ধর্ম ডেস্ক : ঈদুল ফিতর মুসলিমদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব, যা রমজান মাসের একমাস রোজা পালন শেষে পালিত হয়। ঈদের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত ইসলামে অত্যন্ত উঁচু স্তানে স্থান পেয়েছে। অনেকেই ঈদের দিন সকালে এই প্রশ্ন করেন – ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় রাকাত? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মাধ্যমে আমরা ঈদের নামাজ সম্পর্কে বিশদ জানতে পারব এবং তা যথাযথভাবে আদায় করতে পারব।
Table of Contents
ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় রাকাত ও তার নিয়ম
ঈদুল ফিতরের নামাজ মূলত দুই রাকাত। এটি ওয়াজিব নামাজ হিসেবে ধরা হয়। এই নামাজ ফরজ নয়, তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের নামাজে কোন আজান ও ইকামত দেওয়া হয় না। নামাজ শুরু হওয়ার আগে মুসল্লিরা একত্রে ঈদের জামাতে অংশ নেয়। নামাজে ইমাম অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির পাঠ করেন—প্রথম রাকাতে তিনটি এবং দ্বিতীয় রাকাতে তিনটি। এই অতিরিক্ত তাকবিরগুলো ঈদের নামাজকে অন্যান্য নামাজ থেকে আলাদা করে তোলে।
প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার আগে তিনটি তাকবির বলা হয়। ইমাম “আল্লাহু আকবার” বলবেন এবং মুসল্লিরাও একইভাবে তাকবির বলবেন। প্রতিটি তাকবিরের পর সামান্য বিরতি দেওয়া হয় এবং তাসবীহ পাঠ করা যেতে পারে। তারপর সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করে রুকুতে যাওয়া হয়।
দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠের পর আবার তিনটি অতিরিক্ত তাকবির বলা হয়। এরপর রুকু ও সিজদার মাধ্যমে নামাজ শেষ হয়। এইভাবে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামাজ সম্পন্ন হয়।
ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় ও আদায়ের পদ্ধতি
ঈদুল ফিতরের নামাজ সকালবেলা সূর্য উদয়ের কিছু পরে আদায় করতে হয়। ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী, নামাজ আদায়ের সময় হল সূর্য ওঠার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে। এই সময়টি ফজরের নামাজের পরে এবং যোহরের আগে। ঈদের নামাজ মসজিদ, ঈদগাহ অথবা খোলা মাঠে আদায় করা উত্তম। এতে মুসলিমদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সমবেত ঈমানের শক্তি গড়ে ওঠে।
নামাজের আগে ফিতরা আদায় করা অত্যাবশ্যক, যা দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ফিতরা আদায় ছাড়া ঈদের নামাজ পূর্ণতা পায় না। ফিতরার মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্র সবার মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
ঈদুল ফিতরের খুতবা এবং এর তাৎপর্য
ঈদুল ফিতরের নামাজের পর খুতবা পাঠ করা সুন্নত। ইমাম নামাজ শেষে মিম্বরে উঠে দুটি খুতবা পাঠ করেন। খুতবার মধ্যে ঈদের তাৎপর্য, রমজানের শিক্ষা, সমাজিক ও নৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং ইমামের বাণী থেকে উপকৃত হন।
ঈদুল ফিতরের নামাজে পড়া সূরা ও দোয়া
ঈদের নামাজে সূরা ফাতিহার পর সাধারণত সূরা আল আ’লা (সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা) বা সূরা গাশিয়াহ পড়া হয়। কেউ চাইলে অন্য ছোট সূরাও পড়তে পারে। ঈদের নামাজে অতিরিক্ত দোয়া বা কোন নির্দিষ্ট দোয়া নেই, তবে নামাজ শেষে দোয়া ও মুনাজাত করা যায়।
নারীদের ঈদুল ফিতরের নামাজ
নারীরা চাইলে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। কেউ কেউ বাড়িতে পরিবারের সাথে বা একা নামাজ আদায় করে থাকেন। তবে খোলা মাঠ বা ঈদগাহে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা আরও ফজিলতপূর্ণ বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।
ঈদুল ফিতরের নামাজ নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল
অনেকেই মনে করেন ঈদের নামাজ চার রাকাত বা ফরজ, যা ভুল ধারণা। আবার কেউ কেউ আজান ও ইকামতের প্রয়োজন মনে করেন। এই ভুলগুলো শুধরে নেওয়া জরুরি। ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় রাকাত এবং তা কিভাবে আদায় করতে হয়, তা জানা ও বোঝা সবার জন্যই প্রয়োজনীয়।
FAQ: ঈদুল ফিতরের নামাজ সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন
- ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় রাকাত? – দুই রাকাত, যা ওয়াজিব নামাজ হিসেবে ধরা হয়।
- এই নামাজে আজান বা ইকামত হয় কি? – না, ঈদের নামাজে আজান বা ইকামতের প্রয়োজন হয় না।
- ঈদের নামাজ কখন পড়তে হয়? – সূর্য ওঠার ১৫-২০ মিনিট পর থেকে যোহরের আগে পর্যন্ত।
- ঈদের নামাজে খুতবা কি আবশ্যক? – না, তবে খুতবা শোনা সুন্নত ও ফজিলতপূর্ণ।
- নারীরা কি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবে? – হ্যাঁ, চাইলে নারীরাও ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন।
ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় রাকাত—এই প্রশ্নের উত্তর হলো: দুই রাকাত। ইসলাম ধর্মে এই নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এটি ফরজ নয় বরং ওয়াজিব। নামাজের নিয়ম, সময় এবং তাকবিরগুলো সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অপরিহার্য, যেন আমরা সঠিকভাবে তা আদায় করতে পারি এবং ঈদের আনন্দে সকলের সাথে একত্রে অংশ নিতে পারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।