ধর্ম ডেস্ক : ঈদুল আজহার মূল আকর্ষণ হলো কোরবানি। মুসলিম সমাজে এই কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সম্পন্ন করা হয়। তবে কোরবানিতে শরিক হওয়া বা অংশগ্রহণের নিয়ম অনেকের কাছেই অস্পষ্ট থাকে। এর ফলে অনেক সময় ভুল ধারণা ও অনভিপ্রেত বিতর্ক তৈরি হয়। এই প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করব কোরবানিতে শরিক হওয়ার সঠিক নিয়ম, ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি, এবং সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল ব্যাখ্যার বিষয়।
Table of Contents
ঈদুল আজহার কোরবানিতে শরিক হওয়ার ইসলামী নিয়ম
কোরবানিতে শরিক হওয়া বা একাধিক ব্যক্তি মিলে একটি বড় পশু (গরু বা উট) কোরবানি করা ইসলামে অনুমোদিত। হাদিসে বর্ণিত আছে, “সাতজন পর্যন্ত ব্যক্তি একটি গরু বা উট কোরবানি করতে পারে এবং প্রত্যেকের নিয়ত হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।” ঈদুল আজহার কোরবানিতে শরিক হওয়ার নিয়ম খুবই স্পষ্ট: প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে মুসলমান হতে হবে, তার নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে এবং অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করতে হবে।
শরিকের সংখ্যা সাতের বেশি হওয়া যাবে না। কেউ কেউ মনে করেন কম অংশগ্রহণকারী থাকলে সেটি অধিক ফজিলতের, কিন্তু ইসলামিক শরীয়তে এর কোনও অতিরিক্ত ফজিলত উল্লেখ নেই। এটি নিছক একটি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
শরিক হওয়ার প্রক্রিয়া এবং বণ্টনের ন্যায়বিচার
কোরবানিতে শরিক হওয়ার ক্ষেত্রে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পশু কেনার সময় সবার অংশ স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা এবং প্রত্যেকের আর্থিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পশুটি কেনা এবং কোরবানি করতে হয়।
কোরবানির পর পশুর মাংস বণ্টন করতে হবে সমানভাবে। যদি কারো ভাগে বেশি মাংস যায় এবং অন্য কেউ কম পায়, তবে এটি শরিয়ত সম্মত নয়। ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে প্রতিটি শরিককে সমান ভাগ দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, একটি পরিবারের একাধিক সদস্য একটি পশুতে শরিক হন, কিন্তু পরবর্তীতে একজন বা একাধিক সদস্য পুরো মাংস নিয়ে নেন। এটি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অনুচিত।
যারা শরিক হন, তাদের প্রত্যেকের নিয়ত হতে হবে ইবাদতের উদ্দেশ্যে। শুধুমাত্র মাংস পাওয়ার জন্য শরিক হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।
ভুল ধারণা ও সাধারণ বিভ্রান্তি
মুসলিম সমাজে কোরবানিতে শরিক হওয়া নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন, কেউ কেউ মনে করেন এক পরিবারের সদস্যরা একাধিক পশুতে শরিক হতে পারবেন না। অথচ, শরিয়তে এর কোনও বাধা নেই। আরও একটি ভুল ধারণা হলো, যে ব্যক্তি নিজে কোরবানি দিচ্ছেন না, সে অন্যের সঙ্গে শরিক হতে পারবে না—এটিও ভুল। কোরবানি দিতে ইচ্ছুক ও সক্ষম ব্যক্তি শরিক হতে পারে, এতে কোনো বাধা নেই।
অনেক সময় শোনা যায়, নারীরা কোরবানিতে শরিক হতে পারবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন। নারী-পুরুষ উভয়ই ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী কোরবানিতে অংশ নিতে পারে। বিস্তারিত তথ্য জানতে পড়ুন নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রতিবেদন।
আধুনিক বাস্তবতা ও দায়িত্বশীল শরিক হওয়া
আজকের প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে শহুরে এলাকায় একা একটি গরু কোরবানি করা অনেকের জন্য সম্ভব হয় না। ফলে শরিক হওয়া একটি বাস্তব সমাধান। তবে এতে দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি। অর্থ প্রদানে স্বচ্ছতা রাখা, মাংস বণ্টনে সতর্ক থাকা এবং অন্যের অংশের প্রতি সম্মান দেখানো শরিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বর্তমানে কোরবানিতে শরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এখানে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারি বা যাচাইকৃত ইসলামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকা ভালো। যেমন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে।
ঈদুল আজহার কোরবানিতে শরিক হওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে অনুসরণ করলে কেবল একটি ইবাদত পূর্ণতা পায় না, বরং মুসলিম সমাজে সম্প্রীতি ও সহানুভূতিরও উদাহরণ সৃষ্টি হয়।
FAQs
- একটি গরুতে সর্বোচ্চ কতজন শরিক হতে পারে?
সর্বোচ্চ সাতজন ব্যক্তি একটি গরু বা উটে শরিক হতে পারে। - নারীরা কি কোরবানিতে শরিক হতে পারে?
হ্যাঁ, ইসলামি বিধান অনুযায়ী নারীরাও শরিক হতে পারে। - শরিকদের জন্য সমান মাংস বণ্টন কি বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ, শরিকদের জন্য সমানভাবে মাংস বণ্টন শরিয়ত অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। - শরিক হওয়ার জন্য লিখিত চুক্তি জরুরি কি?
যদিও ইসলামে মৌখিক চুক্তিও গ্রহণযোগ্য, তবুও বিভ্রান্তি এড়াতে লিখিত রাখা উত্তম।
- অনলাইন শরিক কোরবানিতে অংশ নেওয়া নিরাপদ?
বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে অংশ নিলে সাধারণত নিরাপদ। তবে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।