জুমবাংলা ডেস্ক : দুর্মূল্যের এই বাজারে চাকরি যেন সোনার হরিণ। যোগ্যতার নানা ধাপ পাড়ি দিয়ে গত বুধবার সেই হরিণের সন্ধান পেলেন ৩০ হাজার ৭৩১ জন। তাদের মধ্যে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) থেকে ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ৩ হাজার ৬৫৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। একই দিন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২৭ হাজার ৭৪ জনকে বেসরকারি স্কুল ও কলেজে নিয়োগের সুপারিশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এতে নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া হাজারো বেকার পরিবারে মুহূর্তেই আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। তাদের কাছে এ যেন ঈদের আনন্দ!
নন-ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া আজহারুল ইসলাম হারুণ জানান, তারা তিন বন্ধু একসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়োগের জন্য পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। বুধবার রাতেই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় গিয়ে একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন। চাকরি পাওয়া তাদের আরেক বন্ধু সুমন রহমান বললেন, যোগ্যতার প্রতিযোগিতায় চাকরি মেলা ভার। চাকরি খুঁজতে গিয়ে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে যান। আমরাও হয়েছি।
৪০তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে সুপারিশ পাননি এমন তিন হাজার ৬৫৭ প্রার্থীকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা-২০২৩ অনুযায়ী নবম থেকে বারোতম গ্রেডের পদে তাদের নিয়োগের জন্য সাময়িকভাবে এই সুপারিশ করা হয়। একইদিন এনটিআরসিএর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির আওতায় ২৭ হাজার ৭৪ জন প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৩২ হাজার ৪৮০ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে তাদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়।
এনটিআরসিএ থেকে জানা গেছে, সুপারিশ পেয়ে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজের ১৩ হাজার ৭০৫ জন নতুন শিক্ষক যোগদানের মাস থেকেই বেতন বা এমপিও পাবেন। তবে মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের নতুন শিক্ষকরা যোগদান থেকে বেতন পাবেন না। মাদ্রাসা ও কারিগরির এমপিও নীতিমালায় এ ধরনের কোনো ঘোষণা এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে শিক্ষকরা কাজে যোগদানের পর এমপিওভুক্ত হতে দেরি হলেও তারা যোগদানের দিন থেকেই বকেয়া বেতন পাবেন। আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর সুপারিশ পাওয়া এই ২৭ হাজার ৭৪ জন নতুন শিক্ষক যোগ দেবেন। গত এপ্রিলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে আগের তিন মাসের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় বাংলাদেশে বেকার লোকের সংখ্যা বেড়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার। বেকারত্বের এই দুর্দিনেও সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে একযোগে প্রায় ৩১ হাজার জনবল নিয়োগ গুরুত্বের দাবি রাখে বলছেন চাকরিপ্রাপ্তরা।
বেসরকারি কলেজে প্রভাষক পদে সুপারিশ পাওয়া আনিসুর রহমান বলেন, এই ৩০ হাজার ৭৩১ জনের মধ্যে একজনকেও কোনো টাকা দিয়ে চাকরি পেতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা এই যে, নিয়োগ ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করা। আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কমিটিকে ঘুষ দিয়ে শিক্ষকতার চাকরি হতো।
৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদের নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ আসিফ নুর বলেন, সব কিছুর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। চাকরি পাওয়া তামান্না তানিয়া খান নামের আরেক প্রার্থী বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল। করোনার দুই বছরসহ নানা কারণে এরই মধ্যে ৬ বছর পার হতে চলেছে। আমাদের অনেকেরই সরকারি চাকরির বয়স শেষ। আর কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না। তাই এই নিয়োগ আমার কাছে সত্যিকারভাবে আকাশের চাঁদকে হাতে পাওয়ার মতোই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।