আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কী কাণ্ড দেখুন! কাঁচা ডিম পেটে যেতেই ব্যক্তির মুখ থেকে বেরিয়ে আসে জ্যান্ত মুরগির ছানা। কখনও শুনেছেন এমন ঘটনার কথা। এমনটা কিন্তু ঘটে গিয়েছে ওপর বাংলাতে। বিরাট লম্বা লোকটা। মাথায় কাঁধ ছাপানো চুল। একের পর-এক কাঁচা ডিম খেয়ে হজম করতে পারেন অনায়াসে। কিন্তু সেদিন এক অদ্ভুত ঘটনাই ঘটে তাঁর সঙ্গে। ব্যক্তির নাম বিমল রায়। তিনি যখন ডিম খাচ্ছিলেন মারামারি হচ্ছিল এলাকায়। এলাকার প্রখ্যাত দুষ্কৃতি বিমল। তাঁর ভয়ে এলাকা কাঁপে।
তাঁকেই বেধড়ক পিটুনি খেতে হয় সেদিন। পেটে ধুমাধুম ঘুসি মারা হয় বিমলের। আর তারপরই যা ঘটে, চারপাশের সকলের চক্ষু চড়ক গাছ! কাঁচা ডিম পেটে গিয়ে হজম তো হলই না, পরিবর্তে ‘অবৈজ্ঞানিক’ভাবে বেরিয়ে এল মুরগির জ্যান্ট ছানা। মিষ্টি -মিষ্টি দেখতে ছানা। একটি নয়, দুটি নয়… পরপর ১৫টা ছানা বেরতে থাকল বিমলের মুখ থেকে। মাটিতে কিলবিল করতে থাকে ছানাগুলো।
এও আবার হয় নাকি! হয়, ভারতবর্ষের সিনেমায় এরকম অনেককিছুই হয়। আকাশে গাড়ি ওড়ে, বন্দুকের গুলি খেয়েও মানুষ মারামারি করে! ফলে বুঝতেই পারছেন, এই ঘটনার সঙ্গেও বাস্তবের কোনও যোগ নেই। বিষয়টি ঘটেছে একটি বাংলা ছবির মনে রাখার মতো দৃশ্যে। নাম বললে এক্ষুনি বুঝতে পারবেন কোন ছবির কথা বলা হচ্ছে। অনেকে হয়তো বুঝেও গিয়েছেন ছবির নাম ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অনামিকা সাহার সেই বিখ্যাত ছবি। যে ছবি প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটিকে আরও মজবুত করেছিল দর্শকের নজরে। সেই ছবিতেই এই দৃশ্যটি রেখেছিলেন পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী। মাত্র কয়েক মিনিটের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন বিমল রায়। এবং তাতে অভিনয় করতে গিয়ে কতখানি বেগ পেতে হয়ছিল বিমলকে, সেটাই তিনি ব্যক্ত করেছেন TV9 বাংলা ডিজিটালের কাছে।
২০০০ সালে মুক্তি পায় ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’। ছবি মুক্তির ২৪টা বছর কেটে গিয়েছে। তাও সবকিছু ছবির মতো মনে আছে বিমলের। TV9 বাংলা ডিজিটালের ফোনটা ধরে বাইক পার্ক করেন বিমল। ব্যস্ত রাস্তার চারপাশের আওয়াজ থেকে নিরিবিলি খুঁজে বলতে শুরু করেন, “দিদি (প্রতিবেদককে ‘দিদি’ সম্বোধন করেছেন বিমল), এই সিনটার জন্য এই প্রথম কেউ আমার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলেন। আসলে আমাদের কথা তো কেউ জানতে চান না। কী আর বলি, যা অবস্থা হয়েছিল সেদিন…।” বিমলের কণ্ঠে তখন আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ছে।
জানালেন, কেবল এই দৃশ্যটি নয়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর বডি ডাবল হিসেবে অভিনয় করতে গিয়েও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। বিমল বলতে শুরু করলেন , “‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ব্লকবাস্টার হল। বড়-বড় নাম জড়িয়ে ছবির সঙ্গে। আর এই একটিমাত্র সিনের জন্যই আমি লোকের স্মৃতিতে রয়ে গেলাম। একটা সিন হলেও আমাকে লোকে ভুলতে পারেন না আজও।” সত্যিই কেউ ভুলতে পারেননি লম্বা চুলের লোকটাকে।
বর্তমানে গৌর-বিষ্ণুপ্রিয়ার পুজো করেন বিমল। একসময়কার বডি ডাবল, স্টান্ট ম্যান থেকে হয়ে গিয়েছেন স্টান্ট ডিরেক্টর। সম্প্রতি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র পরিচালিত এবং প্রসেনজিৎ-শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত’দেবী চৌধুরানী’তে স্টান্ট ডিরেক্টর হয়ে কাজ করেছেন। পুরনোদিনের কথা বলতে-বলতে বিমলের সংযোজন, “প্রসেনজিতের সঙ্গে ফাইট সিন ছিল আমার। আমার পেটে বুম্বাদাই ঘুসিটা মারছিলেন।
‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর ওই সিনটা করানোর জন্য পোল্ট্রি থেকে ৫০টা মুরগির ছানা নিয়ে আসা হয়েছিল। আমাকে বলা হয় একটি করে মুখে ঢোকাও এবং বের করো। ক্লোজ় শট নেওয়া হয়েছিল। আমি তাই করি। একটি করে ছানা মুখে ঢোকে এবং আমি বমি করি…।” কিন্তু বমি কেন? বিমল বলেন, “আর বলবেন না, মুরগি-ছানা আমার মুখে ঢুকে ভয়ে পেয়ে পটি করে দিচ্ছিল…।”
বিমল জানিয়েছিলেন, ২৪ বছর আগে এই দৃশ্যটিতে অভিনয় করার জন্য হাতে ৪৫০ টাকা পেয়েছিলেন তিনি। এরকম আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে বিমলের সঙ্গে। শুরুতেই বলা হয়েছে, চিরঞ্জিতের বডি ডাবল হয়ে অভিনয় করতে গিয়ে পিঠে চোট পেয়েছিলেন বিমল।
সেই ছবির নাম ছিল ‘জয় বিজয়’। দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চিরঞ্জিত। সেই ছবিতে স্টান্ট করতে গিয়ে ভয়নাক দুর্ঘটনা ঘটে তাঁর সঙ্গে। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৪-৫ দিন। সেই সময় তাঁর চিকিৎসার সব খরচ নিজেকেই বহন করতে হয় বিমলকে। বলেছেন, “আমাকে সব খরচ করতে হয়। সেই সময় অত সুবিধে মিলত না। এখন তো ফেডারেশন আছে। তখন ছিল না।”
বছর খানেক আগে গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে বিমলবাবুর। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলেছে তাঁর। এখন তিনি ক্যানসার মুক্ত। সাবধানে থাকতে হয় তাঁকে। তবে কাজ করতে ভালবাসেন। আর ভালবাসেন এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে। না হলে কেউ ৪৫০ টাকার জন্য মুখে জ্যান্ত মুরগির ছানা ঢোকান আর বমি করেন!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।