আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান না বিশ্ব প্রযুক্তির মহারথী এবং টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্কের রূপান্তরিত মেয়ে। নিজের নাম-পরিচয় বদলানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আবেদন করেছেন সদ্য ১৮ তে পা দেওয়া জেভিয়ার মাস্ক। উল্লেখ্য জেভিয়ার সদ্যই ছেলে থেকে মেয়েতে রূপান্তরিত হয়েছেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নিজের নতুন ট্রান্সজেন্ডার লিঙ্গ পরিচয় ধারণের কথা উল্লেখ করে নাম পরিবর্তন ও নতুন জন্ম সনদের জন্য গত এপ্রিলে আবেদন করেছেন তিনি।
রয়টার্সের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসের আদালতে নিজের নতুন লিঙ্গপরিচয় উল্লেখ করে নাম পরিবর্তনের আবেদন করেছেন জেভিয়ার। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমি কোনোভাবেই আমার জন্মদাতা বাবার সঙ্গে থাকতে বা নাম-পরিচয়ে সম্পর্ক রাখতে চাই না। তবে কেন জেভিয়ারের এই সিদ্ধান্ত সে ব্যাপারে কিছুই জানাননি তিনি। এছাড়া এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি বাবা ইলন মাস্কও। উল্লেখ্য, জেভিয়ার ইলন মাস্ক ও জাস্টিন উইলসনের দ্বিতীয় সন্তান। তার মায়ের সঙ্গে ২০০৮ সালে ইলনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
তবে জেভিয়ারের এই আবেদন এবং ইলন মাস্কের নীরবতার পরিপ্রেক্ষিত এতো সহজেই তৈরি হয়নি বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে রয়টার্স উল্লেখ করেছে ২০২০ সালে ট্রান্সজেন্ডারদের লিঙ্গ-পরিচয় বেছে নেওয়ার ব্যাপারে মাস্কের বিতর্কে জড়ানোর বিষয়টি। তখন তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারবিষয়ক সবকিছুই আমি সমর্থন করি, কিন্তু তাদের এই সর্বনামটি একটি ‘নান্দনিক দুঃস্বপ্ন’।” তার ওই মন্তব্য নিয়ে তখন সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এরপর চলতি বছরের মে মাসে ইলন ‘ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকে সীমিত করার আইনের’ পক্ষে মত দিয়েছিলেন। এসব ঘটনাবলির বিশ্লেষণে রয়টার্স ধারণা করেছে, মাস্ক তার সন্তানের রূপান্তরকামিতার বিষয়ে জানতেন। এবং তিনি সেটির পক্ষে কখনো মত দেননি বা মেনে নিতে পারেননি। আর বিষয়টি তিনি মন থেকেও মুছতে পারেননি যার প্রমাণ এ বিষয়ে বারবার বিতর্কে জড়ানো।
তবে ৪৮ বছর বয়েসী ইলন মাস্কের জীবনে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নেয়ার ইলনের জীবনে সাফল্য ও বিতর্ক যেন নিত্যসঙ্গী। তার ব্যক্তিগত জীবন কোনো চলচ্চিত্রের চাইতে কম নয় কখনোই। আর বিষয়গুলো মিডিয়ায় বহুল চর্চিতও। তিন বিয়ে করেছেন ইলন। এর মধ্যে একজনকেই আবার দুই-দুইবার। খেয়ালী, প্রতিভাবান এই অতিধনীর সন্তান সাতজন। সাত সন্তানের নাম- টুইন গ্রিফিন, জেভিয়ার, ট্রিপলেট ড্যামিয়ান, সেক্সন, কাই, এক্স অ্যাশ এ টুয়েলভ, এক্সা ডার্ক সিডেরিয়েল। তবে এই সাত সন্তানের সবাই আবার ইলনের স্ত্রীদের গর্ভজাত নন।
কানাডার লেখক জাস্টিন উইলসনের সঙ্গে ২০০০ সালে বিয়ে হয়েছিল ইলন মাস্কের। এই দম্পতির একে একে ছয় পুত্রসন্তান জন্মেছিল। এদের মধ্যে একজন মারা গিয়েছিল। ২০০৪ সালে জন্ম নেয় জমজ দুই সন্তান গ্রিফিন ও জেভিয়ার। এর পরের বছর একসঙ্গে জন্ম নেয় তিন ছেলে ড্যামিয়ান, স্যাক্সন ও কাই। ২০০৭ এ ইলন-জাস্টিনের আরেক পুত্রসন্তান জন্মের পর মারা যায়। ২০০৮ সালে বিচ্ছেদ হয় ইলন ও জাস্টিনের। জাস্টিনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০১০ সালে ইলন ব্রিটিশ অভিনেত্রী তালুলা রিলিকে বিয়ে করেছিলেন। দুই বছর পর তাদের সম্পর্কের অবসান ঘটে। তবে ২০১৩ সালে তারা আবার বিয়ে করেন। এর তিন বছর পর আবারও তাদের বিচ্ছেদ হয়।
এই বিচ্ছেদের পর বিভিন্নজনের সঙ্গে নাম শোনা গেছে ইলনের। তবে তবে মিডিয়ায় বেশি আলোচিত হয় অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গে ইলনের সম্পর্ক। অভিনেতা জনি ডেপের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০১৫ সালে সম্পর্ক হয় ইলন-অ্যাম্বারের। ২০১৭ সালে বিচ্ছেদ হয় তাদের। এরপর ২০১৮ সালে কানাডীয় সংগীতশিল্পী গ্রাইমসের সঙ্গে প্রেমে জড়ান ইলন মাস্ক। ২০২০ সালে তাদের ঘরে আসে ছেলে এক্স অ্যাশ এ টুয়েলভ মাস্ক। আর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে জন্ম নেয় ইলনের একমাত্র কন্যা এক্সা ডার্ক সিডেরিয়েল মাস্ক। যার ডাকনাম ওয়াই। সব মিলিয়ে ইলন মাস্কের এখন ছয়টি পুত্র ও একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি গ্রাইমসের সঙ্গে তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক থেকে ‘সেমি-সেপারেটেড’ তথা ‘আধা বিচ্ছেদ’ হওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন ইলন। এরপর ইলনের সঙ্গে তার মায়ের বন্ধু অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী নাতাশা বাসেটের প্রেমের সম্পর্কের কথা শোনা যায়। তবে এ বিষয়ে ইলন বা নাতাশা কেউই সংবাদমাধ্যমের কাছে টু-শব্দটিও করেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।