জুমবাংলা ডেস্ক : ঈদুল আজহা মুসলিমদের জন্য এক পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যেখানে আত্মত্যাগ ও সহানুভূতির শিক্ষা রয়েছে। এ সময় লাখো মানুষ কোরবানি দেন, যা সমাজে সমতার বার্তা দেয়। তবে এই বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকটি বড় দায়িত্ব হলো—পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কারণ, কোরবানির পশুর রক্ত, চামড়া, হাড় এবং অন্যান্য বর্জ্য যদি সঠিকভাবে পরিষ্কার ও ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তাহলে তা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই কোরবানির ইবাদতের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাও আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
Table of Contents
ঈদুল আজহার কোরবানির সময় পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা
প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় দেশে কয়েক লাখ গবাদিপশু কোরবানি করা হয়। এই বিশাল সংখ্যক পশুর জবাইয়ের ফলে সৃষ্টি হয় টন টন বর্জ্য। যদি এই বর্জ্যসমূহ নির্ধারিত স্থানে ও সঠিক পদ্ধতিতে অপসারণ না করা হয়, তাহলে তা শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে না, বরং পানির উৎস এবং বায়ু দূষণেও বড় ভূমিকা রাখে।
বিশেষ করে শহরাঞ্চলে যেখানে জনসংখ্যা ঘন এবং খোলা জায়গা কম, সেখানে কোরবানির বর্জ্য রাস্তায় বা ড্রেনে ফেলে দেয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে জীবাণু সংক্রমণ, মশা-মাছির উপদ্রব এবং দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা এই স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পেতে পারি এবং একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য করণীয়
১. নির্ধারিত স্থান বেছে নিন: কোরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করুন যেখানে সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং পানি বা রক্ত জমে না থাকে।
২. চামড়া ও হাড় আলাদা করুন: চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য নির্ধারিত সংগ্রহ কেন্দ্রে পৌঁছে দিন এবং হাড় সংগ্রহ করে উপযুক্ত স্থানে ফেলুন।
৩. প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করুন: বর্জ্য সংগ্রহে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করুন এবং তা সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার নির্ধারিত স্থানে দিন।
৪. বর্জ্য কম্পোস্টে রূপান্তর: গৃহস্থালি বা স্থানীয় উদ্যোগে অর্গানিক বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার তৈরি করা যেতে পারে।
৫. জীবাণুনাশক স্প্রে: জবাইয়ের পর স্থানটি পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দিন।
এই সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব।
সরকারি উদ্যোগ ও নাগরিক সচেতনতা
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন পৌরসভা ঈদের সময় অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ, বর্জ্য সংগ্রহের ট্রাক এবং মোবাইল অ্যাপ চালু করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক পদ্ধতি চালু করেছে। তবুও নাগরিকদের নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে কোরবানির স্থান ও আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঈদের দিন ও পরবর্তী দুই দিন বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
এছাড়া স্থানীয় কৃষিপ্রযুক্তির মতোই পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তির ব্যবহার সময়ের দাবি।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঈদুল আজহার কোরবানি যেমন একটি ধর্মীয় তৃপ্তি, তেমনি পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা হতে পারে একটি সামাজিক ও পরিবেশগত উদাহরণ।
FAQs: কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
- কোরবানির বর্জ্য কোথায় ফেলতে হয়?
সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে। খোলা রাস্তায় বা ড্রেনে ফেলা উচিত নয়। - পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝায়?
যে ব্যবস্থায় কোরবানির বর্জ্য প্রাকৃতিক উপায়ে অপসারণ বা পুনঃব্যবহারযোগ্য উপাদানে রূপান্তর করা হয়। - জবাইয়ের স্থান কেমন হওয়া উচিত?
পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত, ছায়াযুক্ত এবং সহজে পরিষ্কার করা যায় এমন জায়গা।
- কোরবানির পরে কী ধরণের পরিষ্কার কার্যক্রম প্রয়োজন?
রক্ত ও বর্জ্য পরিষ্কার, জীবাণুনাশক স্প্রে ও বর্জ্য উপযুক্ত স্থানে ফেলা। - সিটি কর্পোরেশন কিভাবে সহায়তা করে?
বর্জ্য অপসারণের জন্য অতিরিক্ত শ্রমিক, যানবাহন ও নির্ধারিত পয়েন্টের মাধ্যমে সেবা প্রদান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।