জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয়ভাবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। রাত পোহালেই সবচেয়ে বড় এই উৎসবে মাতবেন মুসলমানরা। তবে একদিন আগেই বুধবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উদযাপন করা হয়েছে ঈদ। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন মাজহাব ও দরবারের অনুসারীরা ২২৬ গ্রামে আদায় করেছেন জামাত। ফিতরা আদায়, নতুন জামাকাপড় পরিধান, কোলাকুলি ও মিষ্টান্ন বিতরণের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন অনাবিল আনন্দ।
রাজধানীর একটি স্থানে বুধবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে মিল রেখে পান্থপথের সামারাই কনভেনশন সেন্টারে এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল ৭টায় মুসল্লিরা জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) বিজন কুমার দাস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিবছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মুসুল্লিদের একটি দল এখানে ঈদের নামাজ পড়েন। এবারও তারা একদিন আগেই এই উৎসব উদযাপন করেছেন।
চাঁদপুর: জেলার ৪০ গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। সাদ্রা দরবার শরিফের অনুসারীরা ৯৫ বছর ধরেই আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে থাকেন। বুধবার সকালে সাদ্রা ঈদগাহ মাঠ ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, ১৯২৮ সালে হাজীগঞ্জ রামচন্দ্রপুর মাদরাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের উদ্যোগ নেন। সাদ্রা ছাড়াও একদিন আগে ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হলো- হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বড়কুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাসারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।
সাদ্রা দরবার শরীফের বর্তমান পীর আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আমরা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখি এবং ঈদ উদযাপন করি।’
পটুয়াখালী: জেলার পাঁচ উপজেলার ২৮ গ্রামে বুধবার ঈদ উদযাপন করেছে অন্তত ১৪ হাজার পরিবার। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ও বড় বিঘাই, গলাচিপার সেনের হাওলা ও পশুরিবুনিয়া, রাঙ্গাবালীর নিজ হাওলা ও কানকুনি পাড়া, বাউফলের মদনপুরা, শাপলাখালী, রাজনগর, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, চন্দ্রপাড়া, দ্বিপাশা, কনকদিয়া, কনকদিয়া, সাবুপুরা, বামনিকাঠি, বানাজোড়া ও আমিরাবাদ এবং কলাপাড়ার দক্ষিণ দেবপুর, পাটুয়া, মরিচবুনিয়া, নাইয়া পট্টি, নিশানবাড়িয়া, শাখাখালী, তেগাছিয়া, ছোনখোলা ও বাদুরতলী গ্রামের মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন। এসব গ্রামের বাসিন্দারা সবাই বদরপুর দরবার শরীফ, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও এলাহাবাদ পীরের অনুসারী বলে জানা গেছে।
বদরপুর দরবার শরীফের পরিচালক নাজমুস সাহাদাত জানান, বুধবার সকাল ৯টায় জেলার সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীফে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ: প্রতি বছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন মুন্সীগঞ্জের ৯ গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মুসলমান। বুধবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সদর উপজেলার আনন্দপুর, শিলই, নায়েবকান্দি, আধারা, মিজিকান্দি, কালিরচর, বাংলাবাজার, বাঘাইকান্দির ও কংসপুরার গ্রামের কিছু অধিবাসী ঈদ পালন করেন। গ্রামগুলোর জাহাগীর তরিকার লোকজন কয়েক বছর ধরে রেওয়াজ পালন করছেন।
লালমনিরহাট: সৌদির সঙ্গে মিল রেখে বুধবার ঈদ উদযাপন করেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার মুন্সিপাড়ায় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, কালীগঞ্জের তুষভান্ডার, সুন্দ্রহবী, কাকিনা, চন্দ্রপু, চাপারহাট, মুন্সিপাড়া ও আমিনগঞ্জ গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের মুসল্লিরা আগাম ঈদ উদযাপন করেন।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম): সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুরের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। বুধবার সকালে রৌমারীর শৌলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া এলাকায় ও রাজীবপুর সদর ইউনিয়নের পূর্ব করাতিপাড়া এলাকায় ঈদের জামান অনুষ্ঠিত হয়।
হরিণাকুন্ডু (ঝিনাইদহ): সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে বুধবার ঈদ উদযাপন করেছেন ঝিনাইদহের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। সকাল ৮টায় হরিণাকুন্ডু উপজেলা মোড়ের গোলাম হযরতের মিলচাতাল চত্বরে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া উপজেলার নিদ্যনন্দপুর ও ভালকী গ্রামেও জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
লক্ষ্মীপুর: বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন লক্ষ্মীপুরের ১১ গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ। মাওলানা ইসহাকের (রাঃ) অনুসারী হিসেবে ৪৬ বছর ধরে মক্কা ও মদিনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঈদ উদযাপন ও রোজা রেখে আসছেন তারা। জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারো ঘরিয়া, হোটাটিয়া, শরশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপাসহ ১০টি গ্রামের এই আগাম ঈদ হয়েছে।
মাদারীপুর: সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে বুধবার ঈদ উদযাপন করেছেন মাদারীপুরের পাঁচ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। প্রধান ও বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সদর উপজেলার তাল্লুক গ্রামের চরকালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। এই মুসুল্লিরা সবাই সুরেশ্বর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রা.) এর অনুসারী।
ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ): উপজেলার দশধরী, ধর্মপাশা উত্তরপাড়া, রাধানগর, সৈয়দপুর, কান্দাপাড়া, গাছতলা, জামালপুর, রাজনগর, বাহুটিয়াকান্দা, মেউহারী, মহদীপুর ও মগুয়ারচর গ্রামের সুরেশ্বরী দরবার শরিফের অনুসারীরা বুধবার ঈদ উদযাপন করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরী দরবার শরিফের ভক্তরা উপজেলার দুটি স্থানে পৃথক পৃথক সময়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন।
পিরোজপুর: জেলার মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর ও কাউখালী উপজেলার কয়েকশ পরিবার বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। মঠবাড়িয়ার পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া, কাউখালীর শিয়ালকাঠী ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৪০টি পরিবার, নাজিরপুরের শেখমাটিয়া ইউনিয়নের ৭০টি পরিবার ঈদ জামাতে শরীক হন। এদিন সকাল ১০টায় মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খোন্দকার বাড়িতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ৮টায় উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজী ওয়াহেদ আলী হাওলাদার বাড়িতে আরও একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এই মুসুল্লিরা সবাই শরীয়তপুরের নাড়িয়ার সুরেশ্বর গ্রামের মরহুম হজরত মাওলানা জান শরিফ ওরফে শাহে আহম্মদ আলীর অনুসারী বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম: জেলার সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। সকাল ১০টায় তাঁরা মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন। পাশাপাশি আনোয়ারা ও বাঁশখালীসহ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার শতাধিক গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হয়। সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
দরবার সূত্র জানায়, সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল, সোনাকানিয়া, গারাঙ্গিয়া, চরতি, মনেয়াবাদ, বাজালিয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইশ, খাগরিয়া ও গাটিয়াডাঙ্গা, লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, চুনতি ও চরম্বা, বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর, জালিয়াপাড়া, ছনুয়া, মক্ষিরচর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডোংরা, আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ, বরুমচড়া, পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও, বাহুলী, ভেল্লাপাড়াসহ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ আজ ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন।
এ ছাড়া বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, হাতিয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও ভারত, পাকিস্থান, মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেখানে মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা আছেন, তাঁরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।