আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশি সহ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়ান অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপে পছন্দের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে ইতালি, জার্মানি, গ্রিস, সাইপ্রাস, অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্স। ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবছর কয়েক হাজার বাংলাদেশি অবৈধ পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন।গবেষণায় উঠে এসেছে, ৫৮ শতাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে প্রভাবিত হয়েছেন। ৯২ শতাংশ অবিবাহিত হওয়ায় তাদের মধ্যে ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া ৬২ শতাংশ পরিবারের প্রবাসী সদস্যের চাপে এ পথ বেছে নেন। বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছেন, ২০২৪ সালেও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইউরোপে পৌঁছাতে বিপজ্জনক এবং কখনও কখনও ভয়ঙ্কর যাত্রায় অংশ নিতে পারেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের শরণার্থী ও নির্বাসন সম্পর্কিত পরিচালক ক্যাথরিন উলার্ড ডিডাব্লিউকে বলেছিলেন, রেকর্ডসংখ্যক মানুষ গোটা বিশ্বে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের একটি ছোট অংশ ইউরোপে সুরক্ষা চাইবেন।
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘‘সম্ভবত এ বছরও কমপক্ষে দশ লাখ মানুষ (ইউরোপে) সুরক্ষা চাইবেন। সত্য হলো, এসব মানুষের বেশিরভাগেরই সুরক্ষা প্রয়োজন।’’
ইউরোপীয় কাউন্সিলের মতে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪২ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে অস্থায়ী সুরক্ষা পেয়েছেন। ২০২২ সালে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ১০ লাখের একটু কম ছিল। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয় বিষয়ক সংস্থা বলছে, ২০১৫ সালের পর আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা এবার সর্বোচ্চ হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে ২০১৫ সালে বিপুলসংখ্যক মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের জন্য এসেছিলেন। ইইউ সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ অনিয়মিত পথে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এসেছেন।বার্লিনে জার্মানির ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সে জার্মান এবং ইউরোপিয়ান অভিবাসন নিয়ে কর্মরত গবেষক ডেভিড কিপ বলেছিলেন, ‘‘এই প্রবণতা কমার আপাতত কোনো লক্ষণ নেই’’, কারণ, বিশ্বজুড়ে সংকট বেড়ে চলেছে। গেল ডিসেম্বরের মাঝামাঝি, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র ইইউ অভিবাসন এবং আশ্রয় নীতির সংস্কারের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এটি কার্যকর করতে অবশ্য ইইউ পার্লামেন্টের অনুমোদন লাগবে।
কিপ আশা করছেন, আশ্রয় বিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর উপর বোঝা কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে নতুন নীতিতে। এর আওতায় সদস্য রাষ্ট্রগুলো অভিবাসীদের দায়িত্ব সমানভাবে গ্রহণ করবে। যদি কেউ আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে রাখতে না চায়, তাহলে সেই দেশটিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ১২টি অবৈধ পথে ইউরোপে যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এসব অবৈধ পথের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা থেকে আকাশপথে দোহা-মিসর হয়ে লিবিয়া এবং পরে সাগরপথে মূল গন্তব্য ইতালি। ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশী এই পথ ব্যবহার করেন।
অনিয়মিত অভিবাসীদের ওপর করা এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপে পছন্দের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে ইতালি, জার্মানি, গ্রিস, সাইপ্রাস, অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্স। ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবছর কয়েক হাজার বাংলাদেশি অবৈধ পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন। অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ২২ শতাংশের মতে, ইউরোপে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। ৩৩ শতাংশ বলেন, শিক্ষা অনুযায়ী প্রত্যাশিত চাকরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় তাঁরা ঝুঁকি জেনেও অবৈধ পথে ইউরোপমুখী হয়েছেন। এ ছাড়া দেশে কর্মসংস্থানের কম সুযোগ, চাকরিতে স্বল্প বেতন, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অসন্তুষ্টি তাদের অনিয়মিত অভিবাসী হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে।
এ দিকে এথেন্স-ঢাকা সমঝোতা স্মারক চুক্তির আওতায় গত বছর গ্রিসে বৈধতা পেয়েছেন তিন হাজার ৪০৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক। ইউরোপীয় ইউনিয়নে গত বছর আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো অভিবাসন। নতুন বছরেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইইউ সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ অনিয়মিত পথে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এসেছেন।
লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৬২ হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গেছেন। ইউরোপীয় কমিশন বলছে, অনিয়মিত অভিবাসন ২৭টি দেশের মোট অভিবাসীর বিপরীতে খুবই ছোট সংখ্যা। কমিশনের হিসাবে, ২০২২ সালে শরণার্থী মর্যাদা নিয়ে, অথবা চাকরি নিয়ে, কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়নে এসেছেন। বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা সংস্কার প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন। ক্যাথরিন উলার্ডও আশঙ্কা করছেন, এর মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার আরো খর্ব হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘‘একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, সংস্কার চুক্তিটি কিছু মৌলিক সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উপর বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, এ কারণে সীমান্তে আরো বেশি পুশব্যাক এবং অভিবাসীদের সীমান্তে ঢুকতে না দেয়ার মতো ঘটনাগুলো বাড়বে।’’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।