জুমবাংলা ডেস্ক : বোররচর, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন। মাত্র দুই দশকে এ ইউনিয়নের চাষিরা আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। এ অঞ্চলের বিষমুক্ত কাঁচামরিচ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এখন তারই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কৃষকরা।
সরেজমিন বোররচরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা সবজির যত্ন, ফসল সংগ্রহ ও বিক্রিতে ব্যস্ত। হাইব্রিডসহ সব উন্নত জাতের সবজি চাষ করেন তাঁরা। গত বছর বোররচরে উৎপাদিত লাউ ও কাঁচামরিচ ইউরোপে রপ্তানি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কাঁচামরিচ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে তাঁরা রপ্তানির জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে প্রত্যয়ন নিয়েছেন।
উপজেলার কুষ্টিয়াপাড়ার বাসিন্দা জমির উদ্দিন জনির মাধ্যমেই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ সংগ্রহ করে। তিনি নিজেও ২৫ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। জমির উদ্দিন জানান, ইউরোপে বিষমুক্ত মরিচের চাহিদা অনেক। বাছাইকৃত কাঁচামরিচ গত বছর ঢাকায় প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে পাঠানো হয়। এবার ফসলের মাঠে নিজেরাই প্যাকেটজাত করবেন।
বোররচরের চর রাঘবপুর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান ৫৫ শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে বিষমুক্ত মরিচ চাষ করেছেন। সঙ্গে ১১০ শতক জমিতে টমেটো। তাঁর মতো বোররচরের ডিগ্রিপাড়া, বৈঠামারি, বাঘেরকান্দা, মৃধাপাড়া, রাঘবপুর, বাড়তিপাড়া, ভাটিপাড়া, মধুমারিসহ অন্তত ১৯ গ্রামের সাড়ে চার হাজার কৃষক মরিচসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। তাঁদের উৎপাদিত মরিচ এএইচবি করপোরেশন ও ভূঁইয়া করপোরেশন নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ইতালি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেনসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি করছে।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রধান সংগ্রাহক শওকত হোসাইন জানান, গত বছর বোররচর থেকে কাঁচা মরিচ ও লাউ রপ্তানি করা হয়। এ বছর লাউ থাকছে না। মানসম্মত কাঁচামরিচ চাষ ও বাছাইয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এবার ২০০ টন মরিচ রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে বোররচর। এটি জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ- এ তিন জেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন। এক সময় ব্র??হ্মপুত্র নদের ভাঙনে জনপদের মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। কিন্তু ভাঙন রোধে ২০০৩ সালে বেড়িবাঁধ হওয়ার পর থেকে বদলাতে থাকে ভাগ্য। শুরুতে সরিষা, গম, কালাই ও কিছু বাদামজাতীয় ফসল হলেও, এখন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে টমেটো চাষ।
কৃষি বিভাগ বলছে, সদর উপজেলায় মোট ৪ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বোররচর ইউনিয়নের গ্রামগুলোর আবাদি জমি ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর। বোররচরে শুধু টমেটোর আবাদ হয়েছে ৭০০ হেক্টর জমিতে। আর কাঁচামরিচ ২৫০ হেক্টর জমিতে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, মূলত চাষিরা রিলে ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। একই জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুনের পাশাপাশি মরিচ কিংবা অন্য সবজি চাষকে রিলে ফসল বলেন স্থানীয়রা।
বোররচর পূর্ব কাছারি বাজারের ব্যবসায়ী ও সফল কৃষক আবুল কালাম জানান, পশ্চিম কাছারি বাজার, পূর্ব কাছারি বাজার, গুচ্ছগ্রাম বাজার ও মিলিনিয়াম বাজার থেকে প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাহমিনা ইয়াসমিন জানান, গতবারের মতো এবারও কাঁচামরিচ রপ্তানির জন্য কৃষকরা প্রত্যয়ন নিয়েছেন। কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ ও তদারকিতে এলাকাটি বিষমুক্ত সবজি আবাদে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে অন্যান্য সবজিও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।