ধর্ম ডেস্ক : মুসলিম জীবনে ঈদের দিন এক আনন্দঘন ও বরকতময় মুহূর্ত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে মুসল্লিগণ বিশেষ একটি নামাজ আদায় করে থাকেন, যাকে বলা হয় ঈদের নামাজ। এই নামাজ শুরু হয় একটি সঠিক নিয়তের মাধ্যমে। অনেকেই ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে সংশয়ে পড়েন নিয়ত নিয়ে। তাই এই প্রবন্ধে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করবো ঈদের নামাজের নিয়ত নিয়ে, যেন প্রত্যেকে সুস্পষ্টভাবে জানতে পারেন কীভাবে সঠিকভাবে নিয়ত করতে হয়।
Table of Contents
ঈদের নামাজের নিয়ত কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ইসলামে নিয়ত বা মনস্থির করাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে, “নিয়তের উপরই সকল কাজের ফল নির্ভর করে।” (বুখারি ও মুসলিম)। ঈদের নামাজ, যেটি একটি সুন্নাতে মুআক্কাদা নামাজ, তা শুরু করার আগে নিয়ত করাটা ফরজ নয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ঈদের নামাজের নিয়ত আমাদের ইবাদতের উদ্দেশ্য ও মনোভাবকে প্রকাশ করে।
নিয়ত করা মানে শুধু মনে মনে ঠিক করে নেওয়া নয়, বরং কার জন্য এবং কোন কাজটি করা হচ্ছে তা স্পষ্টভাবে বোঝা। ঈদের নামাজে সাধারণত জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা হয়, তাই নিয়তও সেই অনুযায়ী করা হয়।
ঈদের নামাজের নিয়তের সঠিক পদ্ধতি
ঈদের নামাজে নিয়তের সময় মুখে নিয়ত পড়া সুন্নত হিসেবে বিবেচিত। যদিও নিয়ত মূলত অন্তরের কাজ, কিন্তু মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। নিচে ঈদের নামাজের নিয়ত বাংলা ও আরবিতে তুলে ধরা হলো:
বাংলায় নিয়ত:
“আমি দুই রাকাআত ঈদের নামাজের নিয়ত করছি, ছয় তাকবীর সহ ইমামের অনুসরণে, আল্লাহর জন্য।”
আরবিতে নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةَ الْعِيدِ مَعَ الْإِمَامِ، للهِ تَعَالَى
যখন মুসল্লি ঈদের জামাতে শরিক হন, তখন তাকবীরে তাহরিমার পূর্বেই এই নিয়ত মনে মনে করতে হবে। কারো পক্ষে মুখে পড়া কঠিন হলে মনে মনে চিন্তা করলেই যথেষ্ট।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের নিয়তের পার্থক্য
যদিও নিয়তের বাক্য প্রায় একই থাকে, তবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে।
- ঈদুল ফিতরের নিয়ত:
“আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাআত নামাজ আদায়ের নিয়ত করছি, ছয় তাকবীর সহ, ইমামের অনুসরণে, আল্লাহর জন্য।” - ঈদুল আজহার নিয়ত:
“আমি ঈদুল আজহার দুই রাকাআত নামাজ আদায়ের নিয়ত করছি, ছয় তাকবীর সহ, ইমামের অনুসরণে, আল্লাহর জন্য।”
অনেকে ঈদের নামাজে কুরবানির ইচ্ছা যুক্ত করে থাকেন, তবে নিয়ত সহজ ও স্পষ্ট হওয়াই উত্তম। ঈদের নামাজের নিয়ত হল ঈদের নামাজের একটি মৌলিক দিক যা নামাজকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
নিয়তের গুরুত্ব কুরআন ও হাদীসের আলোকে
কুরআনে বলা হয়েছে, “তারা কেবল এ কারণে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছে যে, তারা যেন একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত করে।” (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ: ৫)।
হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক কাজই নিয়তের উপর নির্ভর করে।” (সহীহ বুখারী)। তাই ঈদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতেও নিয়ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের ইবাদতের উদ্দেশ্যকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে কেন্দ্রীভূত করে।
মনে মনে নিয়ত না করলে কি নামাজ হবে না?
নিয়ত অন্তরের বিষয়। মুখে পড়া সুন্নত হলেও, কেউ যদি মনে মনে নিয়ত না করে থাকে তবে সেটি সমস্যা হতে পারে। ইসলামিক স্কলারদের মতে, নিয়ত না থাকলে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই ঈদের নামাজে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ।
শিশুদের জন্য ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত শেখানো
শিশুদের ছোটবেলা থেকেই নামাজের শিক্ষা দেওয়া উচিত। ঈদের নামাজের নিয়ত সহজ করে শেখানো গেলে তারা আনন্দের সাথে নামাজ আদায় করবে। শিশুদের জন্য নিয়ত বাংলা ভাষায় এবং সহজ শব্দে শেখানো যেতে পারে, যেমন:
“আমি দুই রাকাআত ঈদের নামাজ পড়বো আল্লাহর জন্য।”
শিশুদের শেখানোর সময় মুখে মুখে পড়তে অনুপ্রাণিত করুন এবং তাদের সাথে ঈদের নামাজে নিয়ে যান।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
- ঈদের নামাজের নিয়ত কি মুখে পড়া জরুরি?
না, নিয়ত মূলত অন্তরের কাজ। তবে মুখে পড়লে উত্তম। - নিয়ত ভুল হলে নামাজ কি শুদ্ধ হয়?
ইচ্ছাকৃত না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। - ঈদের নামাজে নিয়ত না করলেও কি নামাজ হবে?
না, নিয়ত না থাকলে নামাজ হবে না। অন্তত মনে মনে নিয়ত করা আবশ্যক। - কত রাকাআত হয় ঈদের নামাজে?
দুই রাকাআত। - ঈদের নামাজে ছয় তাকবীর মানে কী?
প্রথম রাকাআতে ৩টি অতিরিক্ত তাকবীর, দ্বিতীয় রাকাআতে ৩টি অতিরিক্ত তাকবীর বলা হয়।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ শুধু ইবাদত নয়, এটি আনন্দ, ঐক্য ও ইসলামী সংস্কৃতির প্রতীক। সঠিকভাবে ঈদের নামাজের নিয়ত করে নামাজ আদায় করা মুসলিম জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নিয়তের মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতের উদ্দেশ্য আল্লাহর প্রতি নিবেদন করি। তাই নামাজ শুরু করার আগে নিয়ত করাটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ইবাদতের প্রাণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।