আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন এরদোগান। হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। এটি এমন একটি পরিবর্তন, যা তাকে পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ভ্লাদিমির পুতিনকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে। প্রকৃতপক্ষে তুরস্ককে রাশিয়া থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন।
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে গত সোমবার তুর্কি ও সুইডিশ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ এরদোগানের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের তথ্য জানান।
নতুন উজ্জ্বল সম্পর্কের সূচনা হিসেবে পরদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে এরদোগান বাইডেনকে বলেছেন, আমাদের আগের সব বৈঠক ছিল ওয়ার্মআপ রাউন্ডের মতো। এ মুহূর্তে আমরা একটি নতুন সম্পর্ক শুরু করছি।
ইউক্রেনে আক্রমণের জবাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। সে সময় পুতিনের পাশে দাঁড়ায় এরদোগান। সামরিক জোট ন্যাটোতে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রেও এরদোগান পশ্চিমা নেতাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এক বছর পর হঠাৎ এ অবস্থান পরিবর্তন করেন তিনি।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এরদোগান ন্যাটোতে সুইডেনকে যুক্ত হতে বাধা না দিয়ে এবার আরও বেশি লাভবান হতে চাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে চায় তুরস্ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাশ্চাত্যের সঙ্গে তিক্ততা বাড়ছিল আঙ্কারার।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের শুরু থেকেই তুরস্ক মধ্যপন্থি অবস্থান নিয়েছিল। এরদোগান এ আক্রমণের নিন্দা, রুশ সামরিক জাহাজের জন্য বেশিরভাগ তুর্কি প্রণালি বন্ধ এবং কৃষ্ণসাগরে তাদের নৌবহর শক্তিশালী করার ক্ষমতা সীমিত করেছেন। একই সময়ে তিনি মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে অস্বীকার এবং উল্টো দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক প্রসারিত করেছেন।
দেশটির কর্মকর্তারা যুক্তি দেন, এ অবস্থান তুরস্ককে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক মধ্যস্থতাকারী করে তুলেছে। এতে বন্দি বিনিময় এবং কৃষ্ণসাগরের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি নিশ্চিত করতে চুক্তিতে উপনীত হতে সহায়ক হয়েছে। এরপরও পুতিনের সঙ্গে এরদোগানের ঘন ঘন এবং দৃশ্যত বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠক পশ্চিমা নেতাদের অবাক করে দিচ্ছিল– তার প্রকৃত আনুগত্য কোথায়!
বিশ্লেষকরা বলছেন, এরদোগান সম্ভবত এটা নিয়েও চিন্তিত ছিলেন, ন্যাটো মিত্রদের ধৈর্য ক্ষীণ হতে শুরু করেছে। সুইডেনের সদস্যপদ আরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখলে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তিক্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্মান মার্শাল ফান্ডের আঙ্কারা অফিসের পরিচালক ওজগুর উনলুহিসারসিকলি বলেন, এই পদক্ষেপ এরদোগানের তুরস্ককে রাশিয়া থেকে দূরে সরিয়ে পশ্চিমের দিকে নেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে হচ্ছে। গত সপ্তাহেও তিনি ইউক্রেনের আজভ রেজিমেন্টের যোদ্ধাদের দেশে ফেরার অনুমতি দেন। তাছাড়া রুশ সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দেশটির ওয়াগনার বাহিনীর অভ্যুত্থানের ঘোষণায় পুতিনের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় এরদোগান হয়তো মনে করেছেন, পুতিনের ঝুড়িতে সব ডিম রাখা সুবিধাজনক নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।