জুমবাংলা ডেস্ক : ৩-৪ বছর আগেও তাকে দেখা যেত বিদ্যুতের বিল বিতরণের কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে যেতে। আলাদিনের চেরাগের মতো হঠাৎ করেই গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে কোটিপতি বনে গেছেন অন্তর আহমেদ নামের এক বিদ্যুৎ বিল বিতরণকারী। কী করে অল্পসময়ের মধ্যে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন; সম্প্রতি এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর তাকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের।
তার ‘আলাদিনের চেরাগ’ কী জানতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তার বিরুদ্ধে সখীপুর পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) কয়েকজন উপসহকারী প্রকৌশলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অন্তর আহমেদের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর তিনি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি গ্রামের চানপুর এলাকায় নানার বাড়িতে থাকতেন। ২০০৪ সালে সখীপুরে এসে ভ্যানগাড়ি চালাতে শুরু করেন। পরে পৌর শহরের স্থানীয় মাজেদ পাশার প্রচার মাইকের শ্রমিকের কাজ নেন। এ কাজের সুবাদে সখীপুর বিদ্যুৎ বিভাগের বেসরকারি শ্রমিকদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
পরে অন্তর ভ্যান দিয়ে শ্রমিকদের বিদ্যুতের কাজে ব্যবহৃত মই টানার কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের সঙ্গে পরিচয় হলে গ্রামে গ্রামে বাসা-বাড়িতে বিদ্যুতের বিল বিতরণের কাজ নেন। দীর্ঘদিন এ কাজে থাকায় অফিসারদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। ফলে এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন, গ্রাহকের নতুন মিটার করে দেওয়া ও ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনের কাজে তদবির করে মোটা অংকের টাকা কামানো শুরু হলে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।
অন্তর বিদ্যুৎ অফিসের দালালি করে ঠিকাদারদের কাজ বাগিয়ে আনতে শুরু করেন। এ কাজে রাজনৈতিক প্রভাব লাগে; তখন তিনি ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় নেতার সঙ্গে ছবি তুলেন। দলীয় প্রভাব তৈরি করতে তিনি সখীপুরের এমপি, ভালুকার এমপি, বিদ্যুৎ বিভোগের বড় অফিসার, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপির সঙ্গে ছবি তোলে ফেসবুকে পোস্ট শুরু করেন। এসব ছবি এখন তার বাসায় বিলবোর্ড আকারে বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্তর আহমেদ নামের কোনো ব্যক্তির দলীয় পদ-পদবী নাই। তারা তাকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যা দেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সখীপুর পিডিবি অফিসে এক বড় সিন্ডিকেট তৈরি করে অর্থ কামানো শুরু করেন। শুরু করেন বদলি বাণিজ্য। কথা না শুনলে অপমান অপদস্থ করে প্রাণনাশের হুমকি দেন।
ইতোমধ্যে তার হুমকিতে উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম ও আঢ্যদাশ গুপ্ত অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সখীপুর থানায় জিডি করেছেন। একটি পক্ষের কাছ থেকে ঘুস নিয়ে এমপির ডিও লেটার এনে উপসহকারী প্রকৌশলী শামসুল আলম ও লাইনম্যান (এ) মিজানুর রহমান মুন্নাকে অন্যত্র বদলি করে দিয়েছেন।
তাদের পরিবর্তে আসাদের কাছ থেকেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়েছেন। এমপির ডিও লেটার, তার প্রাণনাশের হুমকিতে করা জিডির অনুলিপি কপি এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
পিডিবির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অন্তর আহমেদ যখন যেখানে যা পরিচয় দিলে তার সুবিধা হয় তাই দেন। কখনো বড় ঠিকাদার, কখনো দলের বড় নেতা, কথায় কথায় বদলির করার হুমকি, কাউকে এমপির ডিও (ডেমি অফিসিয়াল) লেটার এনে ভালো চাকরি ইত্যাদিই হচ্ছে তার কাজ।
বর্তমান সখীপুর পিডিবির (বিক্রয় ও বিতরণ) নির্বাহী প্রকৌশলীকে তিনি এমপির ডিও লেটার এনে এখানে পদায়ন করেছেন বলে বেড়াচ্ছেন। এ কারণে নির্বাহী প্রকৌশলী তার কথামতো ঠিকাদার নিয়োগ, ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন, সংযোগ লাইনসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। বিদ্যুৎ অফিসের তার, বিভিন্ন সরঞ্জমাদি তিনি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা কামান। এছাড়াও বিকল হওয়া ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনে তাকে দিতে হিয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা; যা বিনামূল্যে গ্রাহকরা পেয়ে থাকার কথা। ফলে বিদ্যুৎ অফিসটি এখন তার হাতের মুঠোয়। তদবির, বদলিসহ নানা কাজ করে তিনি এখন কোটিপতি হয়েছেন।
সম্প্রতি অন্তর ২৮ লাখ টাকা দামের একটি প্রাইভেট গাড়ি কিনেছেন। পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মাণ করেছে বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি। নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বিদ্যুৎ অফিসে তিনি এখন ‘অঘোষিত জমিদার’।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অন্তর আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সখীপুর পিডিবির (বিক্রয় ও বিতরণ) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার সঠিক নিয়মে সব কিছু চলছে জানিয়ে বলেন, একটি পক্ষ বিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।