ধর্ম ডেস্ক : ঈদুল আজহা, মুসলমানদের একটি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব, যেখানে কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা হয়। এই কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে আত্মত্যাগ, ধৈর্য এবং সহানুভূতির এক গভীর বার্তা। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলমান ঈদের দিন পশু কোরবানি করে থাকেন। এই সময় পশু জবাইয়ের সঠিক নিয়ম এবং দোয়া সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একটি ইবাদতের অংশ এবং ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ দিক। ঈদুল আজহার জবাইয়ের দোয়া ও নিয়ম সম্পর্কিত এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
Table of Contents
ঈদুল আজহার জবাইয়ের দোয়া ও ইসলামী নিয়মাবলী
ঈদুল আজহার সময় পশু জবাইয়ের আগে ও পরে কিছু নির্দিষ্ট দোয়া পড়া সুন্নত। এর মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং এই ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় থাকে। পশু জবাইয়ের আগে যে দোয়াটি পড়া হয় তা হলো:
“বিসমিল্লাহি, আল্লাহু আকবার। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।”
এর অর্থ: আল্লাহর নামে (আমি কোরবানি করি), আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! এটি তোমারই পক্ষ থেকে এবং তোমার জন্যই।
এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, কোরবানিকৃত পশুটি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে। কোরবানি করার সময় ছুরি ধারালো হওয়া উচিত এবং পশুকে কষ্ট না দিয়ে দ্রুত এবং সঠিকভাবে জবাই করতে হবে। এটি রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত সুন্নত।
পশুকে কিবলামুখী করে শুইয়ে দিতে হবে এবং জবাই করার পর পরিমাণমতো সময় অপেক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে পশুর প্রাণ পুরোপুরি বের হয়ে গেছে। এরপর চামড়া ছাড়ানো এবং গোশত কাটা শুরু করা উচিত।
জবাইয়ের ইসলামী বিধান ও শরয়ী শর্তাবলি
ইসলামে কোরবানি একটি মহান ইবাদত এবং এর সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। এখানে শরয়ী দিক থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলি তুলে ধরা হলো:
- কোরবানির সময়: ঈদুল আজহার নামাজ শেষ হওয়ার পর থেকে তিনদিনের মধ্যে যেকোনো সময়ে কোরবানি করা যায়। প্রথম দিন কোরবানি করাই উত্তম।
- যোগ্যতা: কোরবানি করার জন্য ব্যক্তিকে নাবালক নয়, প্রাপ্তবয়স্ক ও সামর্থ্যবান মুসলিম হতে হবে।
- পশু নির্বাচনের নিয়ম: পশু হতে হবে নির্দিষ্ট বয়সের, যেমন গরু বা মহিষ দুই বছর, ছাগল এক বছর পূর্ণ হতে হবে। রোগগ্রস্ত বা বিকলাঙ্গ পশু গ্রহণযোগ্য নয়।
- ছুরি ধারালো রাখা: যাতে পশুকে কষ্ট না হয় এবং দ্রুত জবাই করা যায়।
- কিবলামুখী করে শোয়ানো: এটি সুন্নত এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ।
এই শর্তগুলো মান্য করে কোরবানি করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এই ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে।
কোরবানির দোয়ার তাৎপর্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টি
জবাইয়ের সময় পড়া দোয়া শুধু একটি প্রথাগত বাক্য নয়, বরং এতে রয়েছে এক গভীর আত্মিক বার্তা। “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” উচ্চারণের মাধ্যমে আমরা স্মরণ করি, এই পশুটির জীবন এবং আমাদের ক্ষমতা সবই আল্লাহর দেয়া। আর “আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা” -এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে স্বীকার করি যে, এই কোরবানি তাঁর দান এবং তাঁর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গিত।
এই আত্মিক বার্তা মনে রেখে কোরবানি করলে আমাদের ইবাদত আরও অর্থবহ হয়। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় যেন আমরা শুধু পশু জবাই না করি, বরং আমাদের আত্মা ও চরিত্রকে শুদ্ধ করি।
কোরবানির এই পবিত্র সময়ে, পশু জবাইয়ের দোয়া ও নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারি।
FAQs: ঈদুল আজহার জবাইয়ের দোয়া ও নিয়ম
- কোরবানির সময় কোন দোয়া পড়া হয়?
পশু জবাইয়ের সময় “বিসমিল্লাহি, আল্লাহু আকবার। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা” দোয়াটি পড়া সুন্নত। - কোন দিক মুখ করে পশু জবাই করা উচিত?
পশুকে কিবলামুখী করে শুইয়ে জবাই করা সুন্নত। - জবাইয়ের সময় ছুরি কেমন হওয়া উচিত?
ছুরি ধারালো হওয়া জরুরি, যাতে পশুকে কষ্ট না হয় এবং দ্রুত জবাই করা যায়। - কোন কোন পশু কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়?
রোগাক্রান্ত, অন্ধ, পঙ্গু বা অত্যন্ত দুর্বল পশু কোরবানির জন্য অগ্রহণযোগ্য।
- কোরবানির সময় কোন দিক থেকে জবাই করতে হয়?
ডান পাশে শুইয়ে গলা থেকে জবাই শুরু করতে হয়, যাতে দ্রুত রক্ত বের হয় এবং পশু সহজে মারা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।