ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধে চরম খাদ্য সংকটে থাকা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। দিনের পর দিন দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায় দিন পার করছেন সাধারণ মানুষ। এ পরিস্থিতিতে অসাধারণ মানবিক উদাহরণ গড়ে তুলেছেন প্রতিবেশী দেশ মিসরের সাধারণ জনগণ।
সম্প্রতি মিসরের একদল সাধারণ মানুষ ছোট ছোট বোতলে চাল ও মসুর ডাল ভরে তা সমুদ্রে ছুঁড়ে দেন। তাঁদের একটাই আশাবাদ—বোতলগুলো স্রোতের টানে ভেসে গাজার উপকূলে পৌঁছাবে এবং সেখানে কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ হয়ত এটি পেয়ে উপকৃত হবে।
এই আশ্চর্যজনক কাজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। গাজার এক জেলে সম্প্রতি এমন একটি বোতল উদ্ধার করেছেন। বোতল খুলে তিনি আবিষ্কার করেন, এর ভেতরে রয়েছে কিছু চাল ও মসুর ডাল। এছাড়া একটি ছোট নোটে লেখা রয়েছে, “মিসর দীর্ঘজীবী হোক।”
ভিডিও বার্তায় ওই জেলে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন,
“বলুন আল্লাহু আকবর! আমাদের মিসরের ভাইয়েরা চাল-ডাল ভর্তি বোতল পাঠিয়েছেন। এটি আমি সমুদ্র থেকে তুলেছি। গাজায় খুব কম সংখ্যক বোতল এসেছে। কিন্তু এর মানে হলো, আমরা আজ ডাল খেতে পারব।”
এই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ভিডিওটি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম TRT World।
ব্যতিক্রমী এই সহায়তা কর্মসূচির পেছনের কাহিনি
গত ২৩ জুলাই মিসরের উপকূলে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি বোতলগুলো ছুঁড়তে ছুঁড়তে বলেন,
“আমাদের গাজার ভাইয়েরা, দয়া করে আমাদের ক্ষমা করুন। আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারছি না।”
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং বহু মানুষ মিসরের সাধারণ মানুষের এই উদ্যোগকে কৃতজ্ঞতা ও সম্মান জানিয়ে সাড়া দেন।
সরকারের নীরবতা ও জনগণের দায়িত্ববোধ
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গাজার পাশেই অবস্থান মিসরের মতো এক শক্তিশালী মুসলিম দেশের। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিলতায় সরকারিভাবে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের এই মানবিক ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
এটি একদিকে যেমন মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, অন্যদিকে প্রশ্ন তোলে—রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরও বড় পরিসরে সহায়তা কি সম্ভব নয়?
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান
বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি ও সহায়তা খুব জরুরি হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আগেও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এখন সময় হয়েছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার, যেন সাধারণ মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার মৌলিক অধিকার ফিরে পায়।
মিসরের সাধারণ মানুষের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মানবিকতার এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ইতিহাসে। কিছু বোতল চাল ও ডাল হয়তো বিশাল সংকটের সমাধান নয়, কিন্তু এটি একটি বার্তা—মানবতা এখনো বেঁচে আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।