আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের আগ্রায় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাসভবন ‘মুবারক মঞ্জিল’ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ মাত্র তিন মাস আগেই, গত সেপ্টেম্বরে ওই ভবনটিকে ঐতিহ্যবাহী ও সংরক্ষণযোগ্য স্থাপত্যের তালিকাভুক্ত বলে ঘোষণা করেছিল উত্তরপ্রদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কয়েক দিন আগে লখনৌ থেকে সরকারি কর্মকর্তারা গিয়ে ভবনটি ঘুরে দেখে গেছেন। আর সেই দিনই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ১৭ শতাব্দীতে তৈরি ইতিহাস বিজড়িত স্থাপত্যটি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এক নির্মাণ ব্যবসায়ী ভবনটি ‘ভাঙচুর’ করেছে এবং শতাধিক ট্রাক্টরে করে সরানো হয়েছে ধ্বংসাবশেষ।
কপিল বাজপেয়ী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ঐতিহাসিক ভবনটির প্রায় ৭০ শতাংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারপরও ধ্বংসলীলা বন্ধ হয়নি। আমরা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার কথা ভাবছি।
ব্রিটিশ পুরাতাত্ত্বিক আর্চিবল্ড ক্যাম্পবেল কার্লাইলের ১৮৭১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সমুদ্রগড়ের যুদ্ধে জয়লাভের পরে এই ভবনটি নির্মাণ করেন আওরঙ্গজেব। আবার ঐতিহাসিক রাজকিশোর রাজের মতে, ওই যুদ্ধে জিতে দারাশিকোর ভবনটিকেই ‘মুবারক মঞ্জিল’ নাম দেন আওরঙ্গজেব।
জানা যায়, একসময় এই ভবনে থেকেছেন শাহজাহান, সুজা এবং আওরঙ্গজেব। লাল বেলেপাথরে তৈরি বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে পুনর্নির্মাণ করা হয়। সেই সময় শুল্ক দফতর, লবণ দফতর হিসেবে ব্যবহার করা হয় এটিকে। এর পরে ১৯০২ সাল থেকে লোকজন বাড়িটিকে চেনে ‘তারা নিবাস’ নামে। নিচু নিচু তোরণ, মিনারে সাজানো ব্রিটিশ ও মুঘল আমলের স্থাপত্যরীতির অদ্ভুত মেলবন্ধন এই ‘মুবারক মঞ্জিল’।
বিষয়টি নজরে এসেছে উল্লেখ করে আগ্রার জেলাশাসক অরবিন্দ মাল্লাপ্পা বাঙ্গারি বলেন, এই বিষয়ে খবর পেয়েছি। ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ এবং রাজস্ব বিভাগ এ বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করেছে। এসডিএম-কে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। আপাতত, ওই ভবনে কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়া হবে না।
এদিকে, এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল। এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন,
প্রশাসনের সম্পূর্ণ মদতে আগ্রার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস বিজড়িত একটি স্থাপত্য ধ্বংস করে দেয়া হলো। ঠিক এই কারণেই ভারতে পর্যটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।