ধর্ম ডেস্ক : ঈদুল ফিতরের ফিতরা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত, যা ঈদের আগে বিতরণ করা আবশ্যক। এটি মূলত গরীব ও দুঃস্থদের জন্য একটি সাহায্য যা ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই ঈদুল ফিতরের ফিতরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং এটি রোজার পূর্ণতা দান করে বলে বিবেচিত হয়।
Table of Contents
ঈদুল ফিতরের ফিতরার ইসলামিক গুরুত্ব ও বিধান
ঈদুল ফিতরের ফিতরা ইসলামি শরিয়াতে ‘সাদাকাতুল ফিতর’ নামে পরিচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ফিতরাকে ফরজ করে দিয়েছেন প্রতিটি মুসলমান পুরুষ-মহিলা, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কের ওপর যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক। এর উদ্দেশ্য হলো রোজার সময়ে কারো কোনো গোপন ভুল-ত্রুটি, অনুচিত কথা বা কাজ হয়ে থাকলে তা সংশোধন করা এবং ঈদের আনন্দে দরিদ্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফিতরা রোজাদারের জন্য একটি পবিত্রতা এবং গরীবদের আহারের ব্যবস্থা।’ (আবু দাউদ)” এটি প্রমাণ করে ফিতরার সামাজিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য কতটা গভীর।
ঈদুল ফিতরের ফিতরার ইতিহাস ও বিবর্তন
ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই ফিতরা আদায়ের রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে। তখন ফিতরা খেজুর, যব, কিশমিশ, পনির ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে প্রদান করা হতো। এখনকার যুগে স্থান ও সময়ের প্রেক্ষিতে খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করাও গ্রহণযোগ্য। এটি ইসলামী শরিয়াহর নমনীয়তা ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন হারে ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ ভিন্ন হয়, তবে মূল উদ্দেশ্য থাকে দরিদ্রের মুখে ঈদের হাসি ফোটানো। ঈদুল ফিতরের ফিতরা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং এটি সামাজিক দায়িত্ববোধেরও প্রতিচ্ছবি।
ফিতরা প্রদানের সময় ও নিয়ম
ফিতরা আদায়ের সর্বোত্তম সময় হলো ঈদের নামাজের আগে। কেউ যদি নামাজের পরে দেয়, তবে এটি সাদাকা হিসেবে বিবেচিত হবে কিন্তু ফিতরার সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এটি পবিত্র রমজানের শেষ দিকেই আদায় করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, যাতে গরীবরা ঈদের প্রস্তুতি নিতে পারে।
ফিতরা প্রদান করতে হলে একজন মুসলিমকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় খরচ বাদে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে। প্রতি ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত পরিমাণ হিসাব করে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের পক্ষে ফিতরা প্রদান করা উচিত।
কাদের দেওয়া যায় ফিতরা?
ফিতরা প্রদানের জন্য ইসলাম নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষদেরকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: গরীব, মিসকীন, ঋণগ্রস্ত, মুজাহিদ, মুসাফির এবং যারা আল্লাহর পথে কাজ করছে। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল, তাদেরকে ফিতরা দেওয়া উত্তম। তবে পিতামাতা, সন্তান এবং স্ত্রীর পক্ষে ফিতরা দেওয়া বৈধ নয়।
বর্তমান বাংলাদেশে ফিতরার হার ও প্রাসঙ্গিকতা
বাংলাদেশে প্রতি বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ফিতরার হার নির্ধারণ করে। এটি সাধারণত চাল, গম, খেজুর ইত্যাদির মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছর ফিতরার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০০ টাকা পর্যন্ত, যা অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করা যাবে।
বর্তমান সময়ে ঈদুল ফিতরের ফিতরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে যা সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ফিতরা আদায়ের আধুনিক মাধ্যম
বর্তমানে ফিতরা আদায়ের পদ্ধতিও আধুনিক হয়েছে। মোবাইল ফিনান্স সার্ভিস যেমন বিকাশ, রকেট, নগদ এর মাধ্যমে ফিতরা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। অনেক সংস্থা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ফিতরা গ্রহণ করছে, যার মাধ্যমে খুব সহজে এবং নির্ভরযোগ্যভাবে তা বিতরণ করা যায়।
FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী)
- ফিতরা কী সবার জন্য ফরজ?
না, শুধুমাত্র সেই মুসলমানের জন্য ফরজ যার কাছে ঈদের দিনে নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। - ঈদের নামাজের পর ফিতরা দিলে কি হবে?
তবে তা সাধারণ সাদাকা হিসেবে ধরা হবে, ফিতরার মূল সাওয়াব পাওয়া যাবে না। - ফিতরার পরিমাণ কত?
এটি খাদ্যদ্রব্য বা অর্থের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং প্রতিটি দেশের জন্য ভিন্ন। - নিজের পরিবারের সদস্যদের পক্ষে ফিতরা দেওয়া যায় কি?
হ্যাঁ, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের পক্ষে ফিতরা দেওয়া উচিত।
ঈদুল ফিতরের ফিতরা ইসলামে শুধুমাত্র একটি আর্থিক ইবাদত নয়, বরং এটি মানবিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য নিদর্শন। এর মাধ্যমে রোজার পূর্ণতা অর্জিত হয় এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সময়মতো ফিতরা আদায় করে ঈদের আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।