জুমবাংলা ডেস্ক : ইউরোপ ও আফ্রিকা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হিমায়িত সাদা মাছ আমদানি করে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে ইউরোপ ও রাশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানির অনুমোদন চেয়েছে এপেক্স ফুড লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রস্তাবকে অনুমোদন দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে আগামীকাল বুধবার সকালে রাজধানীর মৎস্য ভবনে সভা ডেকেছে মৎস্য অধিদপ্তর।
তবে ইউরোপ থেকে মাছ আমদানি করে পুনরায় ইউরোপে রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে মৎস্য গবেষকসহ দেশীয় মৎস্য চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি এটি দেশের মৎস্য খাতকে ঝুঁকিতে ফেলা ও ধ্বংস করার একটি পাঁয়তারা বলেও উল্লেখ করছেন তারা। এর আগে ২০২১ সালে মার্চে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে সামুদ্রিক মাছ আমদানি নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২৫ মে ২০২১ সালের সেই নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়- ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে সামুদ্রিক মাছ আমদানির ফলে মানবদেহের ভয়ংকর ক্ষতির দিক বিবেচনায় নিয়ে, দেশের প্রান্তিক মাছ চাষীদের উৎপাদন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে, ট্রলার শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে সামুদ্রিক মাছ আমদানি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানানো হলো।
এদিকে আফ্রিকার মতো দেশ থেকে মাছ আমদানি করে সেটি আবার রপ্তানি করার নেপথ্যে সরকারের রপ্তানি প্রণোদনা হাতিয়ে নেওয়ার কোন বিষয় জড়িত কিনা তাও খতিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, আফ্রিকা ও ইউরোপ থেকে হিমায়িত সাদা মাছ আমদানির অনুমতি দেওয়া হলে এটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ হিমায়িত এসব মাছ আমদানির অনুমতি দিলে দেশের মৎস্য খামারিরা দেশীয় মাছ উৎপাদন বাদ দিয়ে আমদানির দিকে মনোযোগী হয়ে উঠবে। যা দেশীয় মৎস্য সেক্টরের জন্য বড় হুমকি স্বরুপ হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের যে মৎস্য সম্ভাবনা আছে তা আমরা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। সেটি বাদ দিয়ে আমদানির দিকে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাছাড়া ইউরোপ থেকে মাছ আমদানি করে প্রসেসিংয়ের পর সেটি আবার ইউরোপে রপ্তানির চিন্তাও একটি বড় প্রশ্নের বিষয়। তারা নিজেদের মাছ আমাদের দেশের রপ্তানি করে কেন আবার নিজেদের দেশেই আমদানি করবে! এর সাথে সরকারের রপ্তানি প্রণোদনা যে দীর্ঘ সুচিন্তা রয়েছে সেটিকে অসৎভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তাও সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখতে হবে।
স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ এনে ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, যেসব সাদা প্রজাতির মাছ আমদানির কথা চিন্তা করা হচ্ছে সে সব মাছ ওইসব দেশে যথাযথভাবে প্রক্রিয়া মেনে উৎপাদন হয় কিনা সেটিও চিন্তার বিষয়। কারণ গার্মেন্টস পণ্য যেমন রপ্তানি না হলে সেটি দেশের বাজারে বিক্রির প্রবণতা চলমান আছে, সেরকম আমদানিকৃত এসব মাছ রপ্তানি করা না গেলে দেশের বাজারে বিক্রি হতে পারে। এতে মানুষের স্বাস্থ্য ঝ্্ুঁকিও থেকে যায়।
এদিকে আমদানির অনুমতি চাওয়া এপেক্স ফুড লিমিটেড চিৎড়ি প্রসেসিং প্রতিষ্ঠান। অন্য আমদানিকৃত মাছ প্রসেসিং করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. শাহজাদা খসরু বলেন, প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকা ও ইউরোপ থেকে হিমায়িত সাদা প্রজাতির মাছ আমদানির অনুমতি চেয়েছে। সে বিষয়ে বুধবার ঢাকায় বৈঠক ডাকা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়েই তাদের অনুমোদন দেওয়া হবে কি হবে না তার সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমার জানা মতে এপেক্স ফুড লিমিটেডেট চিংড়ি প্রসেসিং লাইন রয়েছে। অন্য মাছ প্রসেসিংয়ের লাইন তাদের নেই। তারা ওইসকল মাছ প্রসেসিংয়ের লাইন যথাযথ গাইডলাইন মেনে তৈরি করতে না পারলে স্বাভাবিকভাবে অনুমতি পাবে না। সব বিষয় আসলে মিটিংয়ে আলোচনা হবে। সূত্র : দৈনিক পূর্বকোণ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।