বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে কিভাবে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে বিজ্ঞাপনকে ‘টার্গেট’ করে তা দেখতে মেটা প্ল্যাটফর্মকে অবশ্যই আইনি ভিত্তির পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
ইইউর প্রধান গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রক বুধবার (৪ জানুয়ারি) এ কথা জানিয়েছে। গোপনীয়তা সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করার জন্য এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ৩৯০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছে।
মেটা বলেছে, তারা এই নিয়ম এবং আরোপিত জরিমানা দুটি নিয়েই আপিল করতে চায়। তারা জোর দিয়ে বলেছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে তারা নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ‘পার্সোনালাইজড’ বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করবে না।
ইইউ এর গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রক ও নজরদারি বিভাগ ‘পার্সোনালাইজড’ বিজ্ঞাপনের উপর আদেশটি ডিসেম্বরে জারি করেছিল। রয়টার্স দেখেছে, একটি সিদ্ধান্ত অনুসারে মেটার জন্য ইইউর প্রধান গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রক আয়ারল্যান্ডের ডেটা প্রাইভেসি কমিশনার (ডিপিসি) এর একটি খসড়া রায়কে বাতিল করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকরা ‘টার্গেডেট’ বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহের ন্যায্যতা পেতে মেটা যে আইনি ভিত্তি ব্যবহার করেছিল তা বাতিল করে দিয়েছে।
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মেটা ‘হাইলি টার্গেটেড’ বিজ্ঞাপনগুলি থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করে। ব্যবহারকারীদের আচরণকে অন্তরঙ্গভাবে লক্ষ্য করার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে৷
এনজিও অ্যাক্সেস নাও-এর এস্টেল ম্যাসে এএফপিকে বলেছেন, “মেটা এবং এর বিনিয়োগকারীদের প্রস্তুত থাকা উচিত। গোপনীয়তা ভঙ্গ করে টার্গেটেড-বিজ্ঞাপন ব্যবসার মডেল ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে শেষ হচ্ছে।”
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের ড্যান আইভস বলেছেন, ”গোপনীয়তা-বান্ধব সমাধানগুলি দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে অন্যথায় তাদের আয় হ্রাস পেতে পারে। এটি মেটার জন্য একটি বড়সড় আঘাত হতে পারে।”
এই পদক্ষেপটি মেটার বিজ্ঞাপনের আয় থেকে পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যে কমিয়ে দিতে পারে।
মেটারএই জরিমানা আইরিশ ডেটা সুরক্ষা কমিশন (ডিপিসি) দ্বারা আরোপ করা হয়েছে কারণ অন্যান্য মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলি-সহ মেটার ইউরোপীয় সদর দপ্তর ডাবলিনে অবস্থিত৷ কিন্তু ইইউ জুড়ে নিয়ন্ত্রকদের দ্বারা এই রায় দেওয়া হয়েছে।
তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যবহারকারীদের সঙ্গে চুক্তির একটি প্রয়োজনীয় অংশ হিসাবে বিজ্ঞাপনকে শ্রেণীবদ্ধ করতে মেটার প্রচেষ্টা অবৈধ ছিল।
ইইউর নতুন গোপনীয়তা আইন আসার পরে ২০১৮ সালে মেটা বেশিরভাগ কাজের জন্য তথাকথিত “চুক্তি” আইনভিত্তিক করতে চেয়েছিল।
ব্যবহারকারীদের এই তথ্য দিয়েই সাধারণত বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। কিন্তু এটিকে গোপনীয়তার বড়সড় লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে আয়ারল্যান্ড। বুধবার তাই ফেসবুকের পেরেন্ট কোম্পানি মেটাকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার নীতি পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটিকে তিন মাস সময়সীমা দিয়েছে ডিপিসি।
মেটার যুক্তি, তারা ইইউর গোপনীয়তা আইনকে সম্মান করে। তাদের দাবি, এটি বিভিন্ন আইনি ভিত্তির জন্য অনুমতি দেয় যার ফলে ডেটা প্রসেস করা যেতে পারে এবং তার জন্য সম্মতির বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়।
তারা বিবৃতিতে বলেছে, ”আমরা ব্যবহারকারী এবং ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে চাই, তারা মেটার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইইউ জুড়ে পার্সোনালাইজড অর্থাৎ ব্যক্তিগতকৃত বিজ্ঞাপন থেকে উপকার পেতে পারেন।”
এই জরিমানার ফলে আইরিশ নিয়ন্ত্রক দ্বারা মেটার বিরুদ্ধে আরোপিত মোট জরিমানা দাঁড়াল ১.৩ বিলিয়ন ইউরো। বর্তমানে মেটা পরিষেবানিয়ে ১১টি অনুসন্ধান (ওপেন এনকোয়ারি) চালাচ্ছে তারা৷
ডিপিসি একটি নতুন তদন্ত পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে যা ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের সমস্ত ডেটা প্রসেসের কাজকে বিস্তারিতভাবে জানাবে। গত বছরের নভেম্বরেও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে ফাঁস হওয়ায় মেটাকে বিপুল অংকের জরিমানা করে ডিপিসি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।