জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের যুব সমাজ যেভাবে মাদকের দিকে ঝুঁকছে, তাতে করে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরেই দেশ মাদকের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। একমাত্র দেশের আলেম সমাজই পারেন প্রচারণার মাধ্যমে মাদকসেবীর সংখ্যা কমাতে।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ একথা বলেন।
মাদানী মজলিশ বাংলাদেশ আয়োজিত দেশ ও জাতির কল্যাণে: ‘মাদকতার কুফল ও প্রতিকার‘ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান। এসময় ‘মাদকতার কুফল ও প্রতিকার’ শিরোনামে গবেষণা-প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং ‘মদ ও মাদকতা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমি তেমন একটা ভাবি না। তবে ইয়াবা নিয়ে বেশ চিন্তিত। কারণ মাদকের মধ্যে অন্যতম নেশা ইয়াবা বর্তমানে কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। শহর গ্রাম অলিগলি সবখানেই ইয়াবা মেলে। তাই ইয়াবা ও মাদক গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে আলেমদের পাশাপাশি অবশ্যই পরিবারের অভিভাবকদেরও বিশেষ সময় দিতে হবে।
সেমিনারে আন্তর্জাতিক আলোচক হিসেবে আওলাদে রাসুল (সাঃ) সায়্যিদ আফফান মানসুরপুরী বলেন, ইসলামের প্রথম যুগে মদ ধাপে ধাপে হারাম করা হয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দিদের মধ্যে ২৫ ভাগ মাদকাসক্ত। সমাজের অপরাধের একটি বড় অংশই মাদকাসক্ত বা মাদক সংশ্লিষ্ট। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলার আসামিরা কারাগারে অতি কম সময় অবস্থান করেন ও মাদক মামলায় বারবার কারাগারে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তিনি এই প্রথমবারের মতো আলেম সমাজকে মাদক নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সেমিনারের প্রধান আলোচক মাদানী মজলিস বাংলাদেশ’র সভাপতি শায়খ মুফতি হাফীজুদ্দীন মাঠ পর্যায়ে মাদকের বিস্তার রোধে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবীগুলো হচ্ছে ইমাম-খতিবগণ, জন-প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে সরকারি কমিশন গঠন করা। মাদকদ্রব্য উৎপাদন এবং চোরাচালানের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপে গ্রহণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখা। মদের নেশার সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচারে শরিয়া আইনকে প্রাধান্য দেয়া। অবৈধ বার এবং মাদকদ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা। বিদেশি অমুসলিম নাগরিকদের জন্য সরকারের লাইসেন্সধারী কোনো বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান শর্ত লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে মদ বিক্রি করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জব্দ হওয়া মাদকদ্রব্য জনসমক্ষে প্রকাশ্যে বিনষ্ট করা এবং আটক আসামিদের বিচারিক পদক্ষেপগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা। মাদকাসক্ত কয়েদিদের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য চিন্তাশীল আলেমদের পাক্ষিক কাউন্সিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মুফতি হাফিজউদ্দীন বলেন, মাদকের মতো ভয়াবহ ব্যাধি থেকে দেশবাসী এবং বিশেষত নতুন প্রজন্মকে রক্ষা ও মুক্ত রাখার জন্য সরকার, সুশীল সচেতন নাগরিক এবং আলেম-উলামা, ইমাম-খতীব ও ধর্মীয় ব্যক্তিবৃন্দের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে সুচিন্তিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মাঠপর্যায়ে কর্ম-তৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া’র ভাইস প্রিন্সিপাল শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল গাফফার, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক নদভী, কমান্ডার মাহবুবর রহমান (অব. নেভি), ক্যাপ্টেন (অব.) এস. এম. হেলাল, সিনিয়র সাংবাদিক মশিউর রহমান খান ও গোলাম দস্তগীর বাবু, আফতাবনগর ইদারাতুল উলূম’র প্রিন্সিপাল মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আলী প্রমূখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।