জুমবাংলা ডেস্ক: আর কয়েকদিন বাদেই ঈদ। মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টের ৬-৭ নাম্বার রোডের মাঝামাঝিতে প্রতিদিন ইফতারের খাবার তৈরি ও বিক্রি করেন আজিজুর রাহমান। খোলা সয়াবিন বা পাম তেল দিয়ে ইফতারি তৈরি করলেও কদিন ধরে খোলা তেল মিলছে কম। যে দু একটি দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে সেখানেও কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা বাড়তি রাখা হচ্ছে।
এ কারণে তিনি পাঁচ লিটারের বোতল কিনে ভাজাপোড়া তৈরি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে তিনি অন্তত ৮-১০টি দোকান ঘুরেও যখন বোতলের তেল পাচ্ছিলেন না, তখন একটি দোকান থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে খোলা সয়াবিন কিনে নিয়ে যান।
এই অবস্থা এখন ঢাকার বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারী দোকানে। রোজায় ভোজ্যতেলের সরবরাহে কোনো সংকট তৈরি হবে না, সরকারের এমন ঘোষণার পরও ঠিক ঈদের আগেই চরম সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। যেখানে বাজারে নামমাত্র দু একটি দোকানে অল্প পরিমাণে সয়াবিন, পাম ওয়েল পাওয়া যাচ্ছে। বেশিরভাগ দোকানেই কোনো তেল নেই।
আজিজুর রহমান বলেন, “এমন সময় সংকট তৈরি হলো যখন রোজা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরও হয়তো দু-একদিন ইফতারি তৈরি করতাম। কিন্ত তেলের সংকটের কারণে এটা আজকেই বন্ধ করে দিব।”
হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্টের স্বপ্ন সুপারশপে বেলা ১২ টার দিকে গিয়ে দেখা গেল, মাত্র ৫-৬টি ১ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল। যেখানে সারি সারি ২, ৫ ও ১ লিটারের বোতলে ভরা থাকে। তবে সয়াবিন না থাকলেও সেখানে সূর্যমুখি ও কয়েকটি রাইস ব্র্যান অয়েলের বোতল দেখা গেছে।
প্রায় একই ধরনের সংকটের চিত্র দেখা গেল মগবাজার ও দিলু রোডের কয়েকটি সুপার শপে। মুদি দোকানগুলো কয়েকদিন ধরেই এই সংকট ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল।
বিক্রেতারা জানালেন, সকাল থেকে সয়াবিন তেলের বেশ চাহিদা ছিল, ফলে র্যাক খালি হয়ে হয়ে গেছে। তবে কোম্পনি থেকে সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে না।
কারওয়ানবাজারে বেঙ্গল অয়েল স্টোরের পাইকারি বিক্রেতা সজিব আহমেদ বলেন, “কোম্পানিগুলো তেল দিচ্ছে না। যে কারণে বাজারে তেল শেষ হয়ে গেছে।”
কারওয়ানবাজারের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রিফাত স্টোরের প্রোপাইটার রিফাত হোসেন বলেন, “প্রতিদিন যে পরিমাণ তেল বিক্রি হয় তার চারভাগের এক ভাগও সরবরাহ পাচ্ছি না। যে কারণে তেলই বিক্রি করতে পারছি না। ঈদের আগে তেল না থাকলে ক্রেতারা বিপদে পড়বে।”
তবে তেল প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা তেলের সরবরাহ ঠিক রেখেছে।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, “আমরা নিয়মিত তেল সরবরাহ করছি।”
উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারির শেষদিকে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির আবেদন করলে সরকার সেটা সরকার বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে দিয়ে তেলের সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং খুচরা দোকানগুলো তেলশূন্য হয়ে পড়ে। ঢাকার ভোক্তারা বাজার থেকে তেল কিনতে গিয়ে ফেরত আসে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহলের তৎপরর পরও ১৫ দিনের বেশি সময় লেগেছিল এই অবস্থা পুরোপুরি দূর হতে। অবশ্য সে সময় বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট কমিয়ে তেলের দামও কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা ও পাচ লিটারের বোতল ৭৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। যেখানে খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা ও পাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে।
এবার ঠিক একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। ভোক্তারা বাজার থেকে তেল কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে। অনেকেই হয়তো বিকল্প হিসেবে সড়িষা বা রাইস ব্র্যান কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে এবারের প্রেক্ষাপটও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি। ইন্দোনেশিয়া পাম ওয়েল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই লাগামহীন হয়ে পড়েছে সয়াবিন ও পাম ওয়েলের দাম। সয়াবিন তেল প্রায় দুই হাজার ডলার ও পাম ওয়েল ১৮০০শ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এবারও তেল প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দাম বৃদ্ধি করতে চায়। এ কারণে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে আগে থেকেই সরকারের উপর একটি চাপ তৈরি করে রাখছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামন গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পনিগুলোর কাছে এখনো প্রায় দেড় মাসের তেল রিজার্ভ রয়েছে। সংকট হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা দ্রুত বিষয়টির সমাধানে বসবো।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।