ধর্ম ডেস্ক : মুসলমানদের বৃহত্তম একটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের দিন আনন্দের অন্যতম একটি উপকরণ হলো, সদকাতুল ফিতর। সদকাতুল ফিতর অর্থ হলো, ঈদুল ফিতরের সদকা। বাংলাদেশে তা ফিতরা হিসেবেই পরিচিত। দীর্ঘ এক মাস সিয়ামসাধনার পর ঈদের দিন ধনী, গরিব সবাই যৌথভাবে আনন্দে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে এই ফিতরা প্রদানের ব্যবস্থা ইসলাম প্রবর্তন করেছে। এ ছাড়া রোজা পালনে যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকে তা ফিতরার মাধ্যমে পরিশোধন ও পরিমার্জনের ব্যবস্থা হয়ে যায়।
ইবনে আব্বাস (র.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) রোজাদারদের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন, যা তাদের অনর্থক কাজ ও অশ্লীল কথা পরিশুদ্ধকারী এবং দরিদ্র মানুষের জন্য আহারের সহায়ক হয়। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে তা আদায় করবে এটা ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পর আদায় করবে তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে (আবু দাউদ)।’
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় যে স্বাধীন মুসলিমের মালিকানায় প্রয়োজনাতিরিক্ত ও ঋণমুক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তার ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নেসাবের পরিমাণ হলো, সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে সাত তোলা রৌপ্য অথবা সাড়ে সাত তোলা রৌপ্য সমপরিমাণ সম্পদ। ফিতরা নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের অধীনস্থ, যেমন মা-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করা আবশ্যক। যারা রোজা পালনে অক্ষম এবং কখনো সক্ষমতার সম্ভাবনা রাখে না তাদেরও প্রতিটা রোজার জন্য একটি ফিতরা পরিমাণ আদায় করতে হবে।
ফিতরা বিষয়ে রসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সারমর্ম হলো, যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ও গম-আটা এই পাঁচটি বস্তুকে ফিতরা আদায়ের জন্য পরিমাপ হিসেবে তিনি ধার্য করেছেন। যব, কিশমিশ, খেজুর, পনিরের পরিমাপ অর্ধ সা’ (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) এবং গম-আটার পরিমাপ এক সা’ (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন।’ (বুখারি, মুসলিম) এই পাঁচটি বস্তুর যেকোনো একটি দ্বারা বা এর যেকোনো একটির মূল্য সমপরিমাণ দ্বারা ফিতরা আদায় করা যাবে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যমান, সর্বনিম্ন মূল্যমান বা যেকোনো একটি বস্তুকে ফিতরা আদায়ের পরিমাপ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে।
তবে প্রতিটি মুসলমানের জন্য উচিত হলো, নিজ নিজ সাধ্যসামর্থ্য অনুযায়ী বস্তু বা এর মূল্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এ বছর ১৪৪৬ হিজরি ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন (আটা ও গমের মূল্য হিসেবে) ১১০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এই ফিতরার পরিমাণ যবের মূল্য হিসেবে হবে ৫৩০ টাকা, কিশমিশের মূল্য হিসেবে হবে ১৯৮০ টাকা, খেজুরের মূল্য হিসেবে হবে ২৩১০ টাকা এবং পনিরের মূল্য হিসেবে ফিতরার হার হবে ২৮০৫ টাকা।
রসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের মতানুসারে হাদিসে উল্লিখিত বস্তু দ্বারা যেভাবে ফিতরা আদায় করা যাবে, এগুলোর সমমূল্য প্রদান করা হলেও ফিতরা আদায় হবে।
বরং মানুষের জন্য সহজ এবং তাদের প্রয়োজন সমাধানের জন্য অনেক ক্ষেত্রে মূল্য প্রদান করা আরও শ্রেষ্ঠতম বলে বিবেচিত হয়। অসহায় লোকজনের সব ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য প্রয়োজন হয় না। তারা টাকা হলে খাদ্যদ্রব্য অথবা অন্য যেকোনো প্রয়োজনীয় জিনিস সহজে ক্রয় করতে পারে। অনেক সময় তারা খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করে থাকে। যার ফলে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের জন্য যা সহজ সাধ্য হয় সেদিকে চিন্তা করা ইসলামি ফিকহের একটি মূল ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা। ফিতরা বা জাকাত হিসেবে মূল্য বা টাকা প্রদান করা হলে দাতা-গ্রহীতা উভয়ের জন্য সহজ। অতএব উল্লিখিত কোনো বস্তুর সমপরিমাণ টাকার মাধ্যমে ফিতরা আদায় করা উত্তম হিসেবে গণ্য হবে।
মূল্য আদায় করা যাবে না এমন কোনো সুস্পষ্ট দলিলপ্রমাণ নেই। হাদিসে যেসব বস্তুকে মানদণ্ড নির্ণয় করা হয়েছে এগুলোর মূল্য আদায় করা যাবে না তা-ও কোনো হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিদিন সকালের কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস, যা আপনার সুখ কেড়ে নিচ্ছে
বরং সুস্পষ্ট দলিলপ্রমাণের ভিত্তিতে বিজ্ঞ গবেষকদের মতামত হলো, হাদিসে উল্লিখিত বস্তু অথবা এগুলোর সমমূল্য আদায় করা, উভয় পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা যাবে। যা ইমাম বুখারি, উমর ইবনে আবদুল আজিজ, হাসান বসরী এবং আরবের প্রখ্যাত গবেষক ইবনে তাইমিয়া, ইউসুফ আল কারযায়ী ও নাসিরুদ্দিন আলবানির মতামত। (ফাতহুল বারী-৩/৩৯৮, মাজমুউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২৫/৭৯-৮২, ফাতাওয়া আলবানি- ১/২৮৪, বাদাইউস সানায়ী-২/৭২)
জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত গরিব মিসকিনকে ফিতরা প্রদান করতে হবে। একাধিক ব্যক্তির ফিতরা একজনকে এবং একজনকে কয়েক ব্যক্তির ফিতরা দেওয়া যাবে।
লেখক : মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।