স্পোর্টস ডেস্ক: শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্র। কাতারের দোহা এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশনে ২০২২ কাতার ফিফা বিশ্বকাপের এই ড্র সম্পন্ন হয়।
অংশগ্রহণকরী ৩২ দলের মধ্যে স্বাগতিক কাতারসহ ২৯ দল নিশ্চিত আগেই হয়েছে। যে তিনটি দল বাকি রয়েছে সেগুলো নির্ধারিত হবে দুটি আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের জয়ী এবং ইউরোপিয়ান প্লে-অফের জয়ী দল দিয়ে।
সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ও স্পেন একই গ্রুপে পড়াতে গ্রুপ-ই‘কেই ডেথ গ্রুপ হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। কোয়ার্টার ফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা হতে পারে ইংল্যান্ড ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের।
বিশ্বকাপে স্বাগতিক দেশ হিসেবে কাতার ‘এ’ গ্রুপের এক নম্বর দল আগেই ঠিক করা ছিল। পরে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হচ্ছে কোন গ্রুপে কোন দেশ পড়বে। এবারের ড্রতে মার্চের সর্বশেষ ফিফা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী চারটি পটে রাখা হয় দলগুলোকে। যেখানে স্বাগতিক কাতারের সঙ্গে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ সাতটি দলকে রাখা হয় এক নম্বর পটে। ক্রমান্বয়ে র্যাঙ্কিংয়ের পরের আটটি দল পট-২ এ, পরের আটটি পট-৩ এ।
এদিকে এক গ্রুপে একই মহাদেশের একাধিক দল থাকার কোন বিধান নেই, ব্যতিক্রম কেবল ইউরোপ। তবে কোনো গ্রুপে তাদেরও দুটির বেশি দল না থাকার নিয়ম রয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের বাকি থাকা প্লে-অফের ম্যাচগুলো স্থগিত রয়েছে। আগামী জুনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে ইউক্রেন। এই ম্যাচের জয়ী দল চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করতে মুখোমুখি হবে ওয়েলসের।
১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথমবারের মত ফ্রান্সের সামনে সুযোগ রয়েছে পরপর দুই বছর বিশ্বকাপ জয়ের। গ্রুপ-ডি’তে তাদের প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক, তিউনিশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া, পেরু ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার প্লে-অফের বিজয়ী দল।
গ্রুপ-এ : কাতার, ইকুয়েডর, সেনেগাল, নেদারল্যান্ড
বিশ্বের ৫১তম র্যাঙ্কধারী কাতার এই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু স্বাগতিক হিসেবে শীর্ষ সারির দলগুলোর সাথে গ্রুপ সিডিংয়ে তারা জায়গা করে নিয়েছে। স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স সানচেজের অধীনে কাতারের এবারের দলটি নিয়ে স্বাগতিক সমর্থকরা দারুন আশাবাদী। কাতারকে স্বাগতিক হিসেবে সুযোগ দেবার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সমালোচনা করেছিলেন নেদারল্যান্ডের কোচ লুইস ফন গাল। গ্রুপ পর্বে সেই কাতারকেই মোকাবেলা করতে হচ্ছে ফন গালের শিষ্যদের। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে খেলতে না পারার কষ্টটাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় ডাচরা। সাদিও মানের সেনেগাল প্রথমবারের মত আফ্রিকান নেশন্স কাপের শিরোপা ঘরে তোলার পর দারুন উজ্জীবিত অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে এ নিয়ে চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপে খেলছে ইকুয়েডর।
গ্রুপ-বি : ইংল্যান্ড, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয়ান প্লে-অফ বিজয়ী
বিশ্বকাপের এবারের গ্রুপিং নিয়ে একদিক থেকে সন্তুষ্ট হতে পারে ইংল্যান্ড। কারন গ্রুপ পর্বে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে ভূ-রাজনৈতিক দুই প্রতিপক্ষ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রকে। ক্রোয়েশিয়ান কোচ ড্রাগান স্কোচিচের অধীনে ইরান বাছাইপর্বে গ্রুপের শীর্ষে থেকে কাতারের টিকিট পেয়েছে। সম্প্রতি নিয়মিত বিরতিতে বেশ কিছু টুর্নামেন্টে তারা অংশ নিয়েছে। ঘরের কাছের দেশে খেলার সুবিধাটা তারা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে ফলাফল ভাল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চেলসি তারকা ক্রিস্টিয়ান পুলিসিচের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে দারুন আত্মবিশ্বাসী যুক্তরাষ্ট্র। জুনে ইউরোপীয়ান প্লে-অফ থেকে ওয়েলস কিংবা স্কটল্যান্ডের মধ্যে যেকোন একটি দল জয়ী হলে ইংল্যান্ড তাদের স্থানীয় দলকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে। তবে এক্ষেত্রে ইউক্রেনও শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
গ্রুপ-সি : আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, মেক্সিকো ও পোল্যান্ড
