জুমবাংলা ডেস্ক : স্বল্প আয়ের মানুষের সুবিধার্থে সরকার তার বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের প্রচলন করে। যাতে সহজেই ভোজ্য তেল, ডাল, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য ন্যায্যমূল্যে পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু এক পরিবারে একটি ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তিকে এই কার্ড দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সচ্ছল পরিবারের সদস্যরাও এই কার্ড পেয়েছেন। এতে সত্যিকারের স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারের এ উদ্যোগ থেকে। এছাড়া, যে ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য দেওয়া হয়, তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
সম্প্রতি ফ্যামিলি কার্ডগুলোকে স্মার্টকার্ডে রূপান্তরে তথ্য হালনাগাদ করার জন্য টিসিবির পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে চার বার চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হলেও হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। এতে বিপাকে পড়েছে টিসিবি। বর্তমানে সরকারের বিপণন সংস্থাটির ফ্যামিলি কার্ডের সংখ্যা ১ কোটি। এর মধ্যে ৫৭ লাখ স্মার্টকার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। বাকি ৪৩ লাখ স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৪৩ লাখ ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে সব না হলেও একটি বড় অংশই একাধিক কার্ড রয়েছে। দেখা গেছে, একই ব্যক্তি রাজধানী ঢাকা থেকেও কার্ড নিয়েছে, আবার সেই ব্যক্তি তার গ্রামের বাড়ির এলাকা থেকেও কার্ড নিয়েছে। আবার এমনও হয়েছে, কোনো পরিবারে স্বামী হয়তো ঢাকা থেকে কার্ড নিয়েছে, আর তার স্ত্রী এলাকার ঠিকানায় কার্ড নিয়েছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, এক পরিবারে একটিই কার্ড পাবে।
টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, এক পরিবারে একের অধিক কার্ড দেওয়ার সুযোগ নেই। আর কার্ড দেওয়ার দায়িত্বে টিসিবি ছিল না। এই উপকারভোগীদের নির্বাচনের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল। তাদের থেকে স্থানীয় পর্যায়ের ইউএনও অফিসের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কার্ডগুলো করা হয়েছে। নির্দেশনা ছিল, অসচ্ছল ব্যক্তিদেরকে দেওয়ার। কেউ যদি নির্দেশনা অমান্য করে, তবে অবশ্যই আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম দূর করার জন্য তথ্য হালনাগাদ করে স্মার্টকার্ড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে এক পরিবারে এক ব্যক্তির বেশি কেউ কার্ড না পান। গতকাল শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদসম্মেলনে তিনি বলেন, ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫৭ লাখ স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাকি ৪৩ লাখ কার্ড তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছি। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে ৪৩ লাখ উপকারভোগীর হালনাগাদ তথ্য দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে চার দফা পত্র প্রেরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা এখনো তথ্যগুলো পাইনি। তবে পুরোনো কার্ডেই পরিবারগুলোর কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।’
ডিলারদের অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কোনো জায়গায় যাতে শূন্যতা সৃষ্টি না হয়, এজন্য নতুন আবেদনপত্র প্রসেস করা হচ্ছে। এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ডিলার নিয়োগের গাইড লাইন/পলিসি রিভিউ করা হচ্ছে।
বর্তমানে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ না থাকায় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেক মানুষ পণ্য পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতিদিন একটি ট্রাকে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য বরাদ্দ থাকে। পরিবেশকদের বলা হয়েছে, ৩৫০টি টোকেন দেওয়ার জন্য। এর বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। যারা টোকেন পাবেন না, তারা পরের দিন এসে পণ্য নিতে পারবেন। উল্লেখ্য, প্রতি মাসে টিসিবি ২০ হাজার টন মসুর ডাল, ২ কোটি লিটার ভোজ্য তেল, ১০ হাজার টন চিনি বিক্রি করে। এছাড়া, প্রতি বছর পবিত্র রমজানের সময় ১০ হাজার টন ছোলা ও দেড় হাজার টন খেজুর বিক্রি করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।