোকেশন, জব, ডিমান্ড লেটার, সত্যায়ন, ভিসা করানো, বিটিএমইএর ক্লিয়ারেন্স, নিয়োগানুমতি ও বর্হিগমনসহ যাবতীয় আনুসাঙ্গিক কাজ সম্পাদন করেছে। আর সহযোগী এজেন্সিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার একটি টিকেট করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে নিয়েছে। ওই সব নেতাদের আগে জবাবহিতার আওতায় আনা জরুরী বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগের বিষয়ে বায়রার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম বলেন, আমি মালয়েশিয়ার একজন ব্যবসায়ী। মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানো আমার অধিকার। আমি কর্মী পাঠিয়েছি কিন্তু আমি সিন্ডিকেট তো করিনি। তিনি বলেন, সম্মানিত সদস্যদের অধিকার রক্ষায় কথা বলে যাবো। আমার কোথাও কোনো কর্মীর সমস্যা হলে আমি অবশ্যই দায়িত্ব নেবো।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২২ মাসে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গিয়েছে। এই অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের জন্য গত ৩বছরে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রচেষ্টায় নতুন করে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। তাতে দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে এবং মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতেও আমাদের শ্রমিকরা গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখতে পারবে। কিন্তু এই অসাধু চক্রের কারণে এই শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সূত্র : জনকন্ঠ