জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর বাজারগুলোতে হঠাৎ বেড়েছে ডিমের দাম। পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে।
খুচরা বাজারে দাম বৃদ্ধির হার আরও বেশি। এতে বিপাকে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডিমের উৎপাদন হ্রাস ও সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতারা মনে করছেন, এটি কারসাজি।
রোববার (৬ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ার বাজারের পাইকারি ও খুচরা ডিমের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। মুরগির সাদা ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকা, হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা।
গত বৃহস্পতিবারেও এই বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়, সাদা ডিম ১৩৫ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের তুলনায় এলাকাভিত্তিক স্থানীয় বাজারগুলোতে ডিমের দাম আরও বেশি। কোথাও কোথাও ১৭০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার থেকে বাজারে বাড়তি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। তাদের দাবি, ডিম উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই, যার ফলে দাম বাড়ছে।
হঠাৎ ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ভাই ভাই এগ শপের বিক্রেতা সঞ্জয় চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাজারে ডিমের দাম কম ছিল। শুক্রবার থেকে হঠাৎ প্রতি ডজনে ১০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। সরবরাহের ঘাটতির কারণে দাম বাড়েছে। তবে দাম বাড়ার আসল কারণ বলতে পারবে আড়তদার ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
তিনি আরও বলেন, আগে যেখানে প্রতি গাড়িতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার ডিম আসত। এখন সেখানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার আসছে। যাদের দুই গাড়ি ডিম আসত, তাদের আসছে এক গাড়ি। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খামারিরা বয়স্ক মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে। যার কারণে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। অনেক ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছেমতো দাম নিয়ন্ত্রণ করছে।
ডিমের দাম আবার কবে কমতে পারে জানতে চাইলে এই ডিম বিক্রেতা বলেন, কাঁচামালের দাম কখন কমবে, কখন বাড়বে সেটা আগে থেকে বলা যায় না। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে, সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে।
একই মার্কেটের জাহাঙ্গীর স্টোরের বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, খামারে পর্যাপ্ত ডিম উৎপাদন হচ্ছে না। আগের তুলনায় অর্ধেক ডিম আসছে বাজারে। খামারিরা পুরান বয়স্ক মুরগি বিক্রি করে দেওয়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে আবার যখন মুরগি ডিম দিতে শুরু করবে তখন দাম কমবে। এর জন্য ৪-৫ মাস সময় লাগতে পারে। এছাড়া দাম কমার সুযোগ নেই।
তবে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেই ডিমের দাম বাড়িয়েছে। সরকারের যথাযথ তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিচ্ছে। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
কারওয়ান বাজারে ডিম কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, এক বছর আগেও ৬-৭ টাকা করে আমরা ডিম কিনেছি। এখন সেই ডিম প্রতি পিস সাড়ে ১২ টাকার বেশি পড়ছে। এক বছরে দুই গুণ দাম বেড়েছে। গত কয়েকদিনে প্রতি ডজনে ১০-১৫ টাকা বেড়ে গেছে। এতে গরিব মানুষের কষ্ট বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাজারে মাছ-মাংসের আকাশছোঁয়া দামের কারণে গরিবরা ডিম দিয়ে তাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারত। দুই হালি ডিম কিনতে পারত। কিন্তু এখন সেই পথও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আগে রিকশাচালকরা সকালের নাস্তায় ১০ টাকা দিয়ে খেতে পারত। এখন সেই ডিম ২০ টাকা হয়েছে। যার বেতন ৩০ হাজার টাকা তার হয়তো গত এক বছরে এক থেকে দুই হাজার টাকা বেতন বেড়েছে। কিন্তু একই সময়ে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। ফলে চাহিদা থাকলেও মানুষ তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছে না।
সরকারের তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে অভিযোগ করে এই ক্রেতা বলেন, বিষয়গুলো সরকারের দেখা উচিত। মানুষ প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দামের কারণে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। তদারকি সংস্থাগুলোর প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা উচিত। উৎপাদন ব্যবস্থা দেখা ও পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। তাহলে ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে কোনো কিছুর দাম বাড়াতে পারত না।
কারওয়ান বাজারে ডিম কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী মোসাম্মৎ বেগম। এক ডজন ডিম কিনতে এলেও দামের কারণে তিনি হাফ ডজন ডিম কিনেছেন। তিনি বলেন, বাজারে মাছ-মাংসের যে দাম, তাতে সেগুলো কিনতে পারি না। এখন ডিমের দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখন ৫০০ টাকার বাজার করলে ব্যাগের এক কোণাও ভরে না। আমাদের মতো গরিব মানুষের জীবন চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।