এই গ্রুপে মাঠের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও পোল্যান্ডের দুই তারকা লিওনেল মেসি ও রবার্ট লিওনোদোস্কি। গত বছর কোপা আমেরিকা জয়েল পর আর্জেন্টিনাকে কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট দল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর নিশ্চিতভাবে এটাই মেসির সামনে বিশ্বকাপ জয়ের শেষ সুযোগ। ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে খেলেছিল পোল্যান্ড। মেক্সিকোর উপস্থিতিতে শেষ ১৬‘তে তাদের পৌঁছানো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। গত সাতটি টুর্নামেন্টেই মেক্সিকো নকআউট পর্বে খেলেছে। আর্জেন্টাইন কোচ জেরার্ডো মার্টিনোর অধীনে মেক্সিকানরা বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছে। শীর্ষ সারির র্যাাঙ্কিংয়ের বাইরে থাকা সৌদি আরব ফরাসী কোচ হার্ভ রেনার্ডের অধীনে নিজেদের বেশ ভালই প্রস্তুত করে তুলেছে।
গ্রুপ-ডি : ফ্রান্স, প্লে-অফ বিজয়ী, ডেনমার্ক, তিউনিশিয়া
১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পথে গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে ডেনামার্ককে পেয়েছিল ফ্রান্স। ২০০২ সালেও ড্যানিশদের সাথে একই গ্রুপে থাকলেও সে বছর লেস ব্লুজরা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। ইউরো ২০২০’র সেমিফাইনাল খেলা বিশ্বের ১১ নম্বও র্যাঙ্কধারী ডেনমার্ক এবার ফ্রান্সের শিরোপা ধরে রাখার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০১৮ সালে গ্রুপ পর্বে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকা পেরু ও অস্ট্রেলিয়া এখনো আন্ত:মহাদেশীয় প্লে-অফে টিকে রয়েছে। তিউনিশিয়ায় বেশ কিছু ফরাসী বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় থাকায় তাদের নিয়েও প্রতিপক্ষ দলগুলোর মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।
গ্রুপ-ই : স্পেন, প্লেÑঅফ বিজয়ী, জার্মানি, জাপান
আগামী ২৭ নভেম্বর গ্রুপ পর্বে স্পেন ও জার্মানীর মধ্যকার ম্যাচটি হয়ে উঠতে পারে গ্রুপ পর্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচ। এই ম্যাচের ফলাফলের উপরই নির্ভর করবে সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মধ্যে গ্রুপ সেরা কে হচ্ছে। এই গ্রুপের বিজয়ী দলটির সাথে কোয়ার্টার ফাইনালে সম্ভাব্য দল হিসেবে দেখা যেতে পারে ব্রাজিলকে। এশিয়ান পরাশক্তি জাপান এই কাতারেই ২০১১ সালে এশিয়ান কাপ জয় করেছিল। গ্রুপের বাকি দলটি কোস্টা রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার বিজয়ী দল হিসেবে নির্ধারিত হবে।
গ্রুপ-এফ : বেলজিয়াম, কানাডা, মরক্কো, ক্রোয়েশিয়া
২০১৮ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান লাভ করা বেলজিয়াম সর্বশেষ র্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিলের কাছে তাদের শীর্ষস্থানটি হারিয়েছে। কেভিন ডি ব্রুইনা, রোমেলু লুকাকু, থিবাট কুর্তোয়াদের মত তারকাদের নিয়ে সাজানো বেলজিয়াম দলটিকে নিয়ে এবারও সবাই দারুন আশাবাদী। গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবেই তাদেরকেই ধরে নেয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ লুকা মড্রিচ থাকা সত্তেও গত আসরের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে ততটা আশা কেউই করছে না।
মরক্কোর পুরো দলটি ইউরোপীয়ান ভিত্তিক খেলোয়াড়দের নিয়ে সাজানো। যার মধ্যে রয়েছেন পিএসজির আর্চাফ হাকিমি। ইংলিশ কোচ জন হার্ডম্যানের অধীনে কানাডা ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে। কনকাকাফ অঞ্চলের বাছাইপর্বে তারা শীর্ষস্থান লাভ করেছিল।
গ্রুপ-জি : ব্রাজিল, সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড, ক্যামেরুন
চার বছল আগে গ্রুপ পর্বে এই সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডকেই পেয়েছিল ব্রাজিল। ড্রয়ের পর তিতে জানিয়েছেন ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ই এখন তাদের মূল লক্ষ্য। ৩০ বছর বয়সী নেইমারের ওপর নির্ভর করছে ব্রাজিল কতটা চাপ সামলে উঠতে পারে। র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানে থেকে কাতারের মাঠে খেলতে নামাটাও ব্রাজিলের জন্য বাড়তি পাওয়া। ইউরো ২০২০’র কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা সুইজারল্যান্ড ব্রাজিলের সাথে পরের রাউন্ডে ওঠার ক্ষেত্রে ফেবারিট। গত আসওে খেলতে না পারা ক্যামেরুন এবার বিশ্বকাপে ফিরে এসে নিজেদের প্রমান করতে চায়।
গ্রুপ-এইচ : পর্তুগাল, ঘানা, উরুগুয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া
৩৮ বছরে পা রাখতে যাওয়া ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জন্য এটাই বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার শেষ সুযোগ। রোনাল্ডো ছাড়াও অবশ্য পর্তুগালে তারকার অভাব নেই। ২০১৮ সালে শেষ ১৬‘তে উরুগুয়ের বিপক্ষে হারের প্রতিশোধ নিতে চায় পর্তুগাল। উরুগুয়ের অবশ্য ৩৫ বছর বয়সী অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজের উপর মূল ভরসা করছে। পর্তুগীজ কোচ পাওলো বেনটোর অধীনে দক্ষিন কোরিয়াও বেশ শক্তিশালী দল নিয়েই কাতারে যাচ্ছে। ২০১০ সালের সেই উজ্জীবিত ঘানা দলকে এবার আর না পাবার সম্ভাবনাই বেশী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।