বিশ্ববিখ্যাত উদ্ভাবক এলন মাস্কের দূরদর্শী নেতৃত্বে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা SpaceX এবং টেসলা অ্যাডভান্সড এভিয়েশন যৌথভাবে সম্প্রতি একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে— বিশ্বের প্রথম হাইপারসনিক ফাইটার জেট। এটি শব্দের গতির প্রায় ৭ গুণ, অর্থাৎ ৮,৬০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে উড়তে সক্ষম। এই প্রযুক্তি প্রচলিত যেকোনো ফাইটার জেটের তুলনায় তিন গুণ বেশি গতিসম্পন্ন।
র্যামজেট-স্ক্র্যামজেট প্রযুক্তির সাফল্য
নতুন এই হাইপারসনিক যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হয়েছে র্যামজেট-স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি, যা প্রচলিত জেট ইঞ্জিনের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও দ্রুত। এটি এমন একটি অক্সিজেন-বিহীন প্রপালশন সিস্টেম যা উচ্চ গতিতে বায়ুমণ্ডলের বাইরেও কার্যকর থাকে। ফলে বিমানটি শুধু আকাশেই নয়, মহাকাশসীমাতেও সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারে।
স্টিলথ প্রযুক্তিতে অদৃশ্যমান
এই যুদ্ধবিমানটিতে রয়েছে স্টিলথ প্রযুক্তি, যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে রাডার-শোষক পদার্থ এবং অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন। এর ফলে এটি রাডার ও ইনফ্রারেড ডিটেকশনের জন্য প্রায় অদৃশ্য থাকে, যা একে শত্রুর নজর এড়িয়ে চলাচলে সক্ষম করে তোলে।
টেসলার এআই প্রযুক্তির সংযোজন
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এতে টেসলার ফুল সেলফ-ড্রাইভিং এআই প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে, যা মানুষের তুলনায় দশ গুণ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অগ্রগতি।
বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিপ্লব
এই হাইপারসনিক জেট বিমান শুধু মাত্র একটি যুদ্ধবিমান নয়, বরং এটি বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা কৌশলে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। এর অসাধারণ গতি শত্রু পক্ষের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগই দেয় না। এটি হাইপারসনিক মিসাইল বহনেও সক্ষম এবং সাবঅরবিটাল ফ্লাইট করতে পারে, যার ফলে এটি পৃথিবীর যেকোনো স্থানে মাত্র ৯০ মিনিটে পৌঁছাতে পারে।
প্রথম সফল টেস্ট ফ্লাইট: বোকা চিকা, টেক্সাস
২০২৫ সালের জুন মাসে, টেক্সাসের বোকা চিকা স্পেসপোর্ট থেকে এই হাইপারসনিক যুদ্ধবিমানটির প্রথম সফল টেস্ট ফ্লাইট সম্পন্ন হয়। এটি এমন এক গতি দেখিয়েছে, যা অতীতে নাসার X-43 (ম্যাক ৯.৬) এর রেকর্ডকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
২০২৬ সালের মধ্যেই অপারেশনাল হবে
মার্কিন বিমানবাহিনী আশা করছে যে, এই যুদ্ধবিমানটি ২০২৬ সালের মধ্যেই অপারেশনাল হবে। এটি তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও কৌশলগত আধিপত্যকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
পেন্টাগনের স্বীকৃতি ও প্রতিক্রিয়া
পেন্টাগন এই হাইপারসনিক ফাইটার জেটকে “ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এটি আধুনিক সামরিক প্রযুক্তিতে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি নির্দেশ করে। এই সফল উড্ডয়নের ফলে রাশিয়া ও চীন তাদের নিজস্ব হাইপারসনিক প্রোগ্রামকে (যেমন আভানগার্ড ও DF-ZF) আরও জোরদার করেছে।
বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র
এই প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলো যেমন বোয়িং ও লকহিড মার্টিন ইতিমধ্যেই নিজেদের হাইপারসনিক প্রকল্পে আরও বেশি বিনিয়োগ করছে।
এলন মাস্কের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এলন মাস্ক জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আগামী দশকের মধ্যে তিনি হাইপারসনিক প্যাসেঞ্জার জেট চালু করার পরিকল্পনা করছেন, যা নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনি মাত্র ২ ঘণ্টায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে। এছাড়া, এই প্রযুক্তি মহাকাশ পর্যটনের জন্যও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
নীল সিনেমায় অভিনয় করতে হলে যে বিশেষ ধরনের দক্ষতা থাকতে হয়, জানালেন সানি
এই হাইপারসনিক ফাইটার জেট প্রযুক্তির আবিষ্কার শুধু একটি বিমান নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের যুদ্ধ, ভ্রমণ এবং প্রযুক্তির সংজ্ঞাকেই পাল্টে দিতে যাচ্ছে। এলন মাস্কের নেতৃত্বে প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রা মানব সভ্যতাকে নতুন এক হাইপারসনিক যুগে প্রবেশ করিয়েছে, যার প্রভাব আগামী কয়েক দশক ধরে টের পাওয়া যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।