ধর্ম ডেস্ক : আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের দুটি ঈদ দান করেছেন— ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। মুসলিমদের ঈদ ও উৎসব অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর উৎসব থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
আল্লাহর জিকির ও তার বড়ত্বের ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিমদের ঈদ। ঈদের দিনে মুসলিমদের প্রথম ও প্রধান আমল হলো ঈদের নামাজ।
ঈদের নামাজ কাদের ওপর ওয়াজিব
মাসায়ালা: যাদের ওপর জুমার নামাজ ফরজ, তাদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব।
অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, যেসব মুসলিম পুরুষ, জামাতে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের সক্ষমতা রাখে তাদের ঈদের নামাজ পড়তে হবে। (আলমুহিতুল বুরহানি ২/৪৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৬৫)
নারীদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। অনুরূপ এমন অসুস্থ পুরুষ, যে ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের সক্ষমতা রাখে না, তার ওপরও ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়।
(কিতাবুল আছল ১/৩২৩; মাবসুত, সারাখসি ২/৪০; আলমুহিতুল বুরহানি ২/৪৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭)
মুসাফির তথা যে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিমি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে— এমন ব্যক্তির ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি ঈদের নামাজ পড়ে তা হলে তা সহিহ হবে এবং এর সওয়াবও পাবে। (আততাজরিদ, কুদুরি ২/৯৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭)
ঈদের নামাজের ওয়াক্ত
ঈদের নামাজের ওয়াক্ত হচ্ছে— সূর্য উদিত হয়ে (নামাজের) নিষিদ্ধ সময় শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে জাওয়াল তথা সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত।—এই সময়ের মধ্যেই ঈদের নামাজ পড়তে হবে। জাওয়ালের পর আর ঈদের নামাজ সহিহ হবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১৩৫)
ঈদুল আজহার নামাজ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর দেরি না করে একটু তাড়াতাড়ি পড়া মুস্তাহাব। যাতে কুরবানির কাজ দ্রুত শুরু করা যায়। আর ঈদুল ফিতরের নামাজও ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি আদায় করে নেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক, বর্ণনা ৫৬৫১; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৬৭;)
ঈদের নামাজের স্থান
ঈদের নামাজ ঈদগাহে ও খোলা মাঠে পড়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদিন সবাই ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়তেন।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (র) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন (ঈদের নামাজের জন্য) ঈদগাহে যেতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৯৬৫)
হযরত আলী (র) বলেন, দুই ঈদে (ঈদের নামাজের জন্য) খোলা মাঠে যাওয়া সুন্নত। (আলমুজামুল আওসাত, তবারানি, হাদিস ৪০৪০)
মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকলে বিনা ওজরে মসজিদে ঈদের জামাত করবে না। তবে কোথাও বিনা জরুরতে এমনটি করা হলে ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে শহরে ঈদগাহ কম, বিধায় অধিকাংশ মসজিদে ঈদের জামাত হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়া বা বৃষ্টি ইত্যাদির কারণে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়লে সুন্নতের খেলাফ হবে না।
ওজরের সময় মসজিদে পড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হজরত আবু হুরায়রা (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—কোনো এক ঈদের দিন বৃষ্টি তাদের পেয়ে বসে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১৫৩)
ঈদের নামাজে তায়াম্মুম
নামাজে শরিক হওয়ার আগমুহূর্তে কারও ওজু না থাকলে এবং ওজু করতে গেলে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে।
হজরত আব্দুর রহমান ইবনুল কাসিম (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— (ঈদের নামাজ) ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ে নেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৯)
হজরত ইবরাহিম নাখায়ি (রহ) বলেন— ঈদ ও জানাজার ক্ষেত্রে (ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায়) তায়াম্মুম করা যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৮) -কিতাবুল আছল ১/৩২০; আলমুহিতুল বুরহানি ২/৫০২
তবে জুমা ও ওয়াক্তিয়া নামাজে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তায়াম্মুমের ওই বিধান প্রযোজ্য নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।