ঈদুল আজহা কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের মহিমা উদযাপনের একটি পবিত্র দিন। এই সময়ে লক্ষ লক্ষ পশু কোরবানি দেওয়া হয়, যার চামড়া থেকে একটি বড় অর্থনৈতিক চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চামড়ার বাজার ঘিরে প্রতিবছর গড়ে ওঠে নানা অসাধু সিন্ডিকেট ও দালালচক্র, যারা নানা ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে এই ধর্মীয় উৎসবের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
Table of Contents
ঈদুল আজহা চামড়া বাজার: অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও বাস্তবতা
বাংলাদেশে কোরবানির পশুর চামড়া লেদার শিল্পের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বছরে চামড়া সংগ্রহের বড় অংশ আসে ঈদুল আজহার সময়। এই সময়ে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয় যা পুরো বছরের প্রক্রিয়াজাতকরণে কাজে লাগে।
কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো—এই চামড়া সংগ্রহে বিশৃঙ্খলা ও সিন্ডিকেটের কারসাজি বাজারে ধস নামায়। দাম নির্ধারিত থাকার পরও বিভিন্ন স্থানে নামমাত্র মূল্যে চামড়া সংগ্রহ হয়, যা মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য বরাদ্দকৃত আয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চামড়া নিয়ে চক্রের অপকর্ম বছরের পর বছর চলছেই।
সিন্ডিকেটের কৌশল ও জনগণের দুর্ভোগ
এই চক্রগুলো কোরবানির দিন সকাল থেকেই মাঠে নামে। তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অল্প দামে চামড়া কিনে নেয়, কখনো কখনো মাদ্রাসা বা দরিদ্র পরিবারের দানকৃত চামড়া জোর করে নিয়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে এই প্রতারণা বেশি হয়, যেখানে মানুষ বাজারমূল্য বা সরকারের নির্ধারিত মূল্য জানে না।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, কিছু এলাকায় চামড়া নেওয়ার পর সঠিক সংরক্ষণ না হওয়ায় তা নষ্ট হয়ে যায়, যা পুরো শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সরকারি নজরদারি ও আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা
প্রতি বছর সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে এবং চক্র দমনে নজরদারি চালানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেই ঘোষণা কতটা কার্যকর হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়।
অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও মাঠ পর্যায়ে তাদের তৎপরতা দুর্বল থাকে। ফলে দালালচক্র অবাধে কাজ করে যেতে পারে।
চামড়ার দাম ও বাজার নিয়ন্ত্রণ: সুশাসনের অভাব
চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হলেও অনেকেই সেই দাম পান না। ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা মূল দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেন।
বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদ্রাসা যাদের কোরবানির চামড়ার ওপর অনেকখানি নির্ভরশীলতা থাকে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঈদুল আজহা চামড়া বাজার যেন আর এক মহা দুর্নীতির উৎসব না হয়ে দাঁড়ায়, সে জন্য দরকার প্রযুক্তি ও ট্রান্সপারেন্সির ব্যবহার।
FAQs
- ঈদের সময় চামড়ার সমস্যা কেন হয়?
সিন্ডিকেট, দালাল ও সংরক্ষণের অভাবে সমস্যা বাড়ে। - চামড়ার প্রকৃত দাম কেন পাওয়া যায় না?
ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা কম দামে কিনে লাভবান হয়। - সরকার কী পদক্ষেপ নেয়?
মূল্য নির্ধারণ ও আইন প্রয়োগের নির্দেশনা দেয়। - সমাধান কীভাবে সম্ভব?
সচেতনতা, ট্রান্সপারেন্ট লেনদেন ও প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি। - মাদ্রাসাগুলোর কী ক্ষতি হয়?
চামড়ার বিক্রয় থেকে তারা যে সহায়তা পেত, তা কমে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।