ধর্ম ডেস্ক : ঈদ মুসলমানদের জন্য এক আনন্দঘন ও পবিত্র উৎসব। ঈদের দিন আমরা নতুন পোশাক পরি, একে অপরকে আলিঙ্গন করি এবং বিভিন্ন দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে দিনটি পালন করি।
Table of Contents
এই দিনটি শুধু উৎসব নয়, বরং একটি ইবাদতের দিন, যেখানে কিছু নির্দিষ্ট দোয়া পড়লে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করা যায়। ঈদের দোয়া এই দিনটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আত্মার পবিত্রতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের ইবাদতকে আরও সম্পূর্ণ করে তোলে।
ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে ও পরে পড়ার সুন্নত দোয়া
ঈদের নামাজে যাওয়ার পথে কিছু নির্দিষ্ট দোয়া পড়া রাসুল (সা.) এর সুন্নতের মধ্যে পড়ে। ঈদের দোয়া পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শোকর জ্ঞাপন, ক্ষমা প্রার্থনা এবং তার রহমত লাভের সুযোগ হয়। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার জন্য দোয়াগুলোর কিছু ভিন্নতা থাকলেও মূলত আত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই উদ্দেশ্য।
উদাহরণস্বরূপ, ঈদুল ফিতরের দিন রাসুল (সা.) ফজরের নামাজের পর থেকে ঈদের নামাজের আগে পর্যন্ত “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ” বারবার পড়তেন। এই দোয়াটি তাকবিরে তাশরীক নামে পরিচিত। এটি ঈদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হিসেবে সুন্নত।
ঈদের নামাজের পরে আপনি আল্লাহর কাছে নিজের ও পরিবারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন এবং দোয়া করতে পারেন যেন তিনি আমাদের ঈমান আরও দৃঢ় করে দেন।
ঈদের দিনে ঘরে ও পরিবারের জন্য পড়ার উপযোগী দোয়া
ঈদের দিনে শুধু ঈদগাহে গিয়ে দোয়া করলেই হয় না, বরং এই দিনটি জুড়ে ঘরে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এবং ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর কাছে বিভিন্ন দোয়া করা উত্তম। ঈদের দোয়া গুলো আত্মশুদ্ধি ও শান্তির এক অনন্য মাধ্যম।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঈদের দোয়া:
- দোয়া ১: “আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়াজ্বুরনি, ওয়ারযুকনি।” অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, সঠিক পথ দেখান, কষ্ট থেকে রক্ষা করুন এবং রিজিক দিন।
- দোয়া ২: “রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আযাবান্নার।” অর্থাৎ: হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন, আখিরাতে কল্যাণ দিন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।
- দোয়া ৩: ঈদের সময় পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জনদের জন্য দোয়া: “আল্লাহুম্মারহাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছাগিরা।” অর্থাৎ: হে আল্লাহ, আমার পিতা-মাতাকে রহম করুন যেমন তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন-পালন করেছেন।
এইসব ঈদের দোয়া শুধু একদিনের জন্য নয়, বরং জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কাজে লাগে।
ইসলামিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী ঈদের দোয়া ও তার ফজিলত
ইসলামী শরীয়ত অনুসারে, ঈদের দিন দোয়া করার ফজিলত অসীম। হাদীস ও কোরআনে ঈদের দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে উল্লেখ আছে। ঈদের দোয়া পড়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়, অন্যদিকে দোয়া ব্যক্তির আত্মা ও মনকে প্রশান্ত করে তোলে।
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল (সা.) ঈদের দিনে অতিরিক্ত ইবাদত করতেন এবং বিভিন্ন দোয়া ও যিকিরে লিপ্ত থাকতেন। ঈদের দিনে দোয়া করার মাধ্যমে আমরা সেই সুন্নত অনুসরণ করি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হই।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ঈদের দোয়া গুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কল্যাণের জন্য নয় বরং উম্মতের শান্তি ও একতার জন্যও হওয়া উচিত।
সন্তানদের শেখানো উচিত ঈদের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
আজকের প্রজন্ম যাতে ইসলামিক চেতনা ও সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারে, সেজন্য ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে ঈদের দোয়া শেখানো জরুরি। শিশুদের মন সহজে গ্রহণ করতে পারে এমন দোয়া গুলো তাদেরকে মুখস্থ করানো এবং তাদের সামনে দোয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব।
শিশুদের শেখাতে পারেন:
- “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার…” তাকবির
- “রব্বি ইজযানী আন আশকুরা নি’আমাকাল্লাতি আন’আমতা আলাইয়্যা”
এসব সহজ ও অর্থবহ দোয়া শিশুরা ঈদের আনন্দের সাথে সাথে শিখে নেয়, যা তাদের ইসলামিক চরিত্র গঠনে সহায়ক হয়।
FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
- প্রশ্ন: ঈদের দোয়া পড়া কি ফরজ?
উত্তর: না, এটি ফরজ নয়, তবে সুন্নত ও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। - প্রশ্ন: ঈদের দিনে কোন সময়ে দোয়া পড়া ভালো?
উত্তর: ফজরের নামাজের পর থেকে ঈদের নামাজ পর্যন্ত এবং সারাদিন জুড়েই দোয়া করা উত্তম। - প্রশ্ন: ঈদের বিশেষ দোয়া কীভাবে মনে রাখা যায়?
উত্তর: ছোট ছোট দোয়াগুলো মুখস্থ করে পরিবারসহ নিয়মিত পড়লে মনে রাখা সহজ হয়।
ঈদের দিন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় এবং বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে দিনটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঈদের দোয়া কেবল একটি ধর্মীয় দিক নয়, এটি আমাদের আত্মিক শান্তি, পরিবারে ভালোবাসা এবং সমাজে ঐক্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, এই দোয়াগুলো পড়লে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব এবং আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি নেমে আসে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।