ধর্ম ডেস্ক : পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দিন আজ। এরপরই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় খুশি ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের অর্থ হচ্ছে রোজা ভাঙার উৎসব। তবে মুসলমানের আনন্দোৎসব আর অমুসলিমের আনন্দোৎসবে ভিন্নতা রয়েছে। মুমিনরা আনন্দোৎসব করে আল্লাহর পছন্দনীয় আমলের মাধ্যমে। কেননা মুসলমানের জীবন ও চিন্তা হয় আখেরাতকেন্দ্রিক। আসলে ঈদুল ফিতর আনন্দ ও ইবাদত দুটির সমন্বিত রূপ। এ আনন্দ আল্লাহর রহমত ও ক্ষমাপ্রাপ্তির, জাহান্নাম থেকে মুক্তির।
মুসলিম উম্মাহর ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সকলে এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর এক অনন্য খুশির দিন। তবে ঈদ তাদের জন্য যারা রোজা রেখেছেন। যারা রমজানে সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পেরেছেন। যারা নিজের নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছেন, ঈদ তাদের জন্য মহাখুশির দিন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ বান্দাদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! যে শ্রমিক তার কর্ম পূর্ণ করেছে, তার বিনিময় কী? তারা বলে, তাদের বিনিময় হলো তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণরূপে প্রদান করা। তিনি বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দা-বান্দিরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেছে, তারপর দোয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। আমার সম্মান, করুণা, মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি তাদের প্রার্থনা গ্রহণ করব।’ এরপর আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের মন্দ আমলগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম।’ (বায়হাকি, খুতবাতুল আহকাম : পৃ ১৬২-১৬৬)
ঈদের দিনের বেশ কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। চলুন জেনে নেই সেই আমলগুলো:
গোসল করা ও পবিত্রতা অর্জন করা : ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা ও মিসওয়াক করা সুন্নাত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন। (বোখারি : ১/১৩০)
আলবানি (রহ.) ‘ইরওয়াউল গালিল’ নামক গ্রন্থে ফারয়াবি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাদ্বিয়াল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন- ঈদুল ফিতরের দিন তিনটি সুন্নাত। ১. পায়ে হেঁটে ইদগাহে গমন করা ২. ইদগাহে যাওয়ার পূর্বে কোনো কিছু খাওয়া। ৩. গোসল করা।
সুন্দর ও উত্তম পোষাক পরিধান করা : মুসলমানদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর ও সাধ্যের ভেতর সবচেয়ে উত্তম পোষাক পরিধান করা সুন্নত।
ইবনুল কায়্যিম রহিমাল্লাহ বলেন- নবীজি দুই ইদের দিন সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জামাটি পরিধান করতেন। তার একটা বিশেষ সুট ছিলো, যা তিনি দুই ঈদে ও জুমাতে পরিধান করতেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- জাফর ইবনু মুহাম্মদ তার পিতা থেকে, তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) প্রতিটি ঈদে ডোরা-কাটা পোষাক পরিধান করতেন। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৬৩)
ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার করা : ঈদুল ফিতরের দিন ইদগাহে যাওয়ার পূর্বে সামান্য কিছু পানাহার করা সুন্নত। তবে ঈদুল আযহার দিন পানাহার ব্যতীত ঈদগাহে গমন করা ও নামাজের পর নিজের কুরবানির গোশত দিয়ে প্রথম খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত।
আনাস (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। অন্য এক বর্ণনামতে, তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৫৩)
ঈদগাহে যাতায়াতের সময় তাকবির বলা : ঈদের দিন বেশি বেশি তাকবির পাঠ করে আল্লাহকে ডাকার মধ্যেই প্রকৃত আনন্দ। তাই ঈদগাহে যাতায়াতের সময় ঈদুল ফিতরের দিন তুলনামূলক নিম্বস্বরে তাকবির বলা আর ঈদুল আজহার দিন উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুণ আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
জুহরি থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের দিকে গমন করতেন এবং নামাজ পড়া অবধি এ তাকবির অব্যাহত রাখতেন। নামাজ শেষ হলে তাকবির পাঠ বন্ধ করে ফেলতেন। (সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহিহাহ : ১৭১)
ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা : ঈদগাহে যাতায়াতের রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নাত। যাওয়াত সময় এক রাস্তা দিয়ে গমন করা আর প্রস্তানের সময় অন্য রাস্তা ব্যবহার করা সুন্নত। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৮৬)
পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন : কোনো ধরনের অপারগতা না থাকলে, পায়ে হেঁটে ইদগাহে গমন করা সুন্নত। ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)
ঈদগাহে যেতে শিশুদের সঙ্গে নেয়া : আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় ফজল ইবনু আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস, আব্বাস, আলি, জাফর, হাসান, হোসাইন, উসামা ইবনু জায়দ, জায়দ ইবনু হারিসা, আয়মান ইবনু উম্মু আয়মান (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে উচ্চস্বরে তাকবির ও তাহলিল পাঠ করতে করতে বের হতেন। অতঃপর তিনি কামারদের রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে উপস্থিত হতেন এবং প্রত্যাবর্তনের সময় মুচিদের রাস্তা দিয়ে ঘরে আসতেন। (সুনানে কুবরা বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৪৯)
ঈদের খুতবা শ্রবণ করা : ঈদের নামাজ শেষে খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা। হাদিসে এসেছে-
আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমি ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন: “আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শুনার জন্যে বসবে, আর যার চলে যাওয়ার ইচ্ছা, সে চলে যাবে।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১০৭৩)
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা : ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিস শরিফে এসেছে- জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবোয়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম’ আল্লাহ আমার এবং আপনার যাবতীয় ভাল কাজ কবুল করুক। (ফাতহুল কাদির, ২খন্ড, ৫১৭)
ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায় করা : ঈদের নামাজের আগে-পরে ঈদের নামাজের স্থানে যেকোন ধরনের নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ। ঈদের নামাজের পরে ইদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে দুই রাকাত নফল আদায় করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে- আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাজের আগে কোনো নামাজ পড়তেন না। তবে নামাজের পর ঘরে ফিরে করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৯৩)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।