কর পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

জুমবাংলা ডেস্ক : বকেয়া কর পরিশোধ না করায় বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো করদাতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের শহীদ রফিক সড়কের করদাতা বাদল চন্দ্র সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মের্সাস আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানে। বুধবার দুপুরে তার প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ঘটনা ঘটে। যা কর আইনে বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো আইন প্রয়োগ।

মানিকগঞ্জের উপ-কর কমিশনারের কার্যালয়ের সহকারী কর কমিশনার মো. ইশতিয়াক হোসেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শহিদ রফিক সড়কের মের্সাস আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কাজে অংশ নেয় মানিকগঞ্জের উচুটিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জোনাল অফিস। মানিকগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আব্দুর রশিদ এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

এদিকে ভুক্তভোগী বাদল চন্দ্র সাহার দাবি, আয়কর অফিসের বর্তমান অফিসার তাকে বকেয়া পরিশোধ করার ব্যাপারে সহযোগী না করাসহ আপিল করার সুযোগ দেননি।

যদিও তিনি স্বীকার করেছেন গত ৭ জুন তাকে সহকারী কর কমিশনার মো. ইশতিয়াক হোসেন এক চিঠিতে গত ১৮ জুনের মধ্যে বিগত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বকেয়া ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৮ টাকা পরিশোধের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। যা তিনি এখনো দেননি বলেও জানান।

ইশতিয়াক হোসেন জানান, ২০১৭-২০১৮ করবর্ষে বাদল চন্দ্র সাহার কাছে আয়কর বাবদ ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৮ টাকা বকেয়া পাওনা ছিল। ইতোমধ্যে বকেয়া পাওনা আদায়ে চার দফা তাগিদপত্র দেওয়া হলেও তিনি বকেয়া কর পরিশোধ করেননি। সর্বশেষ তার আমলে চলতি বছরের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ও ৭ জুন দুদফায় তাগিদপত্র দেওয়া হলেও তিনি বকেয়া কর পরিশোধ করেননি।

এর প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে গত ১৯ জুন সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ চিঠিতে মানিকগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মানিকগঞ্জ জোনাল অফিস বরাবরে আয়কর বকেয়া থাকা ব্যক্তি বাদল চন্দ্র সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অনুরোধপত্র দেওয়া হয়।

জাতীয় রাজস্ব আহরণের স্বার্থে সহকারী কর কমিশনার ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন, করদাতার কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৪৩(২)(সি) ধারা অনুসারে উল্লেখিত করদাতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এরই আলোকে মানিকগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আব্দুর রশিদ মৃধা সংস্থার আইন উপদেষ্টা এ কে এম কাইসারের কাছে আইনগত মতামত চেয়ে পরের দিন ২০ জুন চিঠি পাঠান।

এরপ্রেক্ষিতে এ কে এম কাইসার গত ২ জুলাই করদাতার কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের স্বার্থে উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পক্ষে মতামত দেন। এরই ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

কর বকেয়া থাকার অভিযোগে কোনো ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে জানান ভুক্তভোগী বাদল। এতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সহসা বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন না করলে তিনি লোকসানের মুখে পরবে বলে জানান।

এদিকে মানিকগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আব্দুর রশিদ মৃধা এই ঘটনাকে দেশের প্রথম বলে জানান। তিনি জানান, কর বকেয়ার অভিযোগে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি দেশেও কোথায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি।

অপরদিকে ইশতিয়াক হোসেন জানান, কোনো করদাতার কাছে বকেয়া আদায়ের জন্য একটি প্রথম ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। সূত্র : যুগান্তর।

ঢাকাসহ ১০ জেলায় নতুন ডিসি