জুমবাংলা ডেস্ক : বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ডিমের দাম নিয়ে হতাশ নিম্ন আয়ের মানুষ। বর্তমানে এই ডিমই তাদের পুষ্টি জোগানের অন্যতম প্রধান খাদ্য উপাদান। ভোক্তারা ডিমের দাম কমানোর দাবি জানালেও যতক্ষণ পর্যন্ত মুরগির খাবারসহ অন্যান্য উপকরণের দাম না কমবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডিমের দাম কমবে না বলে জানিয়েছেন, খামারি, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
উপকরণের দাম কমানোর সাথে সাথে ডিমের দাম কমে যাবে বলে দাবি তাদের। যশোরে চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ ডিম উৎপাদন হওয়ার পরও বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এমনকি সরকারের বেধে দেয়া দামে ডিম কোথাও বিক্রি হচ্ছে না।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলায় সর্বমোট ১২৩ টি লেয়ার মুরগির ফার্ম রয়েছে। এসব ফার্মে বছরে ৫০ কোটির বেশি ডিম উৎপাদন হয়। জেলায় বছরে চাহিদা রয়েছে ৩১ কোটির কিছু বেশি ডিমের। এসব লেয়ার ফার্মের মধ্যে ১০-১২ টি বড় ফার্ম রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন হয় আফিল লেয়ার ফার্ম, চাঁদ অ্যাগ্রো ও স্পেক্ট্রা হেক্সা পোল্ট্রি ফার্মে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, আফিল লেয়ার ফার্মে সাড়ে চার লাখ, চাঁদ অ্যাগ্রোতে ৫০-৬০ হাজার ও স্পেক্ট্রা হেক্সা পোল্ট্রি ফার্মে ৫০ হাজার ডিম উৎপাদন হয় প্রতিদিন। সবগুলো ফার্ম মিলিয়ে ৫০ কোটি ডিম উৎপাদন হয় বছরে।
যশোর জেলার চাহিদা বছরে ৩১ কোটি বাদে বাকি ডিমের কিছু বাইরে চলে যায়। এছাড়া, কিছু ডিম বাচ্চা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। যশোরে প্রতি সপ্তাহে ১৫ থেকে ১৭ লাখ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয়। উদ্বৃত্ত ডিমের বেশকিছুটা ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন ফার্মে ব্যবহার করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এরপরও উদ্বৃত্ত ডিমের একটি অংশ যশোরের বাইরে যায়, আবার বাইরে থেকেও আসে।
এদিকে, বর্তমানে যশোরের বাজারের প্রতিটি ডিম সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করেছে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা।
শুক্রবার ঝিকরগাছার ডিম উৎপাদনকারী তরুণ খামারি মো. শাওন বলেন, ‘ফিডসহ অন্যান্য উপকরণের দাম না কমানো পর্যন্ত ডিমের দাম কমানো কোনোভাবেই সম্ভব না। ডিমের দাম নিয়ে হৈ চৈ না করে খাবারের দাম কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। সরকার যদি উপকরণের দাম কমাতে সক্ষম হয় তাহলে ডিমের দাম স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে। তা না হলে যতই চিল্লাপাল্লা করা হোক না কেন কোনো কাজ হবে না। সরকার বেশি কড়াকড়ি করলে হয়তো অনেকেই খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। এতে সংকট আরও বাড়বে।’ তার সাথে একমত পোষণ করেন বিক্রেতা ও সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারাও।
ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার তিন দফা ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু ডিম আমদানি হয়েছে খুব কমই। যা ডিমের বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক বলেন, অনেক জেলায় বন্যা হওয়ার কারণে বেশকিছু খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ডিমের ওপর চাপ পড়েছে। একইসাথে বাজারে মাছসহ অন্যান্য সবজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমের ব্যবহার বেড়েছে। যেহেতু ব্যবহার বেড়েছে এ কারণে দামও কিছুটা বেড়েছে। তারপরও খাবারসহ অন্যান্য উপকরণের দাম কমাতে হবে। তা না হলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে শুক্রবার র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সাবেক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান, চৌগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন, মুরগির খাদ্য বিক্রেতা মুরাদ হোসেন ও ঝিকরগাছার খামারি মো. শাওন। কোরআন তেলোয়াত করেন মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মেহেদি হাসান। উপস্থাপনা করেন ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুমা আক্তার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।