সাইফুল ইসলাম : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের খালিসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অনিয়মের পরও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলেও এখনো তিনি আগের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শামীমা নাসরিন নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও হাজিরা খাতায় নিজের স্বাক্ষর দিতেন। এমনকি সরকারি ছুটির দিনেও তাঁর স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের মূল ফটকের চাবি ও হাজিরা খাতা সবসময় তাঁর কাছেই থাকত, ফলে নিজের সুবিধামতো সময়ে এসে উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে চলে যেতেন।
১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০৩ এবং শিক্ষক আছেন পাঁচজন। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষক শামীমা নাসরিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তিনি নিজের ইচ্ছামতো বিদ্যালয়ের সব কাজ পরিচালনা করেন এবং অন্যদের মতামতকে প্রায়ই উপেক্ষা করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবের জোরেই তিনি এতদিন ধরেই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর স্বামী জসিম উদ্দিন শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান, আর বাবা আব্দুল মালেক শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তাঁদের প্রভাবের কারণে কেউই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।
গত ১২ জুলাই “স্কুলে না গিয়েও উপস্থিত প্রধান শিক্ষক!” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কুদ্দুস হাওলাদার ও মুহাম্মদ আমিনুর রহমানকে নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে সব অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হয়।
তদন্ত চলাকালীন সময়ে প্রমাণ নষ্টের চেষ্টাও করেন শামীমা নাসরিন। হাজিরা খাতার একটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলার পর অন্য শিক্ষকদের দিয়ে নতুন করে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার প্রমাণও তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সায়েদুর রহমান বলেন, “তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। শাস্তির সুপারিশসহ প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে।”
কিন্তু প্রায় দুই মাস পার হলেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিও) গোকুল চন্দ্র দেবনাথ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেননি। তিনি বলেন, “কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির তদবির থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।” তবে কারা সেই ‘প্রভাবশালী ব্যক্তি’, তা প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত শেষে শামীমা নাসরিনকে একাধিকবার দীর্ঘ ছুটি মঞ্জুর করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সায়েদুর রহমান। ফলে তদন্ত চলাকালীন ও পরবর্তী সময়েও তিনি বিদ্যালয়ে না গিয়েও দায়িত্বে বহাল ছিলেন। শিক্ষক সমাজের অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে ছুটি অনুমোদন করে বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করেছেন শিক্ষা অফিসার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ডিপিও গোকুল চন্দ্র দেবনাথ ও এটিও সায়েদুর রহমান দুজনই আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন। টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় শিক্ষকরা বলছেন, “তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া প্রশাসনের গাফিলতি নয়, এটি দুর্নীতির প্রকাশ। শিক্ষা অফিসে টাকা দিলে অপরাধ ঢেকে দেওয়া সম্ভব—এমন নজির তৈরি হয়েছে।”
অভিভাবকদের বক্তব্য, “যদি একজন শিক্ষক অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা জাল করতে পারেন, আর শিক্ষা কর্মকর্তারা জানার পরও ব্যবস্থা না নেন, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা কোথায় থাকবে?”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবালয় উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শিক্ষা অফিসের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।